সাময়িক প্রসঙ্গ
তাওহীদী জনতায় মুখরিত জমঈয়ত ক্যাম্পাস
শাইখ মুহাম্মাদ হারুন হুসাইন

গত ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি-২০২৪ ঈসায়ী দু’দিনব্যাপী “দাওয়াহ ও তাবলীগী মহাসম্মেলন” অত্যন্ত সফলভাবে সম্পন্ন হলো- ফালিল্লাহিল হামদ্। বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর দাওয়াহ ও সংস্কার কার্যক্রমের অন্যতম হলো ‘বাৎসরিক মহাসম্মেলন’। ঢাকার অদূরে সাভার ইপিজেড সংলগ্ন বাইপাইলে আমাদের নিজস্ব জায়গা জমঈয়ত ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হয় এ মহাসম্মেলন। প্রথম দিন বৃহস্পতিবার অপরাহ্নের পূর্বেই বিভিন্ন সাংগঠনিক জেলা হতে আগত জমঈয়ত দরদি আহলে হাদীস জনতার উপস্থিতিতে পুরো প্যান্ডেল পরিপূর্ণ হয়ে যায়। মাননীয় জমঈয়ত সভাপতি শাইখ অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ফারুক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে আমন্ত্রিত অথিতিবৃন্দ ও ইসলামিক স্কলারগণ বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানগর্ব বক্তব্য পেশ করেন। অতঃপর দ্বিতীয় দিন জুমু‘আর সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে সত্যসেবী দীনদরদি মুসলিমগণের মহাজমায়েত হতে থাকে। ৫০ বিঘার এ বিশাল ক্যাম্পাস মূহূর্তেই মুসল্লিদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। যেন তিল ধারনের ঠাঁই নেই। বাংলাদেশে এটিই আহলে হাদীসদের সর্ববৃহৎ গণজমায়েত, যা মিডিয়া ও বোদ্ধামহলে সর্বস্বীকৃত। জমঈয়তের সাথে সম্পৃক্ত নন এমন ব্যক্তিবর্গও অনায়াসে এ সত্য স্বীকার করছেন। জুমু‘আর খুৎবাহ্ প্রদান করেন এ শতাব্দীর বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা মুহাম্মাদ নাসির উদ্দিন আল-বানী (রাহিমাহুল্লা-হ)’র সুযোগ্য জামাতা সউদি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিশিষ্ট দাঈ‘ শাইখ মাহির বিন যফির আল-কাহতানী। জুমু‘আর সালাতের পর তাঁর খুৎবার অনুবাদ করেন বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর সেক্রেটারি জেনারেল শাইখ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী।

যথারীতি ‘আসর সালাতের পর ঢাকা-১৯ আসনের মাননীয় এম,পি জনাব মো. সাইদুল ইসলাম-এর উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে মহাসম্মেলনের চূড়ান্ত অধিবেশন শুরু হয়। উক্ত অধিবেশনে প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত হন বাংলাদেশে নিযুক্ত সউদী রাষ্টদূত ‘ঈসা বিন ইউসুফ আদ-দোহাইলান। তিনি তাঁর বক্তব্যে সউদী-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় বিশেষত বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর সাথে ‘আক্বীদাহ্ ও মানহাযের গভীর সম্পর্কের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন। এতে লক্ষ জনতার আবেগ ও আনন্দ অনুভূতির প্রকাশ ঘটে। অতঃপর জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর উপদেষ্টা ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক সফল মেয়র ও বর্তমান ঢাকা- ৬ আসনের মাননীয় এম,পি আলহাজ্জ মুহাম্মাদ সাঈদ খোকন তাঁর ত্যাজদ্দীপ্ত বক্তব্যে কাবা ও মসজিদে নববীর সম্মানিত ইমাম ও খত্বীবকে প্রধান অতিথি করে আগামী সম্মেলন বাস্তবায়নের আশাবাদ ব্যক্ত করলে সউদি রাষ্টদূত এ ব্যাপারে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন। আরো বক্তব্য রাখেন জমঈয়তে আহলে হাদীসের অন্যতম উপদেষ্টা, ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি-এর ট্রাস্টি বোর্ডের মাননীয় চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআই’র  সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ। জমঈয়ত কল্যাণ ফান্ডের জন্য দাতা সদস্য হওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করে উদ্দীপনামূলক বক্তব্য পেশ করেন, অন্যতম উপদেষ্টা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম সদস্য, মাসকো গ্রুপের চেয়ারম্যান জনাব এম.এ. সবুর। অতঃপর জমঈয়ত সভাপতির নেতৃত্বে আমন্ত্রিত অথিতিবৃন্দ জমঈয়তের অন্যতম সাফল্যের প্রতীক বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো জমঈয়ত ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন। অতঃপর রাত ১১টায় মাননীয় জমঈয়ত সভাপতির সমাপনী বক্তব্যের মধ্যদিয়ে দুই দিনের এ মহাসম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

সম্মেলনে আগত দীনি ভাইদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। তাঁরা অতি আগ্রহভরে দু’দিনের এ সম্মেলন উপভোগ করেন। নতুন অনুমোদিত ‘আন্তর্জাতিক ইসলামী ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি’ ভবন দেখে বিমোহিত হন। তাছাড়া কেন্দ্রীয় এতিমখানা, মডেল মাদ্রাসা, মহিলা মাদ্রাসা ও বাইতুল আবেদীন জামে মসজিদ সমন্বিত পরিপূর্ণ ক্যাম্পাস দেখে জমঈয়তের কার্যক্রমের প্রতি তাঁদের একাত্বতা ও অনুভূতির কথা ব্যক্ত করেন। মহাসম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প, বুকস্টল, তথ্যকেন্দ্র ও একঝাঁক নিবেদিতপ্রাণ জমঈয়ত শুব্বানে আহলে হাদীস-এর সেচ্ছাসেবী কাফেলা। তাঁদের সুশৃঙ্খল পরিসেবায় জনগণ মুগ্ধ। এভাবে লক্ষ আহলে হাদীসের সুবিশাল সমাবেশ ইতোপূর্বে পরিলক্ষিত হয়নি। তাই আগামীতে আরো বেশি লোকের সমাগম হবে মর্মে দৃঢ় অঙ্গিকারের মধ্যদিয়ে উচ্চ আশাসহ শান্তি ও শৃঙ্খলার সাথে জনগণ নিজ গৃহে প্রস্থান করেন। আমরা আশাকরি এভাবে প্রতিবছর মহাসম্মেলন করলে তাওহীদী চেতনার উন্মেষ ঘটবে এবং “বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস” তার লক্ষ্যপানে বহুদূর এগিয়ে যাবে ইন্শা-আল্লাহ।


weeklyarafat


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 5:43:02 সূর্যাস্ত : 6:09:54

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত