আলহামদুলিল্লাহ! এবারের ঈদুল ফিত্র অত্যন্ত সুন্দর ও ভাব গম্ভীর্যপূর্ণভাবে সম্পন্ন হলো। ইসলামের ঈদ উৎসব সামাজিক ও জাতীয় ‘ইবাদত অনুষ্ঠানের নাম। শুরু হয় যাকাতুল ফিত্র আদায়, তাকবীর-তাহলীল ও সালাতের মাধ্যমে। সেখানে ঘটে মুসলিম নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোরদের মিলন মেলা। নারীরা ইসলামী পর্দা মেনে এ মহা উৎসবে অংশ নেন। সালাতের পর ইমাম সাহেব মুসল্লিদের উদ্দেশ্য করে সংক্ষিপ্ত সারগর্ভ নসিহত পেশ করেন এবং দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মা’হর কল্যাণ কামনায় মাসনুন দু‘আ পাঠ করেন। এরপর শুরু হয় দ্বিতীয় অনুষ্ঠানিকতা। পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময়। এ সময় পরস্পর বিনম্রচিত্তে বলে ওঠেন “তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম”-এর ভাবার্থ হলো- আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ও আপনাদের সালেহ তথা গ্রহণযোগ্য ‘আমল কবুল করুন -আমীন।
আহ্! এ বাক্যের মাঝে পূর্ণ প্রাপ্তির দৃঢ় প্রত্যাশা, দয়াময় মহান আল্লাহর প্রতি কঠিন আস্থা ও মুসলিম ব্যক্তিত্বের প্রতি সহমর্মিতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নিহিত রয়েছে। মুসলিম পরস্পর ভাই ভাই। একে অন্যের কল্যাণ কামনা আদর্শিক, স্বাতন্ত্রিক বৈশিষ্ট্যের অন্যতম। যে মুসলিম প্রতিবেশীর কল্যাণ চায় না; বরং অনিষ্ট সাধনে সক্রিয় রাসূল (সা.)-এর ভাষায় সে ঈমানদার নয়। প্রকৃত মুসলিম হতে হলে নিজের জন্য যা ভালোবাসবে, অপর মুসলিম ভাইয়ের জন্যও তা ভালোবাসতে হবে। তাই একজন মুসলিম পুরো রমাযান মাস সিয়াম, ক্বিয়াম বা তারাবিহ্, কুরআন তিলাওয়াত, দু‘আ-ইস্তেগফার এবং হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রজনী ‘লাইলাতুল ক্বদ্র’ প্রাপ্তির একান্ত বাসনায় শেষ দশকে ই‘তিকাফ ও ‘ইবাদতের কঠোর সাধনার পর নিজের মাগফিরাত, নাজাত ও রহমতের এলাহী লাভের ব্যাকুলতায় যখন উদগ্রীব তখন মুসলিম ভাই-বোনকে ভুলে না; বরং দরদি মন নিয়ে বলে ওঠে- হে আল্লাহ! আপনি আমার ও মুসলিম ভাইয়ের সৎ ‘আমলগুলো কবুল করুন -আমীন। কী আকুতি, কী সহমর্মিতা ও মহান রবের সমীপে কী আত্মনিবেদন!
রমাযানের ফর্য সিয়াম শেষ হলো। যেকোনো ফর্য ‘ইবাদত করতে একজন মুসলিম বাধ্য, কিন্তু দেখার বিষয় হলো ফর্য আদায়ের পাশাপাশি একজন মুসলিম কতটুকু নফল ‘ইবাদত করছে। বান্দা ও তার রবের সাথে সুগভীর সম্পর্ক ব্যতীত নফল তথা অতিরিক্ত ‘ইবাদত আদায় সম্ভব নয়। তাইতো প্রিয় নবী (সা.) বলেন, আল্লাহ বলেছেন, “নফল ‘ইবাদতের মাধ্যমে বান্দা আমার যত নিকটবর্তী হয়, ফর্য ‘ইবাদত দিয়ে তা হয় না।” বান্দা যখন মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে তখন সে পূর্ণ আল্লাহওয়ালা হয়ে যায়। তার চোখ, হাত-পা তথা কোনো অঙ্গই কোনোভাবে মহান আল্লাহর নাফরমানি করতে পারে না; বরং মহান আল্লাহর ইশারায় পুণ্যময় কাজে এ ইন্দ্রিয়গুলো সদা নিয়োজিত থাকে।
রমাযানের পর সিয়ামের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ‘ইবাদত চলমান রাখার লক্ষ্যে শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল সিয়াম পালনের প্রতি রাসূল (সা.) উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, “যে রমাযানের সিয়াম পালন করে শাওয়াল মাসের ছয়টি সিয়াম পালন করে, সে যেন পুরো বছরই সিয়াম পালন করল।” আল-কুরআনে বিঘোষিত হয়েছে- যে কোনো ব্যক্তি একটি পুণ্যময় কাজ করলো তার জন্য রয়েছে দশগুনণ নেকি। অর্থাৎ-একমাস সিয়াম সমান ১০ মাস এবং ছয়টি নফল সিয়াম সমান ৬০ দিন তথা ২ মাস। এভাবে আল্লাহ তা‘আলা তার প্রিয় ‘ইবাদতগুজার বান্দাকে এক বছরের সওয়াব দিয়ে ধন্য করেন।
ইসলামই একমাত্র দীন যার প্রতিটি কর্মে রয়েছে প্রভূত কল্যাণ। একদিকে বান্দা মহান আল্লাহর ‘ইবাদতের মাধ্যমে আত্মপ্রশান্তি পায়। অপরদিকে চিত্ত বিনোদনের পাশাপাশি সামাজিক বন্ধনও দৃঢ় করার অনুপ্রেরণা পেয়ে আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের অগ্রসৈনিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তাইতো বলি ইসলামের ঈদ নিছক উৎসব নয়; বরং ‘ইবাদত। আর আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে কেবল তাঁর ‘ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। একজন মুসলিম যখন তার পুরো জীবন মহান আল্লাহর বিধান মতো পরিচালনা করেন, তখন তার চলাফেরা, ওঠা-বসা, খাওয়া-পরা, নিদ্রাযাপন ও বৈধ বিনোদন সবই ‘ইবাদতে পরিণত হয়। রুজি-রোযগার ও পরিবারকে হালাল উপার্জন খাওয়ালে তা বড়ো ‘ইবাদত বলে গণ্য হয়। আর সৎ উপার্জনকারী হয়ে যান মহান আল্লাহর বন্ধু। কিন্তু আমরা যদি এ পুণ্যময় জীবন যাত্রায় ন্যায়-অন্যায়কে একীভূত করে ফেলি, তখনই জীবনে নেমে আসে অমানিশা। তাই আসুন! আমরা আমাদের জীবনকে মহান আল্লাহর পথে পরিচালিত করি। তাহলে দুনিয়া হবে সুশৃঙ্খল ও আখিরাত হবে শংকামুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে প্রকৃত বান্দা হিসেবে কবুল করুন -আমীন।
আপনার মন্তব্য1