সাময়িক প্রসঙ্গ
মুহাম্মদী মোহরাঙ্কিত আশুরায়ে মুহার্রম
শাইখ মুহাম্মাদ হারুন হুসাইন

হিজরি সনের প্রথম মাস মুহার্রম। এ মাসের দশম তারিখকে আশুরা বলা হয়। ইতিহাসে আশুরা প্রসিদ্ধ দিন। এই দিনে সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নির্ধারণ হয়। পৃথিবীর কুখ্যাত জালেম শাসক ফিরআউনের সলিলসমাধি হয়। অপরদিকে আল্লাহর নবী মূসা (আ.) ও নির্যাতিত বানী ইস্রা-ঈলের বিজয় সুনিশ্চিত হয়। ফিরআউনকে মূসা নবী ও তাঁর ভ্রাতা হারুন (আ.) তাওহীদের দাওয়াত দেন। যুল্ম ও নির্যাতন বন্ধের আহ্বান করেন। কিন্তু ফিরআউন দম্ভভরে তা প্রত্যাখ্যান করে। শুধু তাই না, মূসা ও হারুন (আ.)-সহ নিরীহ বানী ইস্রা-ঈলকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। আচমকা বিশাল বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হয়। জনৈক ব্যক্তি ডেকে বলে- হে মূসা (আ.)! দ্রুত প্রস্থান করুন! ফিরআউন বিশাল অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আপনাদেরকে ধাওয়া করছে।


অবশেষে মূসা ও হারুন (আ.) তাদের সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটলেন। কিন্তু পথে এক কঠিন পরীক্ষায় পড়লেন। সামনে বিশাল নদী এবং পিছনে ফিরআউন বাহিনী। বানী ইস্রা-ঈল কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে বলে উঠলেন : হে মূসা! আমরাতো ফিরআউন ও তার বাহিনী কর্তৃক ধৃত হয়ে যাচ্ছি! আপনি একটি উপায় খুঁজুন! তৎক্ষণাৎ ঈমানের আলোকরশ্মি দীপ্ত প্রত্যয়দৃঢ় সংকল্পের অধিকারী মূসা কালিমুল্লাহ (আ.) দৃঢ়চিত্তে বলে উঠলেন : কখনোই না, আমার সাথে আমার রব রয়েছেন। তিনি আমাকে পরিত্রাণের পথ দেখিয়ে দেবেন। তাওয়াক্কুল পূর্ণ এ উক্তির সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলা পথ বানিয়ে দিলেন। উত্তাল তরঙ্গের খরোস্রতা নদীর মাঝে ১২টি রাস্তা হয়ে গেল। মূসা (আ.) তাঁর সাথীদের নিয়ে নিরাপদে ওপারে পাড়ি জমালেন।

এ দিকে দাম্ভিক ফিরআউনের সর্বনাশ ঘনিয়ে এলো। আল্লাহর কারিশমা বুঝতে পারলো না। সে চরম পরিণতি ভোগ করতে মু’যিজার পথ ধরে সদলবলে অগ্রসর এগিয়ে চলল। কিন্তু এ পথতো আর তার জন্য তৈরি করা হয়নি। মধ্যভাগে আসার পর পানি এসে পথ রুদ্ধ করলো। পালাবার পথ নেই। একান্ত নিরুপায় হয়ে বলে উঠলোÑ বানী ইস্রা-ঈল যে আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে, আমিও সে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম। কিন্তু তার ঈমানের দাবি গৃহীত হলো না; বরং বলা হলো, এতক্ষণে! তুমি কত নাফরমানি করেছ(?) পরিত্রাণ মিলল না। সলিলসমাধি হলো। তার এ মর্মান্তিক মৃত্যু যুগে যুগে সব স্বৈরশাসক ও দাম্ভিকের জন্য মহা দৃষ্টান্ত হয়ে রইল। মূসা (আ.), তাঁর ঈমানদার ও নির্যাতিত জাতি ফিরআউনের যুল্ম থেকে মুক্তি পেল। মুক্তি বা বিজয়ি আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। তাইতো এ বিজয়োল্লাসে সর্বপ্রকার কৃতজ্ঞতা পাওয়ার একমাত্র হক্বদার হলেন আল্লাহ। এই কথা হৃদয় মন থেকে উপলব্ধি করে বিজয়ের এ তারিখে সিয়াম পালন করলেন এবং তার অনুসারীরাও এভাবে সিয়ামের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতায় অবনত হলো। এটাই হলো ১০ মুহার্রম বা আশুরার মুহাম্মাদী মোহরাঙ্কিত সত্য ঘটনা।

আমাদের নবী মুহাম্মদ (সা.) মক্কা জীবনে এ দিনে সিয়াম পালন করেছেন। আরবের কুরাইশরাও এ দিনে সিয়াম পালন করত। নবী (সা.) মদিনায় হিজরতের পর দেখতে পেলেন- সেখানের ইয়াহূদীরা এ দিন সিয়াম পালন করছে। তাদের জিজ্ঞেস করলেন- এ দিনে তোমরা সিয়াম পালন করছো কেন? তারা বলল- এ দিন তো এক মহা দিন, যে দিন মূসা (আ.) ও তাঁর অনুসারীদেরকে আল্লাহ তা‘আলা ফিরআউনের কবল থেকে নাজাত দিয়েছিলেন এবং ফিরআউনের সলিলসমাধি হয়েছিল। তাই মূসা (আ.) মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের নিমিত্তে এ দিনে সিয়াম পালন করেছিলেন। আমরাও এ দিনের সিয়াম পালন করি। তৎক্ষণাৎ নবী (সা.) বলে উঠলেন : মূসা (আ.)-এর অনুসরণের বিষয়ে তোমাদের চেয়ে আমি অধিক হক্বদার। এ কথা বলে তিনি আনুষ্ঠানিক সিয়াম পালন করলেন এবং সাহাবীগণকে সিয়ামের নির্দেশ দিলেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, রাসূল (সা.)-এর মহাপ্রয়ানের ৫০ বছর পর ৬১ হিজরি সনের ১০ মুহার্রম কারবালার প্রান্তরে নবী দৌহিত্র হুসাইন ইবনু ‘আলী (রা.) শাহাদাত বরণ করেন। তাঁর এ মর্মান্তিক শাহাদাত সত্যিই হৃদয় বিধারক। সে জন্য তাঁরা আমাদের প্রাণ খোলা দু‘আ থাকবে। কিন্তু আশুরার সিয়ামের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আর সালাফগণের পরিগৃহিত নীতি অনুযায়ী আমরা ইয়াজিদকে গালমন্দ করবো না এবং তার জন্য কোনো দু‘আও করবো না; বরং বিরত থাকবো। 



weeklyarafat


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত