সমাজচিন্তা
করোনা মহামারী দান-সাদাক্বাহ্ ও ইসলামের নির্দেশনা
অধ্যাপক মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ
আল্লাহ তা‘আলা মহাগ্রন্থ আল কুরআনে অনেক জায়গায় নিকটাত্মীয়-স্বজন ও গরীব-দুঃস্থদের দান করার নির্দেশ দিয়েছেন। দান করা ইসলামের অনবদ্য ও শাশ্বত এক বিধান। সাদাক্বাহ্ তথা দান বান্দার প্রতি পরম করুণাময় আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম নির্দেশনা। এর মাধ্যমে মানব জীবনের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ সাধিত হয়। স্বচ্ছল ও সামর্থ্যবান ব্যক্তি কর্তৃক অসচ্ছল ও অসামর্থ্যবান ব্যক্তিকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কিছু দান করাকে সাদাক্বাহ্ বলে। সাদাক্বাহ্ প্রধানত দুই ধরনের হতে পারে। বাধ্যতামূলক ও ঐচ্ছিক। ব্যাপক অর্থে মানুষের সাথে হেসে কথা বলা, ভালো পরামর্শ দেওয়া, সৎকাজের আদেশ করা ও অন্যায় কাজের নিষেধ করা অর্থাৎ- যা দ্বারা মানুষের উপকার হয় সবকিছুই সাদাক্বার অন্তর্ভূক্ত। তবে যাকাত ও ফিতরা হলো বাধ্যতামূলক সাদাক্বাহ্। এছাড়াও অন্যান্য দান ঐচ্ছিক সাদাক্বার পর্যায়ভুক্ত। করোনা মহামারীতে গরীব আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীকে সাধারণ সাদাক্বাহ্ বা দান নিয়ে আজকের আলোচনা।
মহানাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) দান-সাদাক্বাহ্ করার জন্য অনেক হাদীসে বিভিন্নভাবে উম্মাতদের উৎসাহ দিয়েছেন। কারণ দান-সাদাক্বাহ্ করলে মহান আল্লাহর রোষ প্রশমিত হয়, মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়, গুনাহ মোচন হয়, আল্লাহ তা'আলা জান-মাল হেফাযত করেন, ব্যক্তির বিপদ-আপদ দূর হয়, দান-সাদাক্বায় সওয়াব বৃদ্ধি হয়, সম্পদের বরকত হয়, জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ হয়, মৃত্যুর পরেও দান-সাদাক্বার সওয়াব জারী থাকে এবং আল্লাহ তা‘আলা পরকালে আরশের ছায়ায় স্থান দেন ইত্যাদি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দানের মাধ্যমে মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ ঘটে; যিনি আমাদের অর্থ সম্পদ অর্জন ও ভোগের সুযোগ দিয়েছেন। তাঁর সুযোগ প্রদানের কারণেই অনেকেই আমরা স্বাবলম্বী বা অবস্থা সম্পন্ন; এটা মহান আল্লাহর একান্ত মেহেরবানী ও দয়া। এমনও তো হতে পারত আমাদের তিনি ভিন্ন পরিবেশে দুনিয়ায় আগমন ঘটাতে পারতেন; বরং তিনি তা না করে অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থায় আমাদের অনেক বৈষয়িক সুযোগ-সুবিধা উপভোগের সুযোগ দিয়েছেন। তাই তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ ঘটবে তার দেওয়া সুযোগের উপর ভিত্তি করে অর্জিত সম্পদ যখন মহান আল্লাহর রাস্তায় সাধারণ অনাহারি লোকদের মাঝে বিতরণ করা হবে। আমরা ধর্মীয় চেতনা থেকে এতোটাই গাফিল যে, এত কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনার পরও মানুষ অজ্ঞতার কারণে দান-সাদাক্বাহ্ থেকে নিজেদের বিরত রাখে। অথচ ঐচ্ছিক সাদাক্বাহ্ প্রদানে সওয়াবেরই অংশ বেশি, যদিও অধিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও দান না করাতে গুনাহ আছে। অর্থাৎ- সামগ্রিকভাবে এটাই বলা যেতে পারে যে, বাধ্যতামূলক সাদাক্বাহ্ (যাকাত)-এর ব্যাপারে গুনাহমুক্তি, সম্পদের প্রবিত্রতা অর্জন এবং ঐচ্ছিক সাদাক্বার ব্যাপারে সওয়াব অর্জনের প্রাধান্যই বেশি।
আজকের করোনা ভাইরাসের কারণে সারা পৃথিবীর গতি স্থির হয়ে মানুষ কোয়ারাইন্টাইনে নিজ নিজ বাড়ী-ঘরে জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত। সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষ চরম অর্থসঙ্কটে, তীব্র দারিদ্রতার কষাঘাতে চরম দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছে। নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি যারা অন্যের কাছে অভাবে হাত পাততে পারে না, তাদের অবস্থা আরো করুণ। দিনমজুরে ‘কাজ আছে, খাবার আছে; কাজ নেই, খাবার নেই’ -এ শ্রেণির মানুষের কোয়ারাইন্টানে বন্দি জীবনে আয়-রোজগারের চাকা একবারেই বন্ধ। কি এক ভয়াবহ দুর্বিষহ জীবন-যাপন তারা করে যাচ্ছে। এর চেয়ে ভয়াবহ খবর হলো, ব্রাকের গবেষণা মতে, দেশে এখন ১৪% মানুষের ঘরে কোনো খাবার নেই। সরকার কিছু ত্রাণের ব্যবস্থা করেছে। কিছু কিছু জায়গায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে আলোকিত কিছু মানুষ প্রতিবেশী গরীবদের সহযোগিতা করছে। প্রয়োজনের তুলনায় এ সংখ্যা ও আয়োজন যথেষ্ট অপ্রতুল; তাই প্রয়োজন স্বাবলম্বি ও ধনীদের এ কঠিন সময়ে অসহায় আত্মীয়-স্বজন ও অভাবী প্রতিবেশীদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়ানো ও অসহায়দের সাহায্যার্থে সামাজিকভাবে গঠনমূলক কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
দুর্দিনে মানুষের প্রতি আন্তরিকতার সাথে প্রদত্ত এই দান-সাদাক্বাহ্ ক্বিয়ামতের কঠিন সময়ে নাজাতের উসিলাহ হবে। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
“হে ঈমানদারগণ! আমার দেওয়া রিয্কের কিয়াদাংশ দান করে দাও এমন এক মহা সংকটপূর্ণ দিন আসার পূর্বে যে দিন না কোনো বেচা-কেনা চলবে, না কোনো বন্ধুত্ব কাজে আসবে এবং আল্লাহর অনুমতি ভিন্ন না কোন সুপারিশের সুযোগ হবে।”[১]
দানের ব্যাপারে উৎসাহিত করতে গিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
“এবং তোমরা যারা আল্লাহর রাস্তায় দান করবে, তার প্রতিদান তোমাদেরকে পুরাপুরি দেয়া হবে। আর তোমাদের প্রতি কোনো প্রকার যুল্ম করা হবে না।”[২]
দান করলে ব্যক্তির সম্পদ অনেকগুণ আল্লাহ তা‘আলা বাড়িয়ে দেন। যেমন- তিনি বলেন-
“আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করে দেন এবং সাদাক্বাহ্কে বর্ধিত করে দেন।”[২]
এ উক্তি আখিরাতের দিক দিয়ে তো সম্পূর্ণ পরিষ্কার; সত্য উপলব্ধির সামান্য চেষ্টা করলে দুনিয়ার দিক দিয়েও সুস্পষ্ট। কারণ সুদ ও জুয়ার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়েই অজস্র পুঁজির মালিক কোটিপতি দেখতে দেখতে দেউলিয়া ও ফকিরে পরিণত হয়। মানুষকে দান করা অসাধারণ এক অনবদ্য পবিত্র কাজ। এ জন্য দানের মহিমা বর্ণনা করতে গিয়ে দয়াময় আল্লাহ তা'আলা অসাধারণ উপমা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন :
“যারা আপন ধন-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান করে তাদের দৃষ্টান্ত হলো ঐ দানার মতো, যেখান হতে এরূপ সাতটি ছড়া বের হলো যার প্রত্যেকটিতে একশত করে দানা রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।”[৩]
এ আয়াতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অভাবগ্রস্ত, দীন-দুঃখীদের জন্য ব্যয় করার শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। এতে করে সম্পদের প্রবৃদ্ধি বাড়াবেন তিনি সীমাহীনভাবে।
এভাবে দান-সাদাক্বাহ্ নিয়ে আরো বলা হয়েছে- যে ক্বিয়ামতের বিপদে দানদাতাকে চিন্তামুক্ত করবে। তবে শর্ত হলো দান করে খোঁটা বা কটু কথা বলা যাবে না। আজ আমরা দেখি কোয়ারান্টাইনে আবদ্ধ গরিব মানুষকে ত্রাণের প্যাকেট দেওয়ার সময় ভিডিও করছে, সেল্ফি উঠাচ্ছে, দানে মাল গ্রহণের সময় ক্যামেরার দিকে তাকানো হয়নি এ জন্য ধমকাচ্ছে। এসব সত্যিকারভাবে সাদাক্বাহ্ বা দানের আদাব বা শিষ্টাচার নয়। ইসলামে অনেক ভদ্রতার সাথে দান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
“যারা তাদের মাল আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, অতঃপর দান গ্রহিতার প্রতি কোন প্রকার খোঁটাও দেয় না অথবা কটু কথাও বলে না, স্বীয় প্রতিপালকের নিকট তাদের জন্য প্রতিদান রয়েছে। ক্বিয়ামতের দিন তাদের কোন ভয় নেই এবং কোন প্রকার চিন্তাযুক্তও হবে না।”[৪]
দান হলো পরোপকারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নির্ভেজালভাবে দান করার মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহকে খুশি করার মাধ্যমেই ব্যক্তির তাক্বওয়ার প্রকাশ ঘটে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
“এবং তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের তরফ হতে ক্ষমাপ্রাপ্তির দিকে এবং এমন জান্নাতের দিকে দৌড়াতে থাকো, যার প্রশস্ততা হবে সাত আসমান ও যমীনের সমতুল্য, যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে এমন সব মুত্তাকীনদের জন্য যারা সুখ-দুঃখ উভয় হালতেই আল্লাহর রাস্তায় দান-খয়রাত করে থাকে এবং রাগ আসলে তাা হজম করে লয়; মানুষের অপরাধ ক্ষমা করে দেয়। বস্তুতঃ আল্লাহ পরোপকারী লোকদের ভালবাসেন।”[৫]
যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে স্বীয় অর্থ সম্পদ ব্যয় করতে অভ্যস্ত, তাদের ব্যাপারে এখানে বলা হয়েছে। তারা স্বচ্ছল হোক কিংবা অভাব-অনটনে থাকুক, সর্বাবস্থায় তারা সাধ্যানুযায়ী মানুষের জন্য ব্যয় করে থাকে। বেশী হলে বেশী এবং কম হলে কমই ব্যয় করে। এতে এক দিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, দরিদ্র ও নিঃস্ব ব্যক্তিও মহান আল্লাহর পথে ব্যয় করতে নিজেকে মুক্ত মনে করবে না এবং সৌভাগ্য থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখবে না। এর বরকতে আল্লাহ তা‘আলা আর্থিক সচ্ছলতা ও স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন। অসহায়দের দানের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃত অপরাধের জন্য ক্ষমার সৌভাগ্যও হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
“শয়ত্বান তোমাদেরকে অভাব-অনটনের ভীতি প্রদর্শন করে এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়, আর আল্লাহ দান করার বিনিময়ে ক্ষমা করা ও সম্পদ বৃদ্ধি করার ওয়া‘দা করেন। বস্তুতঃ আল্লাহপাক সমৃদ্ধিশালী, সর্বজ্ঞানী।”[৬]
যখন কারো মনে এ ধারণা জন্মে যে, দান-সাদাক্বাহ্ করলে ফকির হয়ে যাবে, বিশেষতঃ আল্লাহ তা‘আলার তাক্বীদ শুনেও স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করার সাহস না হয় এবং মহান আল্লাহর ওয়া‘দা থেকে মুখ ফিরিয়ে শয়ত্বানি ওয়া‘দার দিকে ঝুঁকে পড়ে, তখন বুঝতে হবে যে, এ প্ররোচনা শয়ত্বানের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে যদি মনে ধারণা জন্মে যে, দান-সাদাক্বাহ্ করলে গুনাহ মাফ হবে, সম্পদ বৃদ্ধি পাবে এবং বরকত হবে, তখন মনে করতে হবে এ বিষয়টি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে। এমতাবস্থায় মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিৎ। মহান আল্লাহর ভাণ্ডারে কোনো কিছুর অভাব নেই। এভাবে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন-
“যারা স্বীয় ধন-সম্পদ রাত্রে এবং দিনে, গোপনে এবং প্রকাশ্যে দান করে থাকে তাদের প্রতিদান আপন প্রতিপালকের নিকট সুরক্ষিত থাকবে, আর তারা ভয়শূন্য ও চিন্তা মুক্ত থাকবে।”[৭]
তবে শর্ত হলো খাঁটি নিয়্যাতে দান করতে হবে। নাম-যশের নিয়্যাত থাকলে চলবে না। প্রকাশ্য দান করার কোনো প্রয়োজন দেখা না দেওয়া পর্যন্তই গোপনে দান করার শ্রেষ্ঠত্ব সীমাবদ্ধ। যেখানে এরূপ প্রয়োজন দেখা দেয়, সেখানে প্রকাশ্যে দান করাই শ্রেয়।[৮]
দান-সাদাক্বার ফাযায়েল সীমাহীন। দান-সাদাক্বাহ্ বিপদ-মুসিবতকে দূরিভূত করে গুনাহসমূহ মাফ করে। প্রিয় নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন-
‘সাদাক্বাহ্ দেওয়ার ব্যাপারে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করো। কেননা মুসীবত সাদাক্বাহ্কে ফেড়ে অগ্রসর হতে পারে না।’[৯]
দানের মাধ্যমে ব্যক্তির সম্মান বৃদ্ধি পায়। যেমন- আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) থেকে বর্ণিত।
রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘সাদাক্বাহ্ সম্পদকে হ্রাস করে না, ক্ষমা করা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা বান্দার ইজ্জত বৃদ্ধি করেন; আর কেউ মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে তাওয়াজ্জু বা বিনয় অবলম্বন করলে আল্লাহ তা‘আলা তার মর্যাদাকে উঁচু করে দেন।’[১০]
দান পরকালে আত্ম রক্ষার উপকরণ হবে ও এ দানের প্রক্রিয়ায় অব্যস্থ ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা নিজেও দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন- হে আদম সন্তান! তুমি দান করো, আমি তোমাকে দান করব।’[১১]
আদি ইবনু হাতিম (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন যে, আমি রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি- তোমাদের মধ্যে যার পক্ষে সম্ভব একটা খেজুরের টুকরা দান করে হলেও জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা করুক।[১২]
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে সালাত, সাওমের পাশাপাশি অসহায়দের প্রতি মমতা ও অন্যের দুঃখে কাতর হওয়াও ঈমানের একটি অনুসঙ্গ। এর মাধ্যমে গুনাহ মুক্ত হওয়া যায়। যেমন-
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘নামায, রোযা, সাদাক্বাহ্ ও সৎ কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ (এ সব ‘আমল) মানুষের পরিবার, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি ও প্রতিবেশী সংক্রান্ত গুনাহসমূহ মোচন করে দেয়।’[১৩]
তিনি আরো বলেন- [আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন,] যে, রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘যে ব্যক্তি একটা খেজুর বরাবর সাদাক্বাহ্ করবে পবিত্র উপার্জন থেকে- আর আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র উপার্জন ব্যতীত কবুল করেন না, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার সাদাক্বাহ্কে কবুল করবেন। অনন্তর সেটা বর্দ্ধিত করবেন, যেমন- তোমাদের কেউ তার অশ্বশাবককে লালন-পালন করে বড় বানাতে থাকে (এভাবে আল্লাহ তা‘আলা তার সাদাক্বাহ্কে বৃদ্ধি করতে থাকেন) এমনকি তা পাহাড় সমান হয়ে যায়।’[১৪]
অভাবীদের দানের ক্ষেত্রে নারীদের ও সংযুক্ত করা হয়েছে। তাইতো আমরা দেখি- আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন যে, নাবী কারীম (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতরের দিন বের হয়ে মহিলাদের কাছে গেলেন এবং (তাদের লক্ষ্য করে) বললেন, হে মহিলা সমাজ! তোমরা সাদাক্বাহ্ করো। কেননা আমাকে দেখান হয়েছে যে, জাহান্নামের সিংহভাগ হলো নারী। মহিলাগণ জিজ্ঞাসা করল, তার কী কারণ ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বলেন, তার কারণ হলো, তোমরা বেশী বেশী অভিশাপ দাও এবং স্বামীর না-শোকরী করো।[১৫]
আমরা যারা বিভিন্নভাবে অর্থ সম্পদ অর্জন করেছি, নিজেরাই জানি কতোটা বৈধভাবে আর কি পরিমাণ অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছি। আজকের কোয়ারাইন্টাইনের এ দিনগুলোতে নীরবে আত্মসমালোচনা করতে পারি নীরবে, ঠাণ্ডা মাথায়। প্রত্যেকটি বিষয়ই মহান আল্লাহর কাছে পরকালে জবাবদিহী করা লাগবে। সুতরাং এ দুর্যোগে নিকট আত্মীয় ও গরীব প্রতিবেশীদের দানের মাধ্যমে কিছুটা পাপমুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এত করে আমাদের মৃত্যু অনেক সহজ হতে পারে। যেমন-
আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন যে, নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন- দান আল্লাহ তা‘আলার রোষ প্রশমিত করে এবং খারাপ মৃত্যু রোধ করে।’[১৬]
শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে মৃত্যুর পরও সাওয়াব জারি থাকবে কবরে। আর তাইতো আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন যে, নাবী কারীম (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘যখন মানুষ মারা যায়, তার সমস্ত ‘আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি ‘আমল (এর সওয়ব) বন্ধ হয় না। তা হলো- সাদাক্বায়ে জারিয়া, ‘ইল্ম -যা দ্বারা অন্যরা উপকৃত হয় এবং তার নেককার সন্তান যে তার জন্য দু‘আ করে।’[১৭]
এ দান সাদাক্বাই পরকালে ছায়া হবে। মারসাদ ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন, ‘আমাকে নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর জনৈক সাহাবী বলেছেন যে, তিনি নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, ক্বিয়ামতের দিন মু’মিনের ছায়া হবে তার দান-সাদাক্বা।’[১৮]
ভাবুন তো, অসহায় লোক যাদের কোনো কাজ নেই, কোনো উপার্জনের সুযোগ নেই, ঘরে বন্ধি ঐ সব খেটে-খাওয়া মানুষের পরিবারের সমস্যদের দৈনন্দিনের খাবারের চাহিদা কিভাবে মিটাবে? মানুষ সামাজিক জীব। একা কখনো চলতে পারে না। মানবিক কারণে তাই সকল অবস্থা সম্পন্ন লোকদের সাহায্যের হাত বাড়ানো উচিৎ।
আবূ সা‘ঈদ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘যে কোনো মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানকে বস্ত্র দান করবে, আল্লাহপাক তাকে জান্নাতের সবুজ কাপড় পরিধান করাবেন। যে কোনো মুসলমান অন্য কোনো ক্ষুধার্ত মুসলমানকে আহার করাবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতের ফল থেকে আহার করাবেন। যে কোনো মুসলমান অন্য কোনো পিপাসার্ত মুসলমানকে পানি পান করাবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ‘রহীকে মাখতুম’ থেকে পান করাবেন।’[১৯]
শুধু তাই নয় ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন যে, আমি নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘যে কোন মুসলমান অন্য কোন মুসলমানকে কাপড় পরিধান করাবে, সে আল্লাহর হেফাজতে থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত সেই কাপড়ের একটি টুকরাও তার শরীরে থাকবে।’[২০]
দান করলে ন্যাচারালী নিজেরই মনোজাগতিক প্রশান্তি তৈরী হয়, স্বচ্ছন্দবোদের হিমেল হাওয়া বয়ে যায় দেহ মনে। সুখে থাকার এক স্বর্গীয় অনুভূতি তৈরী হয়। মহান আল্লাহর দানের ভাণ্ডারও উন্মুক্ত হয়ে যায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য। এটাই জান্নত লাভের মাধ্যম।
আসমাহ্ বিনতু আবূ বক্র (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) হতে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : ‘(হে আসমাহ্!) তুমি দান করতে থাকবে এবং হিসাব করবে না। অন্যথায় মহান আল্লাহও তোমাকে দেয়ার ব্যাপারে হিসাব করবেন। আর (সম্পদ) ধরে রাখবে না, অন্যথায় আল্লাহ তা‘আলা তোমার ব্যাপারে ধরে রাখবেন। তোমার শক্তি অনুসারে সামান্য হলেও দান করবে।’[২১]
আর ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : ‘মহান আল্লাহর ‘ইবাদত করো, (দরিদ্রকে) খাদ্য দান করো এবং উচ্চ শব্দে সালাম করো। নিরাপত্তা সহকারে জান্নাতে প্রবেশ করো।’[২২]
করোনা ভাইরাসের এ মহামারিতে আমরা সকলে আজ আতঙ্কিত। যে কোনো সময়ে নিজেরা আক্রান্ত হতে পারি। দান-সাদাক্বার মাধ্যমেই বিপদ দূরিভূত হওয়ার কথা হাদীসে ঘোষিত হয়েছে। একটি হাদীসে আছে-
রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘তোমরা সাদাক্বাহ্ করো এবং সাদাক্বাহ্ দ্বারা রোগীর রোগ চিকিৎসা করো। কেননা, সাদাক্বাহ্ রোগ এবং বালা-মুসিবত দূর করে এবং আয়ু ও নেকী বৃদ্ধি করে’[২৩] এবং হারিসাহ্ ইবনু নু‘মান (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বর্ণনা করেন, রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘মিসকীনকে নিজ হাতে দেয়া খারাপ মৃত্যু হতে রক্ষা করে।’[২৪]
আত্মীয়কে সাদাক্বাহ্ করার সওয়াব অনেক। করোনার এ দুর্যোগে নিজের গরীব আত্মীয়দের দানের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ। কেননা সালমান ইবনু ‘আমির (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘সাধারণ অভাবীকে সাদাক্বাহ্ করা দ্বারা শুধু সাদাক্বার সওয়াব পাওয়া যায়, আর আত্মীয়-স্বজনকে সাদাক্বাহ্ করা দ্বারা দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যায়- সাদাক্বার সওয়াব ও আত্মীয়তা সুরক্ষার সওয়াব।’[২৫]
এভাবে ইবনু মাস‘ঊদ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী কারীম (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : ‘যখন কোনো মুসলমান সওয়াবের নিয়তে তার আল-আওলাদের প্রয়োজনে ব্যয় করে, তখন তা (মহান আল্লাহর নিকট) সাদাক্বাহ্ হিসাবে গণ্য হয়।’[২৬]
রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন- সাওবান (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘মানুষের ব্যয়কৃত দীনারের মধ্যে সর্বোত্তম দীনার হলো তা, যা সে তার পরিবারের প্রয়োজনে ব্যয় করে, আর জিহাদের উদ্দেশ্যে রক্ষিত পশুর জন্যে ব্যয় করে এবং জিহাদরত তার সঙ্গীদের জন্যে ব্যয় করে।’[২৭]
নিজের পরিবারের পাশাপাশি আত্মীয়কে দানে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ।
জাবির (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন : ‘কোনো পুরুষ নিজের উপর, নিজের সন্তান-সন্তুতির উপর, নিজ পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনের উপর যা ব্যয় করে সেসব তার জন্য সাদাক্বাহ্।’[২৮]
যে যেখানে আছি, যার যা আছে সাধ্যমতো অসহায় প্রতিবেশীর দিকে সাহায্যের হাত বাড়ানো দরকার। অল্প হোক, বেশী হোক। ইচ্ছা ও পরিশুদ্ধ আন্তরিকতাই গুরুত্বপূর্ণ ও মহান আল্লাহর দরবারে কবুলের অন্যতম শর্ত। কেননা কোনো সাদাক্বাহ্ উত্তম তা বর্ণনা করতে গিয়ে আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন, তিনি রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আরজ করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! কোনো সাদাক্বাহ্ উত্তম? তিনি বললেন, সে সাদাক্বাহ্ উৎকৃষ্টতম সাদাক্বাহ্, যা গরীব ব্যক্তি আপন উপার্জন থেকে করে। আর প্রথমে তাদের উপর ব্যয় করে সে যাদের জিম্মাদার (অর্থাৎ- আপন স্ত্রী ও সন্তানাদির উপর)।[২৯]
এছাড়াও দানের গুরুত্ব ও কোন অবস্থার দান উত্তমএ সম্পর্কে রাসূলের আরো অনেক নির্দেশনা রয়েছে।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নাবী! কোনো অবস্থায় দান ফলাফলের দিক দিয়ে সর্বোত্তম? রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার সুস্থ ও উপার্জনক্ষম অবস্থার দান। যখন তোমার দরিদ্র হওয়ারও ভয় থাকে এবং ধনী হওয়ারও আশা থাকে। তুমি নিয়তই দান-খয়রাত করতে থাকবে। এমনকি তোমার প্রাণ গ্রীবাদেশে পৌঁছা পর্যন্ত বলতে থাকবে অমুকের জন্যে এটা, অমুকের জন্যে এটা; আর তোমার বিশ্বাস আছে যে, তা পৌঁছান হবে।[৩০]
এ বিপদেও যারা সাধ্যমতো সহযোগিতার হাত বাড়াবে না তাদের উদ্দেশ্যে শুধু এটুকু বলতে চাই, আসলে দাতা ও কৃপণ ব্যক্তি সম্পর্কে হাদীসে অনেক বক্তব্য এসেছে। আপনি ভাবলে অবাক হবেন। যেমন-
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘যখনই মহান আল্লাহর বান্দারা প্রত্যুষে শয্যা ত্যাগ করে, তখনই দু’জন ফেরেশ্তা অবতীর্ণ হন। তন্মধ্যে একজন বলতে থাকেন, হে আল্লাহ! তুমি দাতা ব্যক্তিকে প্রতিদান দাও। আর অন্যজন বলতে থাকেন, হে আল্লাহ! তুমি কৃপণ ব্যক্তিকে লোকসান দাও।’[৩১]
অন্য হাদীসে আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘দাতা ব্যক্তি মহান আল্লাহরও নিকটে, জান্নাতেরও নিকটে, মানুষেরও নিকটে; অথচ জাহান্নাম থেকে দূরে। পক্ষান্তরে কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা থেকেও দূরে, জান্নাত থেকেও দূরে, মানুষ থেকেও দূরে; অথচ জাহান্নামের নিকটে। নিশ্চয়ই মূর্খ দাতা, কৃপণ ‘ইবাদতকারীর চেয়ে মহান আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়।’[৩২]
করোনা মহামারির এ সময়ে গরীব-দুঃস্থদের মাঝে আর্থিক ও খাদ্য সামগ্রি দেওয়া অধিক প্রয়োজন ও যুক্তিযুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
“তোমরা কখনও নেকীর মধ্যে পূর্ণতা হাসিল করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা নিজেদের প্রিয় জিনিস হতে কিছু খরচ না করবে।”[৩৩]
তাই আসুন! সাধ্যমতো প্রাণ খুলে হাত প্রশস্থ করে গভীর মমতা দিয়ে নিরন্নের পাশে দাঁড়াই। এ দানেই পরকালে নাজাতের যারিয়াহ হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বিশ্বকে, আমাদের দেশকে এবং আমাদের সকলকে করোনার এ ভয়াবহ মহাবিপদ থেকে রক্ষা করুন এবং করোনা মহামারির ক্রান্তিকালে বেশী থেকে বেশী দান-সাদাক্বাহ্ করার তৌফিক দিন -আমিন।
মহানাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) দান-সাদাক্বাহ্ করার জন্য অনেক হাদীসে বিভিন্নভাবে উম্মাতদের উৎসাহ দিয়েছেন। কারণ দান-সাদাক্বাহ্ করলে মহান আল্লাহর রোষ প্রশমিত হয়, মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়, গুনাহ মোচন হয়, আল্লাহ তা'আলা জান-মাল হেফাযত করেন, ব্যক্তির বিপদ-আপদ দূর হয়, দান-সাদাক্বায় সওয়াব বৃদ্ধি হয়, সম্পদের বরকত হয়, জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ হয়, মৃত্যুর পরেও দান-সাদাক্বার সওয়াব জারী থাকে এবং আল্লাহ তা‘আলা পরকালে আরশের ছায়ায় স্থান দেন ইত্যাদি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দানের মাধ্যমে মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ ঘটে; যিনি আমাদের অর্থ সম্পদ অর্জন ও ভোগের সুযোগ দিয়েছেন। তাঁর সুযোগ প্রদানের কারণেই অনেকেই আমরা স্বাবলম্বী বা অবস্থা সম্পন্ন; এটা মহান আল্লাহর একান্ত মেহেরবানী ও দয়া। এমনও তো হতে পারত আমাদের তিনি ভিন্ন পরিবেশে দুনিয়ায় আগমন ঘটাতে পারতেন; বরং তিনি তা না করে অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থায় আমাদের অনেক বৈষয়িক সুযোগ-সুবিধা উপভোগের সুযোগ দিয়েছেন। তাই তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ ঘটবে তার দেওয়া সুযোগের উপর ভিত্তি করে অর্জিত সম্পদ যখন মহান আল্লাহর রাস্তায় সাধারণ অনাহারি লোকদের মাঝে বিতরণ করা হবে। আমরা ধর্মীয় চেতনা থেকে এতোটাই গাফিল যে, এত কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনার পরও মানুষ অজ্ঞতার কারণে দান-সাদাক্বাহ্ থেকে নিজেদের বিরত রাখে। অথচ ঐচ্ছিক সাদাক্বাহ্ প্রদানে সওয়াবেরই অংশ বেশি, যদিও অধিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও দান না করাতে গুনাহ আছে। অর্থাৎ- সামগ্রিকভাবে এটাই বলা যেতে পারে যে, বাধ্যতামূলক সাদাক্বাহ্ (যাকাত)-এর ব্যাপারে গুনাহমুক্তি, সম্পদের প্রবিত্রতা অর্জন এবং ঐচ্ছিক সাদাক্বার ব্যাপারে সওয়াব অর্জনের প্রাধান্যই বেশি।
আজকের করোনা ভাইরাসের কারণে সারা পৃথিবীর গতি স্থির হয়ে মানুষ কোয়ারাইন্টাইনে নিজ নিজ বাড়ী-ঘরে জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত। সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষ চরম অর্থসঙ্কটে, তীব্র দারিদ্রতার কষাঘাতে চরম দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছে। নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি যারা অন্যের কাছে অভাবে হাত পাততে পারে না, তাদের অবস্থা আরো করুণ। দিনমজুরে ‘কাজ আছে, খাবার আছে; কাজ নেই, খাবার নেই’ -এ শ্রেণির মানুষের কোয়ারাইন্টানে বন্দি জীবনে আয়-রোজগারের চাকা একবারেই বন্ধ। কি এক ভয়াবহ দুর্বিষহ জীবন-যাপন তারা করে যাচ্ছে। এর চেয়ে ভয়াবহ খবর হলো, ব্রাকের গবেষণা মতে, দেশে এখন ১৪% মানুষের ঘরে কোনো খাবার নেই। সরকার কিছু ত্রাণের ব্যবস্থা করেছে। কিছু কিছু জায়গায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও ব্যক্তি উদ্যোগে আলোকিত কিছু মানুষ প্রতিবেশী গরীবদের সহযোগিতা করছে। প্রয়োজনের তুলনায় এ সংখ্যা ও আয়োজন যথেষ্ট অপ্রতুল; তাই প্রয়োজন স্বাবলম্বি ও ধনীদের এ কঠিন সময়ে অসহায় আত্মীয়-স্বজন ও অভাবী প্রতিবেশীদের পাশে সাহায্যের হাত বাড়ানো ও অসহায়দের সাহায্যার্থে সামাজিকভাবে গঠনমূলক কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা।
দুর্দিনে মানুষের প্রতি আন্তরিকতার সাথে প্রদত্ত এই দান-সাদাক্বাহ্ ক্বিয়ামতের কঠিন সময়ে নাজাতের উসিলাহ হবে। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
“হে ঈমানদারগণ! আমার দেওয়া রিয্কের কিয়াদাংশ দান করে দাও এমন এক মহা সংকটপূর্ণ দিন আসার পূর্বে যে দিন না কোনো বেচা-কেনা চলবে, না কোনো বন্ধুত্ব কাজে আসবে এবং আল্লাহর অনুমতি ভিন্ন না কোন সুপারিশের সুযোগ হবে।”[১]
দানের ব্যাপারে উৎসাহিত করতে গিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
“এবং তোমরা যারা আল্লাহর রাস্তায় দান করবে, তার প্রতিদান তোমাদেরকে পুরাপুরি দেয়া হবে। আর তোমাদের প্রতি কোনো প্রকার যুল্ম করা হবে না।”[২]
দান করলে ব্যক্তির সম্পদ অনেকগুণ আল্লাহ তা‘আলা বাড়িয়ে দেন। যেমন- তিনি বলেন-
“আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করে দেন এবং সাদাক্বাহ্কে বর্ধিত করে দেন।”[২]
এ উক্তি আখিরাতের দিক দিয়ে তো সম্পূর্ণ পরিষ্কার; সত্য উপলব্ধির সামান্য চেষ্টা করলে দুনিয়ার দিক দিয়েও সুস্পষ্ট। কারণ সুদ ও জুয়ার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়েই অজস্র পুঁজির মালিক কোটিপতি দেখতে দেখতে দেউলিয়া ও ফকিরে পরিণত হয়। মানুষকে দান করা অসাধারণ এক অনবদ্য পবিত্র কাজ। এ জন্য দানের মহিমা বর্ণনা করতে গিয়ে দয়াময় আল্লাহ তা'আলা অসাধারণ উপমা উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন :
“যারা আপন ধন-সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় দান করে তাদের দৃষ্টান্ত হলো ঐ দানার মতো, যেখান হতে এরূপ সাতটি ছড়া বের হলো যার প্রত্যেকটিতে একশত করে দানা রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।”[৩]
এ আয়াতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অভাবগ্রস্ত, দীন-দুঃখীদের জন্য ব্যয় করার শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে। এতে করে সম্পদের প্রবৃদ্ধি বাড়াবেন তিনি সীমাহীনভাবে।
এভাবে দান-সাদাক্বাহ্ নিয়ে আরো বলা হয়েছে- যে ক্বিয়ামতের বিপদে দানদাতাকে চিন্তামুক্ত করবে। তবে শর্ত হলো দান করে খোঁটা বা কটু কথা বলা যাবে না। আজ আমরা দেখি কোয়ারান্টাইনে আবদ্ধ গরিব মানুষকে ত্রাণের প্যাকেট দেওয়ার সময় ভিডিও করছে, সেল্ফি উঠাচ্ছে, দানে মাল গ্রহণের সময় ক্যামেরার দিকে তাকানো হয়নি এ জন্য ধমকাচ্ছে। এসব সত্যিকারভাবে সাদাক্বাহ্ বা দানের আদাব বা শিষ্টাচার নয়। ইসলামে অনেক ভদ্রতার সাথে দান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
“যারা তাদের মাল আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, অতঃপর দান গ্রহিতার প্রতি কোন প্রকার খোঁটাও দেয় না অথবা কটু কথাও বলে না, স্বীয় প্রতিপালকের নিকট তাদের জন্য প্রতিদান রয়েছে। ক্বিয়ামতের দিন তাদের কোন ভয় নেই এবং কোন প্রকার চিন্তাযুক্তও হবে না।”[৪]
দান হলো পরোপকারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নির্ভেজালভাবে দান করার মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহকে খুশি করার মাধ্যমেই ব্যক্তির তাক্বওয়ার প্রকাশ ঘটে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
“এবং তোমরা স্বীয় প্রতিপালকের তরফ হতে ক্ষমাপ্রাপ্তির দিকে এবং এমন জান্নাতের দিকে দৌড়াতে থাকো, যার প্রশস্ততা হবে সাত আসমান ও যমীনের সমতুল্য, যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে এমন সব মুত্তাকীনদের জন্য যারা সুখ-দুঃখ উভয় হালতেই আল্লাহর রাস্তায় দান-খয়রাত করে থাকে এবং রাগ আসলে তাা হজম করে লয়; মানুষের অপরাধ ক্ষমা করে দেয়। বস্তুতঃ আল্লাহ পরোপকারী লোকদের ভালবাসেন।”[৫]
যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে স্বীয় অর্থ সম্পদ ব্যয় করতে অভ্যস্ত, তাদের ব্যাপারে এখানে বলা হয়েছে। তারা স্বচ্ছল হোক কিংবা অভাব-অনটনে থাকুক, সর্বাবস্থায় তারা সাধ্যানুযায়ী মানুষের জন্য ব্যয় করে থাকে। বেশী হলে বেশী এবং কম হলে কমই ব্যয় করে। এতে এক দিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, দরিদ্র ও নিঃস্ব ব্যক্তিও মহান আল্লাহর পথে ব্যয় করতে নিজেকে মুক্ত মনে করবে না এবং সৌভাগ্য থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখবে না। এর বরকতে আল্লাহ তা‘আলা আর্থিক সচ্ছলতা ও স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন। অসহায়দের দানের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃত অপরাধের জন্য ক্ষমার সৌভাগ্যও হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
“শয়ত্বান তোমাদেরকে অভাব-অনটনের ভীতি প্রদর্শন করে এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়, আর আল্লাহ দান করার বিনিময়ে ক্ষমা করা ও সম্পদ বৃদ্ধি করার ওয়া‘দা করেন। বস্তুতঃ আল্লাহপাক সমৃদ্ধিশালী, সর্বজ্ঞানী।”[৬]
যখন কারো মনে এ ধারণা জন্মে যে, দান-সাদাক্বাহ্ করলে ফকির হয়ে যাবে, বিশেষতঃ আল্লাহ তা‘আলার তাক্বীদ শুনেও স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করার সাহস না হয় এবং মহান আল্লাহর ওয়া‘দা থেকে মুখ ফিরিয়ে শয়ত্বানি ওয়া‘দার দিকে ঝুঁকে পড়ে, তখন বুঝতে হবে যে, এ প্ররোচনা শয়ত্বানের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে যদি মনে ধারণা জন্মে যে, দান-সাদাক্বাহ্ করলে গুনাহ মাফ হবে, সম্পদ বৃদ্ধি পাবে এবং বরকত হবে, তখন মনে করতে হবে এ বিষয়টি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে। এমতাবস্থায় মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিৎ। মহান আল্লাহর ভাণ্ডারে কোনো কিছুর অভাব নেই। এভাবে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন-
“যারা স্বীয় ধন-সম্পদ রাত্রে এবং দিনে, গোপনে এবং প্রকাশ্যে দান করে থাকে তাদের প্রতিদান আপন প্রতিপালকের নিকট সুরক্ষিত থাকবে, আর তারা ভয়শূন্য ও চিন্তা মুক্ত থাকবে।”[৭]
তবে শর্ত হলো খাঁটি নিয়্যাতে দান করতে হবে। নাম-যশের নিয়্যাত থাকলে চলবে না। প্রকাশ্য দান করার কোনো প্রয়োজন দেখা না দেওয়া পর্যন্তই গোপনে দান করার শ্রেষ্ঠত্ব সীমাবদ্ধ। যেখানে এরূপ প্রয়োজন দেখা দেয়, সেখানে প্রকাশ্যে দান করাই শ্রেয়।[৮]
দান-সাদাক্বার ফাযায়েল সীমাহীন। দান-সাদাক্বাহ্ বিপদ-মুসিবতকে দূরিভূত করে গুনাহসমূহ মাফ করে। প্রিয় নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন-
‘সাদাক্বাহ্ দেওয়ার ব্যাপারে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করো। কেননা মুসীবত সাদাক্বাহ্কে ফেড়ে অগ্রসর হতে পারে না।’[৯]
দানের মাধ্যমে ব্যক্তির সম্মান বৃদ্ধি পায়। যেমন- আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) থেকে বর্ণিত।
রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘সাদাক্বাহ্ সম্পদকে হ্রাস করে না, ক্ষমা করা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা বান্দার ইজ্জত বৃদ্ধি করেন; আর কেউ মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে তাওয়াজ্জু বা বিনয় অবলম্বন করলে আল্লাহ তা‘আলা তার মর্যাদাকে উঁচু করে দেন।’[১০]
দান পরকালে আত্ম রক্ষার উপকরণ হবে ও এ দানের প্রক্রিয়ায় অব্যস্থ ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা নিজেও দান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন- হে আদম সন্তান! তুমি দান করো, আমি তোমাকে দান করব।’[১১]
আদি ইবনু হাতিম (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন যে, আমি রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি- তোমাদের মধ্যে যার পক্ষে সম্ভব একটা খেজুরের টুকরা দান করে হলেও জাহান্নাম থেকে আত্মরক্ষা করুক।[১২]
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে সালাত, সাওমের পাশাপাশি অসহায়দের প্রতি মমতা ও অন্যের দুঃখে কাতর হওয়াও ঈমানের একটি অনুসঙ্গ। এর মাধ্যমে গুনাহ মুক্ত হওয়া যায়। যেমন-
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘নামায, রোযা, সাদাক্বাহ্ ও সৎ কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ (এ সব ‘আমল) মানুষের পরিবার, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি ও প্রতিবেশী সংক্রান্ত গুনাহসমূহ মোচন করে দেয়।’[১৩]
তিনি আরো বলেন- [আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন,] যে, রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘যে ব্যক্তি একটা খেজুর বরাবর সাদাক্বাহ্ করবে পবিত্র উপার্জন থেকে- আর আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র উপার্জন ব্যতীত কবুল করেন না, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার সাদাক্বাহ্কে কবুল করবেন। অনন্তর সেটা বর্দ্ধিত করবেন, যেমন- তোমাদের কেউ তার অশ্বশাবককে লালন-পালন করে বড় বানাতে থাকে (এভাবে আল্লাহ তা‘আলা তার সাদাক্বাহ্কে বৃদ্ধি করতে থাকেন) এমনকি তা পাহাড় সমান হয়ে যায়।’[১৪]
অভাবীদের দানের ক্ষেত্রে নারীদের ও সংযুক্ত করা হয়েছে। তাইতো আমরা দেখি- আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন যে, নাবী কারীম (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতরের দিন বের হয়ে মহিলাদের কাছে গেলেন এবং (তাদের লক্ষ্য করে) বললেন, হে মহিলা সমাজ! তোমরা সাদাক্বাহ্ করো। কেননা আমাকে দেখান হয়েছে যে, জাহান্নামের সিংহভাগ হলো নারী। মহিলাগণ জিজ্ঞাসা করল, তার কী কারণ ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি বলেন, তার কারণ হলো, তোমরা বেশী বেশী অভিশাপ দাও এবং স্বামীর না-শোকরী করো।[১৫]
আমরা যারা বিভিন্নভাবে অর্থ সম্পদ অর্জন করেছি, নিজেরাই জানি কতোটা বৈধভাবে আর কি পরিমাণ অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছি। আজকের কোয়ারাইন্টাইনের এ দিনগুলোতে নীরবে আত্মসমালোচনা করতে পারি নীরবে, ঠাণ্ডা মাথায়। প্রত্যেকটি বিষয়ই মহান আল্লাহর কাছে পরকালে জবাবদিহী করা লাগবে। সুতরাং এ দুর্যোগে নিকট আত্মীয় ও গরীব প্রতিবেশীদের দানের মাধ্যমে কিছুটা পাপমুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এত করে আমাদের মৃত্যু অনেক সহজ হতে পারে। যেমন-
আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন যে, নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন- দান আল্লাহ তা‘আলার রোষ প্রশমিত করে এবং খারাপ মৃত্যু রোধ করে।’[১৬]
শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে মৃত্যুর পরও সাওয়াব জারি থাকবে কবরে। আর তাইতো আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন যে, নাবী কারীম (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘যখন মানুষ মারা যায়, তার সমস্ত ‘আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি ‘আমল (এর সওয়ব) বন্ধ হয় না। তা হলো- সাদাক্বায়ে জারিয়া, ‘ইল্ম -যা দ্বারা অন্যরা উপকৃত হয় এবং তার নেককার সন্তান যে তার জন্য দু‘আ করে।’[১৭]
এ দান সাদাক্বাই পরকালে ছায়া হবে। মারসাদ ইবনু ‘আব্দুল্লাহ (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন, ‘আমাকে নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর জনৈক সাহাবী বলেছেন যে, তিনি নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছেন, ক্বিয়ামতের দিন মু’মিনের ছায়া হবে তার দান-সাদাক্বা।’[১৮]
ভাবুন তো, অসহায় লোক যাদের কোনো কাজ নেই, কোনো উপার্জনের সুযোগ নেই, ঘরে বন্ধি ঐ সব খেটে-খাওয়া মানুষের পরিবারের সমস্যদের দৈনন্দিনের খাবারের চাহিদা কিভাবে মিটাবে? মানুষ সামাজিক জীব। একা কখনো চলতে পারে না। মানবিক কারণে তাই সকল অবস্থা সম্পন্ন লোকদের সাহায্যের হাত বাড়ানো উচিৎ।
আবূ সা‘ঈদ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘যে কোনো মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানকে বস্ত্র দান করবে, আল্লাহপাক তাকে জান্নাতের সবুজ কাপড় পরিধান করাবেন। যে কোনো মুসলমান অন্য কোনো ক্ষুধার্ত মুসলমানকে আহার করাবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতের ফল থেকে আহার করাবেন। যে কোনো মুসলমান অন্য কোনো পিপাসার্ত মুসলমানকে পানি পান করাবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ‘রহীকে মাখতুম’ থেকে পান করাবেন।’[১৯]
শুধু তাই নয় ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন যে, আমি নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, ‘যে কোন মুসলমান অন্য কোন মুসলমানকে কাপড় পরিধান করাবে, সে আল্লাহর হেফাজতে থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত সেই কাপড়ের একটি টুকরাও তার শরীরে থাকবে।’[২০]
দান করলে ন্যাচারালী নিজেরই মনোজাগতিক প্রশান্তি তৈরী হয়, স্বচ্ছন্দবোদের হিমেল হাওয়া বয়ে যায় দেহ মনে। সুখে থাকার এক স্বর্গীয় অনুভূতি তৈরী হয়। মহান আল্লাহর দানের ভাণ্ডারও উন্মুক্ত হয়ে যায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য। এটাই জান্নত লাভের মাধ্যম।
আসমাহ্ বিনতু আবূ বক্র (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) হতে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : ‘(হে আসমাহ্!) তুমি দান করতে থাকবে এবং হিসাব করবে না। অন্যথায় মহান আল্লাহও তোমাকে দেয়ার ব্যাপারে হিসাব করবেন। আর (সম্পদ) ধরে রাখবে না, অন্যথায় আল্লাহ তা‘আলা তোমার ব্যাপারে ধরে রাখবেন। তোমার শক্তি অনুসারে সামান্য হলেও দান করবে।’[২১]
আর ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : ‘মহান আল্লাহর ‘ইবাদত করো, (দরিদ্রকে) খাদ্য দান করো এবং উচ্চ শব্দে সালাম করো। নিরাপত্তা সহকারে জান্নাতে প্রবেশ করো।’[২২]
করোনা ভাইরাসের এ মহামারিতে আমরা সকলে আজ আতঙ্কিত। যে কোনো সময়ে নিজেরা আক্রান্ত হতে পারি। দান-সাদাক্বার মাধ্যমেই বিপদ দূরিভূত হওয়ার কথা হাদীসে ঘোষিত হয়েছে। একটি হাদীসে আছে-
রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘তোমরা সাদাক্বাহ্ করো এবং সাদাক্বাহ্ দ্বারা রোগীর রোগ চিকিৎসা করো। কেননা, সাদাক্বাহ্ রোগ এবং বালা-মুসিবত দূর করে এবং আয়ু ও নেকী বৃদ্ধি করে’[২৩] এবং হারিসাহ্ ইবনু নু‘মান (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বর্ণনা করেন, রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘মিসকীনকে নিজ হাতে দেয়া খারাপ মৃত্যু হতে রক্ষা করে।’[২৪]
আত্মীয়কে সাদাক্বাহ্ করার সওয়াব অনেক। করোনার এ দুর্যোগে নিজের গরীব আত্মীয়দের দানের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ। কেননা সালমান ইবনু ‘আমির (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘সাধারণ অভাবীকে সাদাক্বাহ্ করা দ্বারা শুধু সাদাক্বার সওয়াব পাওয়া যায়, আর আত্মীয়-স্বজনকে সাদাক্বাহ্ করা দ্বারা দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যায়- সাদাক্বার সওয়াব ও আত্মীয়তা সুরক্ষার সওয়াব।’[২৫]
এভাবে ইবনু মাস‘ঊদ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী কারীম (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : ‘যখন কোনো মুসলমান সওয়াবের নিয়তে তার আল-আওলাদের প্রয়োজনে ব্যয় করে, তখন তা (মহান আল্লাহর নিকট) সাদাক্বাহ্ হিসাবে গণ্য হয়।’[২৬]
রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেছেন- সাওবান (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘মানুষের ব্যয়কৃত দীনারের মধ্যে সর্বোত্তম দীনার হলো তা, যা সে তার পরিবারের প্রয়োজনে ব্যয় করে, আর জিহাদের উদ্দেশ্যে রক্ষিত পশুর জন্যে ব্যয় করে এবং জিহাদরত তার সঙ্গীদের জন্যে ব্যয় করে।’[২৭]
নিজের পরিবারের পাশাপাশি আত্মীয়কে দানে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিৎ।
জাবির (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) থেকে বর্ণিত। নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন : ‘কোনো পুরুষ নিজের উপর, নিজের সন্তান-সন্তুতির উপর, নিজ পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনের উপর যা ব্যয় করে সেসব তার জন্য সাদাক্বাহ্।’[২৮]
যে যেখানে আছি, যার যা আছে সাধ্যমতো অসহায় প্রতিবেশীর দিকে সাহায্যের হাত বাড়ানো দরকার। অল্প হোক, বেশী হোক। ইচ্ছা ও পরিশুদ্ধ আন্তরিকতাই গুরুত্বপূর্ণ ও মহান আল্লাহর দরবারে কবুলের অন্যতম শর্ত। কেননা কোনো সাদাক্বাহ্ উত্তম তা বর্ণনা করতে গিয়ে আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন, তিনি রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আরজ করেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! কোনো সাদাক্বাহ্ উত্তম? তিনি বললেন, সে সাদাক্বাহ্ উৎকৃষ্টতম সাদাক্বাহ্, যা গরীব ব্যক্তি আপন উপার্জন থেকে করে। আর প্রথমে তাদের উপর ব্যয় করে সে যাদের জিম্মাদার (অর্থাৎ- আপন স্ত্রী ও সন্তানাদির উপর)।[২৯]
এছাড়াও দানের গুরুত্ব ও কোন অবস্থার দান উত্তমএ সম্পর্কে রাসূলের আরো অনেক নির্দেশনা রয়েছে।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর নাবী! কোনো অবস্থায় দান ফলাফলের দিক দিয়ে সর্বোত্তম? রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমার সুস্থ ও উপার্জনক্ষম অবস্থার দান। যখন তোমার দরিদ্র হওয়ারও ভয় থাকে এবং ধনী হওয়ারও আশা থাকে। তুমি নিয়তই দান-খয়রাত করতে থাকবে। এমনকি তোমার প্রাণ গ্রীবাদেশে পৌঁছা পর্যন্ত বলতে থাকবে অমুকের জন্যে এটা, অমুকের জন্যে এটা; আর তোমার বিশ্বাস আছে যে, তা পৌঁছান হবে।[৩০]
এ বিপদেও যারা সাধ্যমতো সহযোগিতার হাত বাড়াবে না তাদের উদ্দেশ্যে শুধু এটুকু বলতে চাই, আসলে দাতা ও কৃপণ ব্যক্তি সম্পর্কে হাদীসে অনেক বক্তব্য এসেছে। আপনি ভাবলে অবাক হবেন। যেমন-
আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘যখনই মহান আল্লাহর বান্দারা প্রত্যুষে শয্যা ত্যাগ করে, তখনই দু’জন ফেরেশ্তা অবতীর্ণ হন। তন্মধ্যে একজন বলতে থাকেন, হে আল্লাহ! তুমি দাতা ব্যক্তিকে প্রতিদান দাও। আর অন্যজন বলতে থাকেন, হে আল্লাহ! তুমি কৃপণ ব্যক্তিকে লোকসান দাও।’[৩১]
অন্য হাদীসে আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্ হু) বলেন যে, রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বলেন- ‘দাতা ব্যক্তি মহান আল্লাহরও নিকটে, জান্নাতেরও নিকটে, মানুষেরও নিকটে; অথচ জাহান্নাম থেকে দূরে। পক্ষান্তরে কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলা থেকেও দূরে, জান্নাত থেকেও দূরে, মানুষ থেকেও দূরে; অথচ জাহান্নামের নিকটে। নিশ্চয়ই মূর্খ দাতা, কৃপণ ‘ইবাদতকারীর চেয়ে মহান আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়।’[৩২]
করোনা মহামারির এ সময়ে গরীব-দুঃস্থদের মাঝে আর্থিক ও খাদ্য সামগ্রি দেওয়া অধিক প্রয়োজন ও যুক্তিযুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
“তোমরা কখনও নেকীর মধ্যে পূর্ণতা হাসিল করতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা নিজেদের প্রিয় জিনিস হতে কিছু খরচ না করবে।”[৩৩]
তাই আসুন! সাধ্যমতো প্রাণ খুলে হাত প্রশস্থ করে গভীর মমতা দিয়ে নিরন্নের পাশে দাঁড়াই। এ দানেই পরকালে নাজাতের যারিয়াহ হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বিশ্বকে, আমাদের দেশকে এবং আমাদের সকলকে করোনার এ ভয়াবহ মহাবিপদ থেকে রক্ষা করুন এবং করোনা মহামারির ক্রান্তিকালে বেশী থেকে বেশী দান-সাদাক্বাহ্ করার তৌফিক দিন -আমিন।
[১] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৫৪।
[২] সূরা আল আনফাল ৮ : ৬০।
[২] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৭৬।
[৩] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৬১।
[৪] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৬২।
[৫] সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৩৩-১৩৪।
[৬] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৬৮।
[৭] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৭৪।
[৮] মারিফুল কুরআন।
[৯] মিশকাত।
[১০] সহীহ মুসলিম, সুনান আত্ তিরমিযী।
[১১] সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম।
[১২] সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম।
[১৩] সহীহুল বুখারী।
[১৪] সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম।
[১৫] সহীহুল বুখারী।
[১৬] সুনান আত্ তিরমিযী।
[১৭] সহীহ মুসলিম, সুনান আত্ তিরমিযী।
[১৮] মুসনাদে আহমাদ, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্।
[১৯] সুনান আবূ দাঊদ।
[২০] সুনান আত্ তিরমিযী।
[২১] সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম।
[২২] সুনান আত্ তিরমিযী, সুনান ইবনু মাজাহ্।
[২৩] বায়হাক্বী।
[২৪] তাবারানী, বায়হাক্বী, জামে সগীর।
[২৫] সুনান আত্ তিরমিযী, মুসনাদে আহমাদ।
[২৬] সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম।
[২৭] সহীহ মুসলিম।
[২৮] তাবরানী, মাআরিফুল হাদীস।
[২৯] সুনান আবূ দাঊদ, মাআরিফুল হাদীস।
[৩০] সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম।
[৩১] সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম।
[৩২] সুনান আত্ তিরমিযী।
[৩৩] সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৯২।
[২] সূরা আল আনফাল ৮ : ৬০।
[২] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৭৬।
[৩] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৬১।
[৪] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৬২।
[৫] সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৩৩-১৩৪।
[৬] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৬৮।
[৭] সূরা আল বাক্বারাহ্ ২ : ২৭৪।
[৮] মারিফুল কুরআন।
[৯] মিশকাত।
[১০] সহীহ মুসলিম, সুনান আত্ তিরমিযী।
[১১] সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম।
[১২] সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম।
[১৩] সহীহুল বুখারী।
[১৪] সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম।
[১৫] সহীহুল বুখারী।
[১৬] সুনান আত্ তিরমিযী।
[১৭] সহীহ মুসলিম, সুনান আত্ তিরমিযী।
[১৮] মুসনাদে আহমাদ, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্।
[১৯] সুনান আবূ দাঊদ।
[২০] সুনান আত্ তিরমিযী।
[২১] সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম।
[২২] সুনান আত্ তিরমিযী, সুনান ইবনু মাজাহ্।
[২৩] বায়হাক্বী।
[২৪] তাবারানী, বায়হাক্বী, জামে সগীর।
[২৫] সুনান আত্ তিরমিযী, মুসনাদে আহমাদ।
[২৬] সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম।
[২৭] সহীহ মুসলিম।
[২৮] তাবরানী, মাআরিফুল হাদীস।
[২৯] সুনান আবূ দাঊদ, মাআরিফুল হাদীস।
[৩০] সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম।
[৩১] সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম।
[৩২] সুনান আত্ তিরমিযী।
[৩৩] সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৯২।
ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45
সূর্যাস্ত : 5:11:51
আপনার মন্তব্য1