আল কুরআনুল হাকীম
দা‘ওয়াতের পথে সবরের ফলে জান্নাতের অমৃত সুধা
শাইখ মুহাম্মাদ হারুন হুসাইন
﴿إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ﴾
সরল অর্থানুবাদ : “আমি তোমাকে আল-কাউসার দান করেছি। কাজেই তুমি তোমার রবের জন্য সালাত আদায় করো এবং কুরবানী করো। নিশ্চয়ই তোমার শত্রুই নির্বংশ।”[১]
বিশেষ বিশেষ পরিভাষা :
الْكَوْثَرَ ‘আল-কাওসার’ : জান্নাতের একটি নদী, যা শুধু মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কেই প্রদান করা হবে।
وَانْحَرْ ‘ওয়ান র্হা’ : আর তুমি তোমার রবের নামে কুরবানী করো। কুরবানী শুকরিয়া আদায়ের অন্যতম মাধ্যম।
شَانِئَكَ ‘শা-নিআকা’ : তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী।
الْأَبْتَرُ ‘আল্ আবতার’ : অতি লাঞ্চিত, লেজ কাটা। অর্থাৎ- যার শেষ পরিণাম অশুভ।
নামকরণ ও অবতরণকাল : প্রথম আয়াতে উল্লিখিত الْكَوْثَرَ শব্দের আলোকে এ সূরাটিকে সূরা আল-কাওসার বলা হয়। প্রখ্যাত সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস, ইবনু যুবায়ের ও মা ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হা) প্রমুখদের বর্ণনা মতে এ সূরাটি মক্কায় নাযিল হয়। তবে কেউ কেউ এটিকে মাদানী সূরাও বলেছেন।
দারসের বিষয়বস্তু : কট্টর জাতীয়তাবাদ, মূর্তি পূজা, পেশী শক্তির বলয়, চরম সামাজিক অবক্ষয়, মদ, জুয়া ও সুদভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থার মাঝে সঠিক দ্বীন প্রচার বড়ই কঠিন। এ ক্ষেত্রে ধৈর্য্যরে চরম পরীক্ষা দিতে হয়। আর সেই কাঙ্খিত সবর বা ধৈর্য মহান আল্লাহর উপর প্রবল বিশ্বাসী ছাড়া কারো পক্ষে সম্ভব না। আমরা জানি যে, দৃঢ় প্রত্যয় সংকল্পের অধিকারী পাঁচজন রাসূলের শ্রেষ্ঠতম হলেন আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। আরব মুশরিক কর্তৃক শত যাতনার পরও অসীম ধৈর্য সহকারে পূর্ণাঙ্গ নিষ্ঠার সাথে দা‘ওয়াত ও তাবলীগের কাজ আঞ্জাম দিয়ে যান। কোন প্রলোভন বা বঞ্চণা তাঁকে নিজ দায়িত্ব থেকে কিঞ্চিত পরিমাণ বিমুখ করতে পারেনি। এ সবরের ফলস্বরূপ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সান্তনা দেয়া হয় এবং আল-কাওসারনামী বিশেষ ঝর্ণার সু-সংবাদ দিয়ে যথাযথ পুরষ্কারে পুরস্কৃত করা হয়।
অবতরণের প্রেক্ষাপট : রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পুত্র আল-ক্বাসেম-এর যখন ওফাত হলো, তখন মুশরিক আল-‘আস ইবনু ওয়াইল ‘আস সাহমী তিরস্কার করে বলে উঠল : মুহাম্মাদ নির্বংশ। তখন আল্লাহ তা‘আলা এর জবাবে সূরাহ্ আল-কাওসার নাযিল করেন। এতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয় রাসূলকে সান্ত¦না দেন ও আল-কাওসার-এর সুসংবাদ দান করেন।
বিশেষ জ্ঞাতব্য : মহান আল্লাহর বাণী-
﴿فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ﴾
“কাজেই তুমি তোমার রবের জন্য সালাত আদায় করো এবং কুরবানী করো।”
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বিশেষ নি‘আমত আল-কাওসার দান করে তাঁকে তাঁর রবের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। আর তা হচ্ছে- শ্রেষ্ঠতম দু‘টি ‘ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। একটি সালাত এবং অপরটি কুরবানী। এ দু‘টির কোন একটিও কোন সৃষ্টির জন্য করা যাবে না; বরং এর একমাত্র হক্বদার আল্লাহ তা‘আলা। কাজেই কোন জীবিত বা মৃত ব্যক্তিকে ভক্তির সাজদাহ্ করা প্রকাশ্য র্শিক। ঠিক তেমনি কোন ঊরস মাহফিলে কোন প্রকার গরু, ছাগল, মুরগী ও উট-মহিষ যবেহ করা বিলকুল হারাম। এ ধরনের যবেহ করা পশু খাওয়াও হারাম। আর এর পরিণাম জাহান্নাম।[২]
মহান আল্লাহর বাণী :
﴿إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ﴾
“নিশ্চয়ই তোমার শত্রুই নির্বংশ।”
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সান্তনা দিয়ে বলেন : “যারা তোমাকে নির্বংশ বলছে, তারই প্রকৃত নির্বংশ।” তাদের নাম-গন্ধ দুনিয়াতে থাকবে না। কিন্তু তোমার নাম চিরদিন চিরভাস্বর হয়ে থাকবে। ক্বিয়ামত পর্যন্ত তোমার উম্মাতের সিলসিলা জারি থাকবে এবং তাঁরা অতি শ্রদ্ধাভরে তোমার নাম নিতে থাকবে।
সবর বা ধৈর্য : সবর আরবী শব্দ, অর্থ- আটকানো বা নিয়ন্ত্রণ করা। দা‘ওয়াত ও তাবলীগ-এর ক্ষেত্রে সবর হলো-পূর্ণাঙ্গ ইখলাসের সাথে অর্পিত আমানত যথাযথ আদায় করা। অর্থাৎ- দা‘ওয়াতের ন্যায় গুরুদায়িত্ব হতে কখনো বিরত কিংবা সে পথে বিচলিত না হওয়া। আর এ মহান কর্তব্য পালনকালে যে সব বিপদ-মুসীবত আসবে, তা হাসিমুখে মেনে নেয়া। কখনো এ পূণ্য কাজের নগদ ফল আশা না করা। দুনিয়াবী মসনদ বা প্রভাব-প্রতিপত্তি লাভের খেয়াল মন থেকে ঝেড়ে ফেলা।
আল কাওসার কি?
আরবীতে অধিক কল্যাণ বুঝাতে আল-কাওসার শব্দটি ব্যবহার করা হয়। সহীহ মুসলিম-এ বর্ণিত আছে,
রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কাওসার সম্বন্ধে জানো কি? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভাল জানেন। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : এটি একটি নহর। যার ওয়া‘দা আল্লাহ তা‘আলা আমাকে করেছেন। এতে অনেক কল্যাণ আছে। এটি একটি হাউজ, ক্বিয়ামতের মাঠে যার নিকট আমার উম্মাতকে পেশ করা হবে। এটি এমন এক নহর, যা স্বর্ণের প্রাচীর ঘেরা এবং স্রোতস্বিনীসমূহ ইয়াকূত দ্বারা নির্মিত। এর মাটি মিশক হতে অধিক সুগন্ধময়। এর পানি মধুর চেয়ে অধিক মিষ্টি এবং বরফের চেয়েও সাদা।
সূরাটির শিক্ষাসমূহ-
১. এ সূরাটিতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের মর্যাদার কথা উল্লেখ করেছেন।
২. আল-কাওসারের প্রমাণে যত হাদীস বর্ণিত হয়েছে, এ সূরাটি তার দৃঢ়তা প্রমাণ করছে।
৩. প্রতিটি কাজে ইখলাস জরুরী। বিশেষ করে সালাত ও কুরবানীর ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যক।
৪. এ সূরাটি যালিমের জন্য বদ্দু‘আ করা জায়িয প্রমাণ করে।
উপসংহার : দা‘ওয়াত ও তাবলীগ এমন এক চলমান প্রক্রিয়ার নাম, সাময়িক কষ্টকর হলেও যার ফল সুদূর প্রসারী এবং বহমান। দীন প্রচার করে দুনিয়াবী ফায়দা হাসিলের ভাবী ফল অত্যন্ত ভয়ানক। আর তা হলো জাহান্নাম। এতদ্সত্তেও দীনি দা‘ওয়াতি ভাইদের কিছু কিছু আচরণ রীতিমত আমাদেরকে ভাবিয়ে তোলে। অথচ আমাদের একমাত্র অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব মহানাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর নিষ্ঠাবান অনুসারী সাহাবায়ে কিরাম-এর রীতি যেনো উপেক্ষিত। ইখলাস, পরিশ্রম, ত্যাগ ও সবর যাদের ছিল নিত্য স্বভাব, তাদেরই উত্তরসূরী আজ অসহায় মিসকীন। হে আল্লাহ! আমাদেরকে হিদায়াত করো। তোমার পথে অবিচল থাকার তাওফীক্ব দাও! আর ক্বিয়ামতের দিন নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর শাফা‘আত ও তাঁর কাওসারনামীয় হাউজ হতে জান্নাতী সুধা পান নসীব করিও -আমীন। ###
সরল অর্থানুবাদ : “আমি তোমাকে আল-কাউসার দান করেছি। কাজেই তুমি তোমার রবের জন্য সালাত আদায় করো এবং কুরবানী করো। নিশ্চয়ই তোমার শত্রুই নির্বংশ।”[১]
বিশেষ বিশেষ পরিভাষা :
الْكَوْثَرَ ‘আল-কাওসার’ : জান্নাতের একটি নদী, যা শুধু মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কেই প্রদান করা হবে।
وَانْحَرْ ‘ওয়ান র্হা’ : আর তুমি তোমার রবের নামে কুরবানী করো। কুরবানী শুকরিয়া আদায়ের অন্যতম মাধ্যম।
شَانِئَكَ ‘শা-নিআকা’ : তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী।
الْأَبْتَرُ ‘আল্ আবতার’ : অতি লাঞ্চিত, লেজ কাটা। অর্থাৎ- যার শেষ পরিণাম অশুভ।
নামকরণ ও অবতরণকাল : প্রথম আয়াতে উল্লিখিত الْكَوْثَرَ শব্দের আলোকে এ সূরাটিকে সূরা আল-কাওসার বলা হয়। প্রখ্যাত সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস, ইবনু যুবায়ের ও মা ‘আয়িশাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হা) প্রমুখদের বর্ণনা মতে এ সূরাটি মক্কায় নাযিল হয়। তবে কেউ কেউ এটিকে মাদানী সূরাও বলেছেন।
দারসের বিষয়বস্তু : কট্টর জাতীয়তাবাদ, মূর্তি পূজা, পেশী শক্তির বলয়, চরম সামাজিক অবক্ষয়, মদ, জুয়া ও সুদভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থার মাঝে সঠিক দ্বীন প্রচার বড়ই কঠিন। এ ক্ষেত্রে ধৈর্য্যরে চরম পরীক্ষা দিতে হয়। আর সেই কাঙ্খিত সবর বা ধৈর্য মহান আল্লাহর উপর প্রবল বিশ্বাসী ছাড়া কারো পক্ষে সম্ভব না। আমরা জানি যে, দৃঢ় প্রত্যয় সংকল্পের অধিকারী পাঁচজন রাসূলের শ্রেষ্ঠতম হলেন আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। আরব মুশরিক কর্তৃক শত যাতনার পরও অসীম ধৈর্য সহকারে পূর্ণাঙ্গ নিষ্ঠার সাথে দা‘ওয়াত ও তাবলীগের কাজ আঞ্জাম দিয়ে যান। কোন প্রলোভন বা বঞ্চণা তাঁকে নিজ দায়িত্ব থেকে কিঞ্চিত পরিমাণ বিমুখ করতে পারেনি। এ সবরের ফলস্বরূপ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সান্তনা দেয়া হয় এবং আল-কাওসারনামী বিশেষ ঝর্ণার সু-সংবাদ দিয়ে যথাযথ পুরষ্কারে পুরস্কৃত করা হয়।
অবতরণের প্রেক্ষাপট : রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পুত্র আল-ক্বাসেম-এর যখন ওফাত হলো, তখন মুশরিক আল-‘আস ইবনু ওয়াইল ‘আস সাহমী তিরস্কার করে বলে উঠল : মুহাম্মাদ নির্বংশ। তখন আল্লাহ তা‘আলা এর জবাবে সূরাহ্ আল-কাওসার নাযিল করেন। এতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয় রাসূলকে সান্ত¦না দেন ও আল-কাওসার-এর সুসংবাদ দান করেন।
বিশেষ জ্ঞাতব্য : মহান আল্লাহর বাণী-
﴿فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ﴾
“কাজেই তুমি তোমার রবের জন্য সালাত আদায় করো এবং কুরবানী করো।”
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বিশেষ নি‘আমত আল-কাওসার দান করে তাঁকে তাঁর রবের প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার জন্য নির্দেশ দেন। আর তা হচ্ছে- শ্রেষ্ঠতম দু‘টি ‘ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। একটি সালাত এবং অপরটি কুরবানী। এ দু‘টির কোন একটিও কোন সৃষ্টির জন্য করা যাবে না; বরং এর একমাত্র হক্বদার আল্লাহ তা‘আলা। কাজেই কোন জীবিত বা মৃত ব্যক্তিকে ভক্তির সাজদাহ্ করা প্রকাশ্য র্শিক। ঠিক তেমনি কোন ঊরস মাহফিলে কোন প্রকার গরু, ছাগল, মুরগী ও উট-মহিষ যবেহ করা বিলকুল হারাম। এ ধরনের যবেহ করা পশু খাওয়াও হারাম। আর এর পরিণাম জাহান্নাম।[২]
মহান আল্লাহর বাণী :
﴿إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ﴾
“নিশ্চয়ই তোমার শত্রুই নির্বংশ।”
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে সান্তনা দিয়ে বলেন : “যারা তোমাকে নির্বংশ বলছে, তারই প্রকৃত নির্বংশ।” তাদের নাম-গন্ধ দুনিয়াতে থাকবে না। কিন্তু তোমার নাম চিরদিন চিরভাস্বর হয়ে থাকবে। ক্বিয়ামত পর্যন্ত তোমার উম্মাতের সিলসিলা জারি থাকবে এবং তাঁরা অতি শ্রদ্ধাভরে তোমার নাম নিতে থাকবে।
সবর বা ধৈর্য : সবর আরবী শব্দ, অর্থ- আটকানো বা নিয়ন্ত্রণ করা। দা‘ওয়াত ও তাবলীগ-এর ক্ষেত্রে সবর হলো-পূর্ণাঙ্গ ইখলাসের সাথে অর্পিত আমানত যথাযথ আদায় করা। অর্থাৎ- দা‘ওয়াতের ন্যায় গুরুদায়িত্ব হতে কখনো বিরত কিংবা সে পথে বিচলিত না হওয়া। আর এ মহান কর্তব্য পালনকালে যে সব বিপদ-মুসীবত আসবে, তা হাসিমুখে মেনে নেয়া। কখনো এ পূণ্য কাজের নগদ ফল আশা না করা। দুনিয়াবী মসনদ বা প্রভাব-প্রতিপত্তি লাভের খেয়াল মন থেকে ঝেড়ে ফেলা।
আল কাওসার কি?
আরবীতে অধিক কল্যাণ বুঝাতে আল-কাওসার শব্দটি ব্যবহার করা হয়। সহীহ মুসলিম-এ বর্ণিত আছে,
রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কাওসার সম্বন্ধে জানো কি? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভাল জানেন। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : এটি একটি নহর। যার ওয়া‘দা আল্লাহ তা‘আলা আমাকে করেছেন। এতে অনেক কল্যাণ আছে। এটি একটি হাউজ, ক্বিয়ামতের মাঠে যার নিকট আমার উম্মাতকে পেশ করা হবে। এটি এমন এক নহর, যা স্বর্ণের প্রাচীর ঘেরা এবং স্রোতস্বিনীসমূহ ইয়াকূত দ্বারা নির্মিত। এর মাটি মিশক হতে অধিক সুগন্ধময়। এর পানি মধুর চেয়ে অধিক মিষ্টি এবং বরফের চেয়েও সাদা।
সূরাটির শিক্ষাসমূহ-
১. এ সূরাটিতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের মর্যাদার কথা উল্লেখ করেছেন।
২. আল-কাওসারের প্রমাণে যত হাদীস বর্ণিত হয়েছে, এ সূরাটি তার দৃঢ়তা প্রমাণ করছে।
৩. প্রতিটি কাজে ইখলাস জরুরী। বিশেষ করে সালাত ও কুরবানীর ক্ষেত্রে অত্যাবশ্যক।
৪. এ সূরাটি যালিমের জন্য বদ্দু‘আ করা জায়িয প্রমাণ করে।
উপসংহার : দা‘ওয়াত ও তাবলীগ এমন এক চলমান প্রক্রিয়ার নাম, সাময়িক কষ্টকর হলেও যার ফল সুদূর প্রসারী এবং বহমান। দীন প্রচার করে দুনিয়াবী ফায়দা হাসিলের ভাবী ফল অত্যন্ত ভয়ানক। আর তা হলো জাহান্নাম। এতদ্সত্তেও দীনি দা‘ওয়াতি ভাইদের কিছু কিছু আচরণ রীতিমত আমাদেরকে ভাবিয়ে তোলে। অথচ আমাদের একমাত্র অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব মহানাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও তাঁর নিষ্ঠাবান অনুসারী সাহাবায়ে কিরাম-এর রীতি যেনো উপেক্ষিত। ইখলাস, পরিশ্রম, ত্যাগ ও সবর যাদের ছিল নিত্য স্বভাব, তাদেরই উত্তরসূরী আজ অসহায় মিসকীন। হে আল্লাহ! আমাদেরকে হিদায়াত করো। তোমার পথে অবিচল থাকার তাওফীক্ব দাও! আর ক্বিয়ামতের দিন নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর শাফা‘আত ও তাঁর কাওসারনামীয় হাউজ হতে জান্নাতী সুধা পান নসীব করিও -আমীন। ###
[১] সূরা আল কাওসার ১০৮ : ১-৩।
[২] সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫ : ৩।
ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45
সূর্যাস্ত : 5:11:51
আপনার মন্তব্য1