সাময়িক প্রসঙ্গ
মহান আল্লাহর সৃষ্টি থেকে উপদেশ গ্রহণ করুন!
হারুনুর রশীদ ত্রিশালী

অতঃপর, আপনারা আপনাদের প্রকাশ্য ও গোপনীয় সকল বিষয়ে মহান আল্লাহকে ভয় করুন; যেনো তিনি আপনাদের যাবতীয় বিষয়ে অভিভাবকত্ব করেন, অবস্থাকে ত্রুটিমুক্ত করেন। কেননা তাক্বওয়া অবলম্বনই হচ্ছে সফলকাম সৎ কর্মশীলদের নীতি। যারা তা থেকে বঞ্চিত হয়, তারাই স্পষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ।
মহান আল্লাহর বান্দাগণ! আপনারা বিচক্ষণ ও ঈমানদার হোন, আর জ্ঞানী ও সহানুভূতিশীলদের পথ অনুসরণ করুন; কেননা জ্ঞানীরাই যৌক্তিক চিন্তাধারা ও সঠিক প্রকৃতির অধিকারী হয়ে থাকে। মূলতঃ তারাই ওয়াহীর দ্বারা উপকৃত হয়, আল্লাহ তা‘আলা যা নাযিল করেছেন তার অর্থ তারা সেভাবেই বুঝে যেভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বুঝিয়েছেন। ফলে তারা সওয়াব পাওয়ার আশায় ও শাস্তির আশংকায় তাঁর কালাম অনুপাতে ‘আমল করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আর যারা তাগূতের ‘ইবাদত থেকে দূরে থাকে এবং আল্লাহর অভিমুখী হয় তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ। অতএব সুসংবাদ দিন আমার বান্দাদেরকে; যারা মনযোগের সাথে কথা শুনে এবং সেগুলোর মধ্যে যা উত্তম তা অনুসরণ করে। তাদেরকেই আল্লাহ হিদায়াত দান করেছেন, আর তারাই বোধশক্তি সম্পন্ন।”
আলোকিত জ্ঞানী ও বিচক্ষণ ব্যক্তির কাজ হচ্ছে শিক্ষাগ্রহণ বা উপদেশগ্রহণ। এটাই ব্যক্তিকে সফলতা ও অগ্রগতির পথ দেখায়, ধ্বংসাত্মক বস্তু হতে উদ্ধার করে। এ রকম ব্যক্তিরাই ভাল কাজের তাওফীক্ব পায়, সৎ কর্মশীল বান্দাদের পথের সন্ধান পায় এবং তার সকল পরিণতি শুভ হয়। পক্ষান্তরে যে উপদেশগ্রহণ করা হতে বঞ্চিত, উপদেশবাণী তার কোন কাজে আসে না, সে ক্ষতির সম্মুখীন হয়, প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, বাজে লোকদের পথে চলে, ফলে সে অনুশোচনা ও আফসোসকারীদের মতো হয়।
শিক্ষাগ্রহণ বলতে বর্তমান বা অতীত কোন লাঞ্চনাজনক শাস্তিুযোগ্য অবস্থা হতে উন্নত ও ভাল অবস্থায় ফিরে আসাকে বুঝায়, যে কারণে শাস্তির সম্মুখীন হতে হয় তা পরিহার করার মাধ্যমে। অথবা সালাফে সালেহীনের জীবনী ও যে কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে সম্মানিত করেছেন; সেগুলো বিবেচনা করে তাদের মতো ‘আমল করা, তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করাকেও বুঝায়। অথবা সৃষ্টির প্রকৃতি নিয়ে চিন্তা করা, তার রহস্য ও বিবিধ বিষয় উদঘাটন করা, তা থেকে স্রষ্টার ‘ইবাদতের হিকমত সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা এবং আনুগত্য ও ‘ইবাদতে তাকে এককভাবে নির্দিষ্ট করাকেও বুঝায়।
সৃষ্টিকূলকে আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি করেছেন এবং এদের জন্য বিভিন্ন নিয়ম ও রীতি নির্ধারণ করেছেন। আনুগত্যমূলক ভাল কাজকে ইহকাল ও পরকালের যাবতীয় কল্যাণের মাধ্যম বানিয়েছেন, তদ্রুপ অবাধ্যতাকে ইহকাল ও পরকালের যাবতীয় অনিষ্টতা ও অকল্যাণের মাধ্যম বানিয়েছেন। কেউ কি মহান আল্লাহর আনুগত্য করে দুুর্ভাগা হয়েছে? আর কেউ কি মহান আল্লাহর নাফরমানী করে সৌভাগ্যবান হয়েছে?!
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে এবং রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের কাছে বিভিন্ন কাহিনী, নাবী, রাসূল ও মু‘মিনদের বিভিন্ন অবস্থার কথা বর্ণনা করেছেন; যেগুলোতে রয়েছে উপদেশ, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অনুসরণীয়। তাতে রয়েছে শাস্তি থেকে মুক্তির উপায়, নি‘আমত পেয়ে সফলতার কথা এবং উত্তম পরিণাম ও সম্মান বৃদ্ধির উপায়সমূহ।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “তাদের (পূর্ববর্তী) বৃত্তান্তে অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আছে শিক্ষা। এটা কোন বানানো রচনা নয়; বরং এটা আগের গ্রন্থে যা আছে তার সত্যায়ন ও সব কিছুর বিশদ বিবরণ, আর যারা ঈমান আনে এমন সম্প্রদায়ের জন্য হিদায়াত ও রহমত।”
তিনি আরো বলেন, “অতঃপর আমরা আমাদের রাসূলদের ও যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে নাজাত দিলাম। এভাবে মু‘মিনদের নাজাত দেয়া আমাদের কর্তব্য।”
আর মিথ্যুক ও অবাধ্যদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আর তারা এক চক্রান্ত করেছিল এবং আমরাও এক কৌশল অবলম্বন করলাম, অথচ তারা উপলব্ধিও করতে পারেনি। অতএব দেখুন, তাদের চক্রান্তের পরিণাম কী হয়েছে... আমরা তো তাদেরকে ও তাদের সম্প্রদায়ের সকলকে ধ্বংস করেছি। যুল্মের কারণে তাদের ঘরবাড়ী জনশূন্য অবস্থায় পড়ে আছে, নিশ্চয় এতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্য। আর তারা তাক্বওয়া অবলম্বন করত।
আল্লাহ তা‘আলা সূরা আশ্ শু‘আরা’য় অসংখ্য নাবীদের বিভিন্ন কাহিনী বর্ণনা করেছেন। তাঁর রাসূলদের ও মু‘মিন বান্দাদের নাজাতের কথা উল্লেখ করে ঘটনার বর্ণনা শেষ করেছেন এই কথা বলে- “আর আপনার রব তিনি আল্লাহ, নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন, আর তাদের অধিকাংশই মু‘মিন নয়। তিনি পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।”
ইমাম ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লা-হ) এই আয়াতের “নিশ্চয় এতে রয়েছে নিদর্শন” ব্যাখ্যায় বলেন, ‘অর্থাৎ- এই কাহিনী ও তার মধ্যে যেসব আশ্চর্য বিষয়, বিজয় ও আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক মু‘মিন বান্দাদের সাহায্য করা ইত্যাদিতে রয়েছে নিদর্শন ও অকাট্য প্রমাণ। ‘আর আপনার রব, তিনি তো পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু’ অর্থাৎ- তিনি সকল কিছুর উপর প্রাধান্য ও কর্তৃত্ব লাভ করেছেন। সকল সৃষ্টির প্রতি অনুগ্রহ করেন। যারা তাঁর অবাধ্য হয় তাদেরকে তড়িৎ কোন শাস্তি দেন না; বরং তাদেরকে সুযোগ ও অবকাশ দেন, অবশেষে তাদেরকে কঠিনভাবে পাকড়াও করেন।’
সা‘ঈদ ইবনু যুবাইর (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন, ‘যারা তাঁর কাছে তাওবাহ্ করে ফিরে আসে, তিনি তাদের প্রতি পরম দয়ালু।’
লূত সম্প্রদায়ের ঘটনায় আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “নিশ্চয়ই এতে নিদর্শন রয়েছে পর্যবেক্ষণ শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য।”
ক্বাতাদাহ্ (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন, “অর্থাৎ- উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য” উক্তিটি ইমাম বাগাবী তার তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
অতএব ইতিহাস ও বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ হতে তারাই শিক্ষাগ্রহণ করে যারা চিন্তাশীল উপদেশগ্রহণকারী, যারা সমাজ সংস্কারক সৎ কর্মশীলদের পথে চলে, বাজে ও ফিতনা ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের পরিহার করে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি উপদেশ ও শিক্ষাগ্রহণ করে না, আত্মসমালোচনা করে না, পরকালের জন্য কোন ভাল ‘আমলও করে না, তার ধর্ম জ্ঞান তাকে অশ্লীলতা ও পাপ কর্মে বাধা দেয় না; সে হচ্ছে চতুষ্পদ পশুর ন্যায়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “নাকি আপনি মনে করেন যে, তাদের অধিকাংশই শুনে বা বুঝে? তারা তো পশুর মতই; বরং তারা আরও অধিক পথভ্রষ্ট।”
হাদীসে এসেছে- নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘মু‘মিন ব্যক্তি যখন রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করে, তাহলে তা তার অতীত গুনাহের কাফ্ফারা হয়ে যাবে। আর যদি আল্লাহ তা‘আলা তাকে রোগমুক্তি দেন, তবে এটা তার অতীত গুনাহের কাফ্ফারাস্বরূপ এবং ভবিষ্যত জীবনের জন্য শিক্ষণীয়। পক্ষান্তরে কোন মুনাফিক্ব অসুস্থ হওয়ার পর তাকে তা থেকে মুক্তি দেয়া হলে সে এমন উটের মতো আচরণ করে যাকে তার মালিক শক্ত করে বেঁধে রেখে পুণরায় ছেড়ে দেয়। কিন্তু সে কিছুই বুঝে না; তাকে তার মালিক কেনই বা শক্ত করে বাঁধল আর কেনই বা ছেড়ে দিলো।’১
নাবী-রাসূল ও শেষ নাবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর চরিত্র ও জীবনী আল্লাহ তা‘আলা উল্লেখ করেছেন, যেনো আমরা তাদের ইতিহাস থেকে উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণ করি, তাদের নির্দেশনা ও আদর্শ অনুসরণ করি এবং তাদের পথে চলি। স্বয়ং নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে তাদের অনুসরণ করতে নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“এরাই তারা, যাদেরকে আল্লাহ হিদায়াত করেছেন; কাজেই আপনি তাদের পথের অনুসরণ করুন।”
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, “অতএব ধৈর্য্য ধারণ করুন যেমন ধৈর্য্য ধারণ করেছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ রাসূলগণ।”
আল্লাহ তা‘আলা সূরা ইয়া-সীনে জনৈক মু‘মিন বান্দার উক্তি এভাবে উল্লেখ করেছেন :
“হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসূলদের অনুসরণ করো; অনুসরণ করো তাদের, যারা তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চায় না এবং যারা সৎপথপ্রাপ্ত।”
আর সর্বশেষ নাবী হচ্ছেন আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম), যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা অন্যান্য সকল শরী‘আতকে রহিত করে দিয়েছেন। আর তাকে পূর্ণাঙ্গ ধর্ম ও চিরন্তন জীবন-বিধান দিয়ে পাঠিয়েছেন। যে ব্যক্তি তার পথকে আঁকড়ে থাকবে, তাকে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম জীবনের দায়িত্ব নিয়েছেন এবং সৃষ্টির সেরাদের সাথে তাকে স্থায়ী শান্তি নিকেতন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর কেউ আল্লাহ এবং রাসূলের আনুগত্য করলে সে নাবী, সিদ্দীক (সত্যনিষ্ঠ), শহীদ ও সৎকর্মশীল বান্দাদের-যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন- তাদের সঙ্গী হবে। আর তারা কতই না উত্তম সঙ্গী!”
এর চেয়ে বড় সম্মাননা আর কী হতে পারে? এর চেয়ে সুউচ্চ মর্যাদা আর কী হতে পারে?
নাবী-রাসূল ও মু‘মিন বান্দাদের অনুসরণ করতে, তাদের সাথে মুক্তির পথে চলতে, তাদের জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে ও তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদের কাছে যেমন তাদের কাহিনী ও ঘটনাসমূহ বর্ণনা করেছেন; ঠিক তেমনিভাবে তাদের ঘটনাও বর্ণনা করেছেন, যারা তাদেরকে (নাবী-রাসূলদেরকে) অস্বীকার করেছিল, সত্যের বিরোধিতা করেছিল, তাদের অনুসরণ না করে হঠকারিতা প্রকাশ করত। এরা পরকালের চেয়ে পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিত ও ভোগ বিলাসিতায় মত্ত থাকত। উদ্দেশ্য হচ্ছে তারা যে শাস্তির সম্মুখীন হয়েছে, দুনিয়ায় লাঞ্চনা ও আখিরাতে ‘আযাবে পতিত হয়েছে; তা থেকে যেনো আমরা উপদেশ গ্রহণ করি এবং তাদের উপর যে অভিশাপ নেমেছিল তা থেকে বেঁচে থাকতে পারি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আর আমরা আ‘দ ও সামূদকে ধ্বংস করেছিলাম; তাদের বাড়িঘরের কিছু তোমাদের জন্য উন্মোচিত হয়েছে। আর শয়ত্বান তাদের কাজকে তাদের দৃষ্টিতে সজ্জিত করেছিল এবং তাদেরকে সৎপথ অবলম্বনে বাধা দিয়েছিল, যদিও আমরা ধ্বংস করেছিলাম কারূন, ফিরাউন ও হামানকে। আর অবশ্যই এটা ছিল বিচক্ষণতা। মূসা (‘আলাইহিস্ সালাম) তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ এসেছিলেন; অতঃপর তারা যমীনে অহংকার প্রদর্শন করেছিল সুতরাং তাদের প্রত্যেককেই অস্বীকার করেছিল; কিন্তু তারা আমার শাস্তি এড়াতে পারেনি। আমরা তার অপরাধের জন্য পাকড়াও করেছিলাম। তাদের কারো উপর আমরা পাঠিয়েছিলাম পাথরকুচির প্রচণ্ড ঝটিকা, তাদের কাউকে আঘাত করেছিল মহানাদ, কাউকে আমরা প্রোথিত করেছিলাম ভূগর্ভে এবং কাউকে আমরা করেছিলাম নিমজ্জিত। আর আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তাদের প্রতি যুল্ম করবেন; বরং তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুল্ম করছিল।”
তিনি আরো বলেন, “তারা সকলেই রাসূলগণের প্রতি মিথ্যারোপ করেছিল, ফলে তাদের উপর আমার শাস্তি যথার্থভাবে আপতিত হয়েছে।”
আল্লাহ তা‘আলা বানু নাযীরের ঘটনায় বলেন, “অতএব হে বিচক্ষণ ব্যক্তিগণ! তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।”
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের সাথে শত্রুতা পোষণকারী মিথ্যারোপকারীদের সাথে রাসূলগণের ইতিহাস জনগণ জানেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম তা জেনে আসছে। ফলে এটা সৃষ্টিকূলের উপর মহান আল্লাহর অন্যতম বড় প্রমাণ যে; তিনি সত্য ও সত্যবাদীদের সাহায্য করেন, এর মাধ্যমে তাওহীদের জ্ঞান লাভ করা ও সে দিকে আহ্বান করা জরুরী, একত্ববাদীরাই সাহায্যপ্রাপ্ত হয়। অনুরূপভাবে এটাও প্রমাণ বহণ করে যে, অন্যায় ও শিরক অগ্রহণযোগ্য, এগুলো পরিহার করা আবশ্যক এবং সত্যবিমুখ মুশরিকরা শাস্তির সম্মুখীন হবে। মূলতঃ ইতিহাস হচ্ছে এমন এক মাধ্যম; যা থেকে ব্যক্তি, পরিবার, প্রজন্ম, জাতি, এমনকি রাষ্ট্রও শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।
অতএব যে ব্যক্তি ইতিহাস থেকে উপদেশ গ্রহণ করবে, সে-ই নাজাত পাবে। আর যে ব্যক্তি তা থেকে শিক্ষা নিবে না, তার উপরই বিধান কার্যকর হবে এবং বিভিন্ন অপূর্ণতায় জর্জরিত হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আল্লাহর এ বিধান পূর্ব থেকেই তাঁর বান্দাদের মধ্যে চলে এসেছে এবং তখনই কাফেররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
আর সৃষ্টির প্রকৃতি নিয়ে চিন্তা করে শিক্ষাগ্রহণ, তার রহস্য ও বিবিধ বিষয় উদঘাটন করা এবং এ অপূর্ব নিপুণ সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করার মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে- মহান আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করা, তাঁর ‘ইবাদত ও আনুগত্য করা। অতএব যিনি এককভাবে সৃষ্টিকূলকে সৃষ্টি করেছেন, তিনিই সত্য মা‘বূদ/উপাস্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আর নিশ্চয় গবাদি পশুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। তার পেটের গোবর ও রক্তের মধ্য থেকে তোমাদেরকে পান করাই বিশুদ্ধ দুধ, যা পানকারীদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যকর।”
তিনি আরো বলেন, “তিনিই রাত ও দিনের পরিবর্তন করেন। নিশ্চয় এতে বিচক্ষণ ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে উপদেশ।”
তিনি আরো বলেন, “বলুন! আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে সেগুলোর প্রতি লক্ষ্য করো। আর যারা ঈমান আনে না, প্রমাণাদি ও ভয় প্রদর্শন তাদের কোন কাজে আসে না।”
অতএব মহান আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করা প্রতিটি মুসলিমের ‘ইবাদতের শামিল। আর এই বিশাল সৃষ্টিজগত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করায় একজন মুসলিমের ঈমান বৃদ্ধি পায়, বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“নিশ্চয় মু‘মিনদের জন্য ভূমণ্ডল ও নভোম-লে রয়েছে অসংখ্য নিদর্শন।”
গভীরভাবে চিন্তা করা ও উপদেশ গ্রহণ দ্বিধাগ্রস্ত ব্যক্তিকে সংশয়মুক্ত দৃঢ় প্রত্যয়ী করে তুলে, অন্তরকে জাগ্রত করে, চিন্তাশক্তিকে আলোকিত করে, চরিত্র গঠন করে। পক্ষান্তরে চিন্তা করা ও উপদেশ গ্রহণ হতে বিমুখ হলে তা ব্যক্তির অন্তরকে কঠোর করে তোলে, অবসাদগ্রস্থ করে ফেলে, আফসোস ও পরিতাপের দিকে নিয়ে যায় এবং পাপাচারে লিপ্ত করে।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) হতে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মি‘রাজের সময় বলেন, ‘অতঃপর যখন আমি দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করলাম, আমার নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি প্রচণ্ড বাতাস, শব্দ ও ধোঁয়া! জিবরা-ঈলকে বললাম : এগুলো কী? তিনি বললেন : এগুলো শয়ত্বান। এরা মানুষের দৃষ্টিকে অন্য দিকে প্রবাহিত করত, যেনো তারা আসমানসমূহ ও যমীনের সার্বভৌম কর্তৃত্ব সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতে না পারে। তা না হলে তারা অনেক অত্যাশ্চর্য বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে পারত।’২
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “নিশ্চয় যারা তাক্ওয়া অবলম্বন করেছে, তাদেরকে শয়ত্বান যখন কুমন্ত্রণা দেয় তখন তারা মহান আল্লাহকে স্মরণ করে এবং সাথে সাথেই তাদের চোখ খুলে যায়।
بارك الله لي ولكم في القرآن العظيم.
[খতীব : শাইখ আলী বিন আব্দুর রহমান আল হুযাইফী, ০৭ ফেব্রুয়ারি- ২০২০ জুমাবার প্রদত্ত খুতবার অনুবাদ]


১. সুনান আন্ নাসায়ী।
২. মুসনাদে আহমাদ।


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 5:43:02 সূর্যাস্ত : 6:09:54

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত