সাময়িক প্রসঙ্গ
মাসজিদে গামামা বা মেঘের মাসজিদ
এম. জি. রহমান

মাসজিদে গামামা বা মেঘের মাসজিদ

Ñএম. জি. রহমান

দ্বিতীয় হিজরী সনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাসজিদে নববীর সন্নিকটে উন্মুক্ত স্থানে অর্থাৎ- মানাখা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় সর্বপ্রথম ঈদের সালাত আদায় করেন। দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির কারণে বৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে তিনি (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহাবীদের নিয়ে এ স্থানেই বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত অর্থাৎ- ইস্তিস্কার সালাত আদায় করেন। সালাত শেষে মেঘমালার দেখা মেলে এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। তিনি (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এ ময়দানকে ঈদগাহ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আমলে এ স্থানটি খোলা প্রান্তর ছিল। এ স্থানেই নির্মিত হয় মাসজিদ গামামাহ। আরবী শব্দ ‘গামামাহ’ অর্থ মেঘলামা। বর্তমানে মাসজিদে নববীর সবচেয়ে কাছের মাসজিদগুলোর মধ্যে মাসজিদে গামামাহ অন্যতম। মাসজিদে নববীর দক্ষিণ পশ্চিম সীমানায় এই মাসজিদটি অবস্থিত। একে মাসজিদে মুসাল্লাহ্ও বলা হয়। বর্তমানে মাসজিদে নববীর ব্যাপক সম্প্রসারণের পরিপ্রেক্ষিতে এটি মাসজিদে নববীর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়েছে।

এই মাসজিদটি আরো একটি কারণে বিখ্যাত। তাহলো আবিসিনিয়ার নওমুসলিম বাদশাহ নাজ্জাশীর মৃত্যুর পর মহানাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর গায়েবানা জানাযার সালাত এই স্থানেই পড়ান। নাজ্জাশী চিঠির মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দীনের দাওয়াত পেয়ে খৃস্টান ধর্ম ছেড়ে ইসলাম ধর্ম কবূল করেছিলেন। সৌদি সরকার বর্তমানে এই মাসজিদের চারপাশে গোলাপী রঙের সুন্দর দেয়াল নির্মাণ করে তাতে ঐতিহ্যবাহী সৌদি খেজুর গাছের গুড়ি ও হারিকেনের আলোকবাতি দিয়ে সাজিয়েছে।

মাসজিদে গামামার খুব কাছে মাত্র ৪০ গজের মধ্যে আরো তিনটি ছোট মাসজিদ আছে। যেমন মাসজিদে আবূ বকর, মাসজিদে ‘উমার এবং মাসজিদে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহুম)।

মাসজিদে নববীর ৬ নম্বর গেইট দিয়ে বের হলেই সামনে পড়ে গামামাহ মাসজিদ।

ইসলামের প্রাথমিক যুগের এসব মাসজিদ এখনও নাবী করীম (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্মৃতিধারণ করে আছে। মাসজিদে নববীর আয়তন বিশালতা এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের কারণে এর বাইরের এসব মাসজিদে এখন তেমন কাউকে সালাত আদায় করতে দেখা যায় না। 

মাসজিদে গামামার স্থানে কোনো মাসজিদ ছিলো না। পরবর্তীতে খলিফা ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিক ৯১ হিজরীর দিকে এখানে মাসজিদ নির্মাণ করেন। ৭৪৮ হিজরী থেকে ৭৫২ হিজরী পর্যন্ত দ্বিতীয়বার হুসাইন বিন কালাউন মাসজিদে গামামার সংস্কার কাজ করেন। অতঃপর ৮৬১ হিজরীতে আল আশরাফির যুগে পুনরায় এই মাসজিদের সংস্কার করা হয়। শেষের দিকে ওসমানী খলিফা সুলতান আব্দুল হামীদ খান এই মাসজিদ সংস্কার করেন। এরপর ১৮৬১ সালে সুলতান আব্দুল মাজিদ খান ওসমানী এই মাসজিদ সংস্কার করেন। বর্তমানে যে ইমারত আমরা দেখতে পাই, তা সুলতান আব্দুল মাজিদ খান ওসমানীর যুগের। 

সর্বশেষ সৌদি সরকার ওসমানী ইমারত বহাল রেখে সে মোতাবেক মাসজিদের সংস্কার করেন। তাতে ব্যায় হয় ২ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল। বর্তমানে মাসজিদটি মদীনা আওকাফ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। 

মাসজিদে গামামাহ পূর্ব ও পশ্চিমে লম্বা দুই অংশবিশিষ্ট। দক্ষিণ অংশ বড়। একটি গম্বুজ দ্বারা ছাদ। উত্তর দিকে ছোট ছোট পাঁচটি গম্বুজ রয়েছে। উত্তর দিকে দু’টি লোহার গম্বুজ দ্বারা প্রবেশদ্বার। মাসজিদটির দৈর্ঘ ৩২.৫ মিটার ও প্রস্থ ২৩.৫ মিটার, মোট আয়তন ৭৬৩.৭ বর্গমিটার। উচ্চতা ১২ মিটার। প্রাচীর ১.৫ মিটার প্রস্থ। পূর্বের দিকে পাথর দিয়ে সাজানো ছোট একটি মিনার মাসজিদের সৌন্দর্যকে আরও মনোরম করেছে।



0


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত