সম্পাদকীয়
মাহে রামাযানের তুহফা অন-লাইলে আরাফাত
অধ্যাপক ডক্টর মুহাম্মাদ রঈসুদ্দীন
সমগ্র বিশ্ব কাঁপছে করোনা মহামারিতে। এ মুহূর্তে আমরা যেনো এক অচেনা পৃথিবীতে বসবাস করছি। অন্যায়-অবিচার, যুল্ম-নির্যাতন, অশ্লীলতা-বেহায়াপনা সবকিছুতেই ভাটা পড়েছে। এ যেনো পাপ-পঙ্কিলতামুক্ত অন্য এক পৃথিবী। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বানী আদমকে সতর্ক করার জন্যই এ রকম বালা-মুসিবত প্রেরণ করেন। যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন- “তোমাদের উপর যে বিপদই উপনিত হয়, তা তোমাদের হাতের উপার্জনের কারণেই, তিনি অনেক অপরাধই ক্ষমা করে দেন।”[১]
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন : “মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে-স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, যাতে তিনি তাদের কোনো কোনো কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা অসৎ পথ থেকে ফিরে আসে।”[২]
আর করোনা মহামারির ব্যাপ্তি ও বিস্তৃতি হয়তো আমাদেরকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, যুল্ম-নির্যাতন, অশ্লীলতা আর সীমাহীন পাপাচারে এ পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেছে, এখনই ইস্তিগফার পাঠ করে প্রত্যাবর্তন করার সময়, সুতরাং দেরি কেনো? তবে বুদ্ধিমান তারাই যারা শিক্ষা গ্রহণ করে।
সীমাহীন দুর্ভোগ ও আতঙ্কের মাঝে এলো এবারের মাহে রামাযান, যা কি-না রামাযানের প্রথম দিকে মাসজিদগুলো ছিল প্রায় মুসল্লীশূণ্য। বিষয়টি অত্যান্ত পরিতাপের। আমাদের জীবনে এ ধরনের পরিস্থিতি আমরা কখনো দেখিনি। এটাও হয়তো মহান প্রভুর পক্ষ থেকে বিশেষ Opportunity যেনো মানুষ আত্মসংশোধনী গ্রহণ ও প্রত্যাবর্তন করে একটি শাস্তিকামী পৃথিবী ও কল্যাণকামী পরকালের প্রত্যাশায়। আসুন, এ রমাযানে আমরা নিজেদেরকে বদলে ফেলার প্রতিজ্ঞা করি।
সারা দুনিয়ার মানুষ এখন করোনা অতঙ্কে সঙ্ঘনিরোধ জীবন-যাপন করছেন। এই ঘরবন্দি মানুষদেরকে আমরা আজ একটি সুসংবাদ দিচ্ছি যে, ৬১ বছরে পদার্পণ করে সাপ্তাহিক আরাফাত অন-লাইনে প্রকাশিত হলো। পাশাপাশি গুগল প্লে থেকে ‘আরাফাত মোবাইল অ্যাপ’ ডাউনলোড করে এই ঐহিত্যবাহী সাময়িকীটিকে মুঠোবন্দি করার সুযোগ তো থাকছেই। বড্ড দেরিতে হলেও এবারের রমাযানে বাঙালি মুসলিমদের জন্য এটাই আমাদের তুহফা। এ জন্য সর্বাগ্রে ধন্যবাদ জানাই কেন্দ্রীয় শুব্বান সভাপতি জনাব মো. রেজাউল ইসলামকে। কেননা এ ব্যাপারে তাঁর প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ অনস্বীকার্য।
তবে অন-লাইনে আরাফাত প্রকাশের সন্ধিক্ষণে এই সাময়িকীটি সূচনা ও প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে যেটুকু না বললেই নয়, তা হলো-
৭ অক্টোবর ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার প্রথম বর্ষের প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সম্পাদক ‘আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহিল কাফী আল কুরায়শী (রাহিমাহুল্লা-হ)। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ৬১ বছরব্যাপী নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রকাশিত এ দেশের ঐতিহ্যবাহী সাময়িকী সাপ্তাহিক আরাফাত।
সাপ্তাহিক আরাফত-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ‘আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহিল কাফী আল কুরায়শী’ মাত্র ২১ বছর বয়সে উর্দু ‘দৈনিক জামানা’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তারপর ১৯২৪ সালে নিজ সম্পাদনায় প্রকাশ করেন সাপ্তাহিক ‘সত্যাগ্রহী’ এবং ১৯৪৯ সালে মাসিক ‘তর্জুমানুল হাদীস’। উল্লিখিত চারটি পত্রিকা তিনি অত্যন্ত সাফল্যের সাথে সম্পাদনা করে সাংবাদিকতার ইতিহাসে বিশেষ করে মুসলিম সংবাদ সেবকদের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে বিশেষ স্থান দখল করে আছেন।
আরাফাত সম্পাদক আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহিল কাফী আল কুরায়শী ১৯৬০ সালে প্রবন্ধ-গবেষণায় প্রথম বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। সাপ্তাহিক আরাফাত প্রকাশের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্বন্ধে পত্রিকাটির সূচনা সংখ্যার সম্পাদকীয়তে তিনি লিখেছেন : “যাহারা আদর্শবঞ্চিত সাংবাদিকতার পক্ষপাতী তাহারা আমার এই প্রয়াসকে নিরর্থক বিবেচনা করিবেন। আমরা কিন্তু তাহাদের আদর্শহীন সাংবাদিকতা শুধু অনর্থক নয় অন্যায় বলিয়াও বিশ্বাস করিয়া থাকি। অর্থ ও ক্ষমতার প্রস্তাবাধীন সংবাদপত্রের নীতিভ্রষ্টতাকে আমরা সাংবাদিকতার পক্ষে কলঙ্ক এবং সাংবাদিক দুর্নীতি বলিয়া জানি... ধর্ম ও ফির্কা বিশেষের আদর্শ নয় আমাদের আদর্শ হইবে কুরআন ও সুন্নাহর আদর্শ।”
‘আরাফাত’ নামকরণের স্বার্থকতা সম্বন্ধে তিনি আরো লেখেন, “জাবালে আরাফাতের উপত্যকায় পৃথিবীর সমুদয় মুসলমান যে আদর্শের বলে সকল বিভেদ ও নবৈষম্য জলাঞ্জলী দিয়া একই জাতীয়তার আদর্শে মহীয়ান হইয়া উঠেন ‘সাপ্তাহিক আরাফাত’ সেই আদর্শেই পাকিস্তানের (বাঙালী) জনগণকে অনুপ্রাণিত ও মহিমান্বিত করিতে চায়।”
আরাফাত সম্পর্কে বিশিষ্ট লেখক আবুল কাশেম মুহাম্মদ আদমউদ্দীন লিখেছেন : “সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার মান হিসাবে ‘আরাফাত’কে বিনাদ্বিধায় অবিসংবাদিতভাবে প্রথম শ্রেণীর সাপ্তাহিক পত্রিকার অন্তর্ভুক্ত করা যায়। আর এই শ্রেণির যে কোন সাপ্তাহিক পত্রিকা হইতে আরাফাতে’র মান উন্নততর এ কথা জোর গলায় বলা যায়।”
প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে অদ্যবধি এ সাময়িকীটি শির্ক ও বিদ‘আতের বিপক্ষে মসি সংগ্রামে সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে। ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনের লালন ও মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে ধর্ম-দর্শন, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ইত্যাদি বিষয়ে পাঠকদের জ্ঞানের খোরাক জুগিয়ে যাচ্ছে। মুসলিম সংহতির আহ্বায়ক শ্লোগান বুকে ধারণ করে পত্রিকাটি বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের মুখপত্র হিসেবে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আশা করছি ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে -ইন্শা-আল্লাহ। ###
অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন : “মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে-স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, যাতে তিনি তাদের কোনো কোনো কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা অসৎ পথ থেকে ফিরে আসে।”[২]
আর করোনা মহামারির ব্যাপ্তি ও বিস্তৃতি হয়তো আমাদেরকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যে, যুল্ম-নির্যাতন, অশ্লীলতা আর সীমাহীন পাপাচারে এ পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেছে, এখনই ইস্তিগফার পাঠ করে প্রত্যাবর্তন করার সময়, সুতরাং দেরি কেনো? তবে বুদ্ধিমান তারাই যারা শিক্ষা গ্রহণ করে।
সীমাহীন দুর্ভোগ ও আতঙ্কের মাঝে এলো এবারের মাহে রামাযান, যা কি-না রামাযানের প্রথম দিকে মাসজিদগুলো ছিল প্রায় মুসল্লীশূণ্য। বিষয়টি অত্যান্ত পরিতাপের। আমাদের জীবনে এ ধরনের পরিস্থিতি আমরা কখনো দেখিনি। এটাও হয়তো মহান প্রভুর পক্ষ থেকে বিশেষ Opportunity যেনো মানুষ আত্মসংশোধনী গ্রহণ ও প্রত্যাবর্তন করে একটি শাস্তিকামী পৃথিবী ও কল্যাণকামী পরকালের প্রত্যাশায়। আসুন, এ রমাযানে আমরা নিজেদেরকে বদলে ফেলার প্রতিজ্ঞা করি।
সারা দুনিয়ার মানুষ এখন করোনা অতঙ্কে সঙ্ঘনিরোধ জীবন-যাপন করছেন। এই ঘরবন্দি মানুষদেরকে আমরা আজ একটি সুসংবাদ দিচ্ছি যে, ৬১ বছরে পদার্পণ করে সাপ্তাহিক আরাফাত অন-লাইনে প্রকাশিত হলো। পাশাপাশি গুগল প্লে থেকে ‘আরাফাত মোবাইল অ্যাপ’ ডাউনলোড করে এই ঐহিত্যবাহী সাময়িকীটিকে মুঠোবন্দি করার সুযোগ তো থাকছেই। বড্ড দেরিতে হলেও এবারের রমাযানে বাঙালি মুসলিমদের জন্য এটাই আমাদের তুহফা। এ জন্য সর্বাগ্রে ধন্যবাদ জানাই কেন্দ্রীয় শুব্বান সভাপতি জনাব মো. রেজাউল ইসলামকে। কেননা এ ব্যাপারে তাঁর প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ অনস্বীকার্য।
তবে অন-লাইনে আরাফাত প্রকাশের সন্ধিক্ষণে এই সাময়িকীটি সূচনা ও প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে যেটুকু না বললেই নয়, তা হলো-
৭ অক্টোবর ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ, সোমবার প্রথম বর্ষের প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম সম্পাদক ‘আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহিল কাফী আল কুরায়শী (রাহিমাহুল্লা-হ)। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ৬১ বছরব্যাপী নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রকাশিত এ দেশের ঐতিহ্যবাহী সাময়িকী সাপ্তাহিক আরাফাত।
সাপ্তাহিক আরাফত-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক ‘আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহিল কাফী আল কুরায়শী’ মাত্র ২১ বছর বয়সে উর্দু ‘দৈনিক জামানা’ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তারপর ১৯২৪ সালে নিজ সম্পাদনায় প্রকাশ করেন সাপ্তাহিক ‘সত্যাগ্রহী’ এবং ১৯৪৯ সালে মাসিক ‘তর্জুমানুল হাদীস’। উল্লিখিত চারটি পত্রিকা তিনি অত্যন্ত সাফল্যের সাথে সম্পাদনা করে সাংবাদিকতার ইতিহাসে বিশেষ করে মুসলিম সংবাদ সেবকদের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে বিশেষ স্থান দখল করে আছেন।
আরাফাত সম্পাদক আল্লামা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহিল কাফী আল কুরায়শী ১৯৬০ সালে প্রবন্ধ-গবেষণায় প্রথম বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। সাপ্তাহিক আরাফাত প্রকাশের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্বন্ধে পত্রিকাটির সূচনা সংখ্যার সম্পাদকীয়তে তিনি লিখেছেন : “যাহারা আদর্শবঞ্চিত সাংবাদিকতার পক্ষপাতী তাহারা আমার এই প্রয়াসকে নিরর্থক বিবেচনা করিবেন। আমরা কিন্তু তাহাদের আদর্শহীন সাংবাদিকতা শুধু অনর্থক নয় অন্যায় বলিয়াও বিশ্বাস করিয়া থাকি। অর্থ ও ক্ষমতার প্রস্তাবাধীন সংবাদপত্রের নীতিভ্রষ্টতাকে আমরা সাংবাদিকতার পক্ষে কলঙ্ক এবং সাংবাদিক দুর্নীতি বলিয়া জানি... ধর্ম ও ফির্কা বিশেষের আদর্শ নয় আমাদের আদর্শ হইবে কুরআন ও সুন্নাহর আদর্শ।”
‘আরাফাত’ নামকরণের স্বার্থকতা সম্বন্ধে তিনি আরো লেখেন, “জাবালে আরাফাতের উপত্যকায় পৃথিবীর সমুদয় মুসলমান যে আদর্শের বলে সকল বিভেদ ও নবৈষম্য জলাঞ্জলী দিয়া একই জাতীয়তার আদর্শে মহীয়ান হইয়া উঠেন ‘সাপ্তাহিক আরাফাত’ সেই আদর্শেই পাকিস্তানের (বাঙালী) জনগণকে অনুপ্রাণিত ও মহিমান্বিত করিতে চায়।”
আরাফাত সম্পর্কে বিশিষ্ট লেখক আবুল কাশেম মুহাম্মদ আদমউদ্দীন লিখেছেন : “সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার মান হিসাবে ‘আরাফাত’কে বিনাদ্বিধায় অবিসংবাদিতভাবে প্রথম শ্রেণীর সাপ্তাহিক পত্রিকার অন্তর্ভুক্ত করা যায়। আর এই শ্রেণির যে কোন সাপ্তাহিক পত্রিকা হইতে আরাফাতে’র মান উন্নততর এ কথা জোর গলায় বলা যায়।”
প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে অদ্যবধি এ সাময়িকীটি শির্ক ও বিদ‘আতের বিপক্ষে মসি সংগ্রামে সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে। ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুনের লালন ও মধ্যমপন্থা অবলম্বন করে ধর্ম-দর্শন, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ইত্যাদি বিষয়ে পাঠকদের জ্ঞানের খোরাক জুগিয়ে যাচ্ছে। মুসলিম সংহতির আহ্বায়ক শ্লোগান বুকে ধারণ করে পত্রিকাটি বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের মুখপত্র হিসেবে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আশা করছি ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে -ইন্শা-আল্লাহ। ###
[১] সূরা আশ্ শূরা- ৩০।
[২] সূরা রূম- ৪১।
ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45
সূর্যাস্ত : 5:11:51
আপনার মন্তব্য1