সাময়িক প্রসঙ্গ
ইসলাম কি ছোঁয়াচে রোগকে অস্বীকার করে?
আরাফাত ডেস্ক
ইসলামে কি ছোঁয়াচে রোগকে অস্বীকার করা হয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাব হলো, ইসলামে ছোঁয়াচে রোগকে অস্বীকার করা হয়নি। এ সম্পর্কে নিম্নের হাদীসটি প্রণিধানযোগ্য।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) হতে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন :
لَا عَدْوَى وَلَا طِيَرَةَ وَلَا هَامَةَ وَلَا صَفَرَ.
রোগ সংক্রমণ, কুলক্ষণ, পেঁচা এবং সফর মাস বলতে কিছু নেই।[১]
মুহাদ্দিসগণ বলেন, উক্ত হাদীসে পেঁচা ও সফর মাসের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়নি; বরং জাহেলী যুগে পেঁচার ডাক এবং সফর মাসকে কুলক্ষণে মনে করা হত (বর্তমান যুগেও মূর্খ লোকদের মাঝে এ কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে) এই বাতিল ও ভ্রান্ত বিশ্বাসকে অস্বীকার করা হয়েছে। অনুরূপভাবে সংক্রমণ রোগের অস্তিত্বকেও অস্বীকার করা হয়নি; বরং একটি ভ্রান্ত বিশ্বাসের অনোদন করা হয়েছে। আর তা হলো, জাহেলী যুগে কোনো কোনো ব্যাধিকে এমন মনে করা হত যে, তা নিজে নিজেই সংক্রমিত হয়। কিন্তু ইসলামের সৃষ্টিভঙ্গী হলো, রোগ কখনও নিজে নিজে সংক্রমিত হতে পারে না; বরং তা আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছার সাথে সংম্পৃক্ত। তার লিখিত তাকদীর ছাড়া কোন কিছুই সংঘটিত হয় না। উক্ত হাদীসের এই ব্যাখ্যাটি নিন্মোক্ত হাদীস থেকে স্পষ্ট হয়-
عَبْدُ الْعَزِيْزِ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيْمُ بْنُ سَعْدٍ عَنْ صَالِحٍ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ قَالَ أَخْبَرَنِيْ أَبُوْ سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ وَغَيْرُه، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ لَا عَدْوى وَلَا صَفَرَ وَلَا هَامَةَ فَقَالَ أَعْرَابِيٌّ يَا رَسُوْلَ اللهِ فَمَا بَالُ إِبِلِي تَكُوْنُ فِيْ الرَّمْلِ كَأَنَّهَا الظِّبَاءُ فَيَأْتِيْ الْبَعِيْرُ الْأَجْرَبُ فَيَدْخُلُ بَيْنَهَا فَيُجْرِبُهَا فَقَالَ فَمَنْ أَعْدَى الْأَوَّلَ.
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : রোগের কোন সংক্রমণ নেই, সফরের কোন অশুভ আলামত নেই, পেঁচার মধ্যেও কোন অশুভ আলামত নেই। তখন এক বেদুঈন বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! তাহলে আমার এ উটের এ অবস্থা কেন হয়? সেগুলো যখন চারণ ভূমিতে থাকে তখন সেগুলো যেনো মুক্ত হরিণের পাল। এমন অবস্থায় চর্মরোগাগ্রস্ত উট এসে সেগুলোর পালে ঢুকে পড়ে এবং এগুলোকেও চর্ম রোগে আক্রান্ত করে ফেলে। জবাবে নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাহলে প্রথমটিকে চর্ম রোগাক্রান্ত কে করেছে?”[২]
এ হাদীসের অর্থ হলো, যে আল্লাহ তা‘আলা প্রথম উটটিকে আক্রান্ত করেছিলেন তিনিই অন্যান্য উটকেও আক্রান্ত করেছেন। অর্থাৎ- রোগ-ব্যাধি নিজে নিজে সংক্রমিত হয় না, যদি আল্লাহ তা‘আলার হুকুম না থাকে।
মোটকথা, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে রোগাক্রান্ত হওয়া একটি বাস্তব বিষয়। তবে সংক্রমণের এই ক্ষমতা রোগের নিজস্ব নয়; বরং আল্লাহপ্রদত্ত। তাই তিনি চাইলে সংক্রমণ হবে নতুবা হবে না এবং এটি যেহেতু রোগাক্রান্ত হওয়ার একটি বাস্তব কারণ তাই রোগাক্রান্ত হওয়ার অন্যান্য কারণ থেকে বেঁচে থাকতে যেমনিভাবে কোনো দোষ নেই তেমনি এ ক্ষেত্রেও উপযুক্ত সতর্কতা অবলম্বন করাও দোষের নয়; বরং কিছু হাদীসে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশও প্রদান করা হয়েছে।[৩]
ইসলামে যে ছোঁয়াচে রোগকে অস্বীকার করা হয়নি তার প্রমাণে অনেক হাদীস রয়েছে। তন্মধ্যে নিচের হাদীসগুলো অন্যতম : আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন :
্রلَا يُوْرِدُ مُمْرِضٌ عَلٰى مُصِحٍّগ্ধ.
“অসুস্থ উটগুলোর মালিক তার উটগুলোকে সুস্থ পশুর দলে পাঠিয়ে দেবে না। (কারণ এতে ঐ সুস্থ প্রাণীগুলো রোগাক্রান্ত হতে পারে।)”[৪]
তিনি (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরও বলেন :
্রفِرَّ مِنَ المَجْذُوْمِ كَمَا تَفِرُّ مِنَ الْأَسَدِগ্ধ.
“সিংহের আক্রমণ থেকে যেভাবে পলায়ন করো কুষ্ঠরোগী থেকেও সেভাবে পলায়ন করো।”[৫]
আবার তিনি কুষ্ঠরোগীর সাথে বসেও খাবার খেয়েছেন আর বলেছেন :
্রكُلْ بِسْمِ اللهِ، ثِقَةً بِاللهِগ্ধ.
“আল্লাহ তা‘আলার উপর আস্থা রেখে আল্লাহর নামে খাওয়া শুরু করো।”[৬]
এটা তিনি এ জন্য করেছেন যে, কুষ্ঠ রোগীর কাছে গেলেই যে, সে রোগে আক্রান্ত হতে হবে তা জরুরি নয়; বরং কখনও হতে পারে আবার কখনও নাও হতে পারে। এটা আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল।
উল্লেখ্য যে কোন এলাকায় মহামারি দেখা দিলে করণীয় কি? সে বিষয়েও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ফয়সালা রয়েছে। হাদীসে এসেছে-
عن أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ مَاذَا سَمِعْتَ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فِيْ الطَّاعُوْنِ فَقَالَ أُسَامَةُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ الطَّاعُوْنُ رِجْسٌ أُرْسِلَ عَلٰى طَائِفَةٍ مِنْ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ أَوْ عَلٰى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ فَإِذَا سَمِعْتُمْ بِهِ بِأَرْضٍ فَلَا تَقْدَمُوْا عَلَيْهِ وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا فَلَا تَخْرُجُوْا فِرَارًا مِنْهُ.
উসামাহ্ ইবনু যায়িদ হতে বর্ণিত। তিনি জিজ্ঞাসিত হলেন, মহামারি সম্পর্কে আপনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে কি শুনেছেন? তখন তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, মহামারি! এটি একটি গযব, যা বানী ইসরা-ঈল বা পূর্ববর্তী জাতির উপর প্রেরণ করা হয়েছিল। অতএব, যখন তোমরা কোন জমিনে মহামারির কথা শুনবে তখন সে এলাকায় প্রবেশ করবে না, আর যখন কোন এলাকায় অবস্থানকালে তোমাদের নিকট মহামারি আগমন করে, তখন সে এলাকা ছেড়ে যাবে না।[৭]
অতএব কোন এলাকায় মহামারি বা সংক্রমণ ব্যাধি দেখা দিলে সে এলাকায় প্রবেশ করা যেমন অনুচিত, তেমনি সেই অঞ্চলের লোকজন যাতে সেখান থেকে অন্যত্র গমন না করে সে দিকেও লক্ষ্য রাখা উচিত। কেননা এর মাধ্যমে সংক্রমণ ব্যাধি পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে- যদি আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা পোষণ করেন।

[১] সহীহু বুখারী- হা/৫৭০৭।
[২] সহীহ মুসলিম- ৩৯/৩৩, হাঃ ২২২০; আহমাদ- হাঃ ৭৬২৪।
[৩] বাযলুল মাজহূদ- ১৬/২৪২; শরহুন নববী- ২/২৩০; ফয়যুল কাদীর- ৬/৪৩৩।
[৪] সহীহ মুসলিম- হাঃ ১০৪/২২২১।
[৫] সহীহুল বুখারী- হাঃ ৫৭০৭।
[৬] আত্ তিরমিযী- অধ্যায় : খাদ্যদ্রব্য, অনুচ্ছেদ : কুষ্ঠরোগীর সাথে খাবার খাওয়া, মাঃ শাঃ, হাঃ ১৮১৭, য‘ঈফ।
[৭] সহীহুল বুখারী- হাঃ ৩২১৪; সহীহ মুসলিম- হাঃ ৪১০৮।


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:26:03 সূর্যাস্ত : 5:11:29

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত