সাময়িক প্রসঙ্গ
রাইয়্যানের তোরণচূড়ায় হিলালের উঁকি
শাইখ মুহাম্মাদ হারুন হুসাইন

রমাযান মাস ‘ইবাদতের বসন্তকাল। এ সময় সর্ববিধ ‘ইবাদতের সুবর্ণ সুযোগ অবারিত থাকে। মহান আল্লাহর নৈকট্য প্রত্যাশি মু’মিন নর-নারী সুযোগের সদ্ব্যবহার করে কামিয়াবির পথে অগ্রসরমান। তাঁদের অনেকেই রমাযানের শেষদশক দুনিয়াবী ব্যস্ততামূক্ত হয়ে একাগ্রচিত্তে নির্জনে মহান আল্লাহর ‘ইবাদতে মশগুল হওয়ার বাসনা নিয়ে মসজিদে ই‘তিকাফে বসবেন। ই‘তিকাফ হচ্ছে নিজেকে আটকে রাখা বা নিয়ন্ত্রণ করা। আর ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় ‘ইবাদতের একান্ত মানসে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মসজিদে অবস্থান করা। এ অবস্থানের ফলে ‘ইবাদতকারী সার্বক্ষণিক মহান আল্লাহর ‘ইবাদতে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। রাত জেগে কুরআন তিলাওয়াত, নফল সালাত, দু‘আ-যিক্র ও তাওবাহ্ই-স্তিগফারে ব্যপৃত থাকায় রমাযানের শেষ দশকের ফযীলত লাভ করেন। সাথে সথে ‘লাইলাতুল ক্বদর’ বা মহিমান্বিত ক্বদরের রজনী পেয়ে ধন্য হন। আর ক্বদরের একটি রাত এক হাজার মাস ‘ইবাদত করার চেয়েও উত্তম। কিন্তু পরিতাপ এই যে, এ মহাকল্যাণ লাভের ব্যাপারে রয়েছে আমাদের যথেষ্ট উদাসীনতা। মাত্র ১০দিন দুনিয়াবী কাজ-কর্ম না করলে যাদের সংসার পরিচালনা ও জীবিকা নির্বাহে কোনো অসুবিধা হবে না, এমন অসংখ্য মুসলিম ই‘তিকাফ-এর ন্যায় অতি গুরত্বপূর্ণ ‘ইবাদতের কোনো প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না। অপরদিকে একদল মুসলিম এ নফল ‘ইবাদতকে ‘ফর্যে কিফায়াহ’ বলে ফাতাওয়া দেওয়ার কারণে ‘ইবাদত আদায় নয়; স্রেফ দায়মুক্তির জন্য কোনো একজন বা একাধিক লোককে মসজিদে ই‘তিকাফ-এ বসাতে একরকম পীড়াপীড়ি করেন। অগত্যা কাউকে না পেলে টাকা দিয়ে কোনো দরিদ্র মুসাফিরকে ই‘তিকাফে বসিয়ে দেন, যা এ গুরুত্বপূর্ণ ‘ইবাদতের সাথে তামাশার শামিল। কোনো কোনো সমাজে দেখা যায়, ইমাম সাহেবের সম্মানি বাবদ সমাজ থেকে যে টাকা উঠানো হয়, তা থেকে ঐ ই‘তিকাফকারী মিসকীনকে টাকার একটা অংশ দেওয়া হয়। এমনকি হাদিয়ার নামে তাকে জামা-কাপড় ইত্যাদি দিয়ে স্বস্থির ঢেকুর তোলা হয় যে, আমাদের মসজিদেও এবার ই‘তিকাফ করিয়েছি! অথচ ঈমানী তাগিদে নিজেদেরকে এ গুরুত্বপূর্ণ ‘ইবাদতে শামিল করার মাঝেই কল্যাণ রয়েছে, জবরদস্তিমূলক কাউকে বসানোর মাঝে কোনো কল্যাণ নেই। উপরন্তু তা সুন্নাতের খেলাফ, যার পরিণাম ভয়াবহ। এবার আসি ঈদ প্রসঙ্গে। মহানবী মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে এ উম্মাতকে বছরে মাত্র দু’টি ঈদ উপহার দিয়েছেন। আর তা হচ্ছে ঈদুল ফিত্র ও ঈদুল আযহা। এর বাইরে কোনো ঈদ উৎসব ইসলামে স্বীকৃত নয়। রমাযানের একমাস সালাত, সিয়াম, ক্বিয়াম, তিলাওয়াত, তাসবীহ-তাহলীল, দু‘আ ও যিক্র, দান-সাদাক্বাহ্, ই‘তিকাফ ও ক্বদর রজনী প্রাপ্তির নেক নিয়তে শেষ দশকের বেজোড় রাত্রির নিরলস সাধনার দুয়ারে ঊষার আলোর ন্যায় মহান আল্লাহর মাগফিরাতের ডালি নিয়ে ঊদিত হয় ঈদের চাঁদ। যাঁরা ঈদের দিন ফজরের সালাত পড়ে সুন্নাহ মোতাবিক যাকাতুল ফিত্র আদায় করতঃ জাহান্নাম থেকে মুক্তির উন্মুক্ত ঘোষণা লাভের আশায় খোলা মাঠে ঈদের সালাত আদায় করেন, খুৎবাহ্ শুনেন এবং খুৎবায় ইমাম যে মাসনূন দু‘আ করেন, তাতে শামিল হন- তারাই প্রকৃত ঈদ পালনকারী বলে বিবেচিত হবেন। ঈদের সালাত এমনই একটি গুরুত্বপূর্ণ সালাত, যাতে মহিলাদেরকে ঈদের মাঠে বের হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঋতুবতী মহিলাকে ঈদগাহে নিয়ে যেতে রাসূল (সা.) নির্দেশ দিয়েছেন। তারা সালাত আদায় করবে না, তবে মুসলিমদের এ মহাসম্মেলন প্রত্যক্ষ করবে এবং দু‘আয় অংশ নেবে। আর যেসব মহিলার ওড়না নেই, তাদেরকে অন্য কারো কাছ থেকে ওড়না চেয়ে নিয়ে ঈদের জামা‘আতে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে বুঝা যায় যে, ঈদের জামা‘আত মুসলিম সমাজের বড়ো ‘ইবাদত অনুষ্ঠান, যাতে নারী-পুরুষ সকলকেই অংশ নিতে বলা হয়েছে। পরিতাপ এই যে, আমাদের সমাজের আবেগী মুসলিমগণের বেশিরভাগ ঈদ জামা‘আতে মাবোনদেরকে অংশ নিতে দেওয়া হয় না; বরং বাতিল অযুহাতে তাদের এ পুন্যময় সম্মেলন হতে মাহরুম করা হয়। ঈদ মানুষকে ঐক্য, সৌহার্দ, সহমর্মিতা ও সুখ—দুঃখ ভাগাভাগি করতে শেখায়। সামাজিক বন্ধনকে মজবুত করে। মানবিকতার জাগরণ ঘটায়। ধনী ও গরীবের মাঝে প্রীতিময় সেতুবন্ধন স্থাপন করতে সহায়তা করে। এরূপ অসংখ্য কল্যাণকর বাতায়ন খুলে দেয়। প্রয়োজন হলো সেসব কল্যাণকে সর্বান্তকরণে গ্রহণ করা এবং এসবের যথাযথ বাস্তবায়নে পুরো উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়া, তবেই ঈদের শিক্ষায় আমরা আলোকিত হবো এবং সমাজ হবে উন্নত আদর্শের মডেল। সাপ্তাহিক আরাফাত পত্রিকার পক্ষ থেকে আমরা আপনাদেরকে আগাম ঈদ শুভেচ্ছা জানাই। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সেসব নেক বান্দাগণের অন্তর্ভ ভুক্ত করুন, যাঁরা রমাযান পেয়েছেন, সিয়াম আদায় করেছেন, ক্বিয়ামুল লাইল পালন করেছেন এবং ক্বদ্রের রাত পেয়ে সৌভাগ্যবান হয়েছেন -আমীন। 


weeklyarafat


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত