কুরআন সুন্নাহর অতন্দ্রপ্রহরী ‘আহলুল হাদীস’। তাঁরা যুগের পর যুগ সত্যের মশাল প্রজ্জ্বলিত রেখেছে মহান আল্লাহর ইচ্ছায়। এ অভিধা চলতে থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত ইন্শা-আল্লাহ। বিরুদ্ধবাদিরা সত্যসেবী এ কাফেলার কোনো ক্ষতি সাধন করতে পারবে না। নাজীহ বা মুক্তিপ্রাপ্ত দল বলতে ‘আহলে হাদীসগণ’কেই বুঝায়। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) জিজ্ঞাসিত হয়ে বলেছিলেন, যদি মুক্তিপ্রাপ্ত দল ‘আহলে হাদীস’ না হয়, তাহলে আমি জানি না তারা কারা? ঈমান-‘আক্বীদায় ভেজাল দেখা দিলে কুরআন ও হাদীসের দলিল নিয়ে উপস্থিত হন উম্মাতের এ জাগ্রত কাফেলা। সুন্নাহ’র জায়গায় বিদআত অনুপ্রবেশ করতে দেখলেই অকুতভয় বীর-সেনানীর মতো সুন্নাতের ঝাণ্ডা নিয়ে অগ্রসরমান খতমে নবুওয়াতের চৌকাঠের প্রহরী আহলে হাদীসগণ।
সাহাবী (রা.)-গণের যুগেই ভারতবর্ষে ইসলাম পোঁছেছে। তখন থেকেই এ অঞ্চলের অধিবাসীগণ অবিমিশ্র ইসলাম অনুশীলনের সুযোগ পায়। ব্যক্তি ও সামষ্টিক উদ্যোগে দারস-তাদরীস, বাহাস-মুনাজারা ও ওয়াজ-নসীহতের মধ্য দিয়ে স্বচ্ছ এ দীনের প্রচারকার্য অব্যাহত থাকে। আসে সাংগঠনিক যুগ। বৃটিশ-বেনিয়াদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অধিকার আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল আহলে হাদীস জনপদ। আম্বালা, আন্দামান দীপ, বালাকোট ও পাটনার সাদিকপুর পরিবার যার অমর স্বাক্ষর। সেই সূত্র ধরে ১৯৪৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় “নিখিল বঙ্গ ও আসাম জমঈয়তে আহলে হাদীস।” ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর তা “পূর্ব পাকিস্তান জমঈয়তে আহলে হাদীস” নামে পরিচিত হয়। অতঃপর ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয় হলে “বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস” নামে সুপ্রতিষ্ঠা লাভ করে।
প্রতিষ্ঠালগ্নে এ দ্বীনী সংগঠনের পূর্ণ জিম্মাদারিত্বে ছিলেন ভারতবর্ষের খ্যাতনামা গবেষক, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ ও সুসংগঠক আল্লামা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহিল কাফী আল-কোরায়শী (রাহিমাহুল্লাহ)। তিনি তাঁর গবেষণাকার্যের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রথম বাংলা একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। তাঁর সম্পাদনায় আত্মপ্রকাশ করে সাপ্তাহিক আরাফাত ও মাসিক তর্জুমানুল হাদীস। ১৯৬০ সালে মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি পরলোক গমন করেন। তারপর “বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস”-এর সভাপতির দায়িত্ব অর্পিত হয় তাঁর সুযোগ্য ভ্রাতুষ্পুত্র এ উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা প্রশাসক আল্লামা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর উপর। সুদীর্ঘ ৪৩ বছরে তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে জমঈয়ত দেশের সীমানা পেরিয়ে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে সহীহ ও নির্ভেজাল সংস্কারবাদি আদর্শ সংগঠন হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে। প্রফেসর আল্লামা ড. মুহাম্মদ আব্দুল বারী (রাহিমাহুল্লাহ) রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে দুইটার্ম দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান এর পদও দু’দুবার অলংকৃত করেন। বাংলাদেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। সর্বোপরি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও তাঁর হাত দিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং তিনি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন।
তাঁর ব্যস্ত জীবনের ফুরসতে তিনি দেশের গ্রাম-শহর-বন্দর এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে জমঈয়তে আহলে হাদীসের দাওয়াতি মিশন নিয়ে হাজির হয়েছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন মসজিদ এবং ক্ব-লাল্লাহ ও ক্ব-লার রাসূলের দারাগাহ। তাঁরই প্রচেষ্টায় বাঙালি শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কপাট। এ সবের মাঝেও তাঁর মনের একান্ত বাসনা ছিল বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস-এর জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। সেই অদম্য ইচ্ছা বাস্তবায়নে ঢাকার সন্নিকটে ক্রয় করেছেন প্রায় অর্ধশত বিঘা জমি। আলহামদু-লিল্লাহ! আজ তাঁর স্বপ্ন দৃশ্যমান।
এটিই সেই কাঙ্খিত জমঈয়ত ক্যাম্পাস। যেখানে এখন শোভা পাচ্ছে বায়তুল আবেদীন জামে মসজিদ, কেন্দ্রীয় ইয়াতীমখানা, আল্লামা আব্দুল্লাহেল কাফী আল-কোরায়শী মডেল মাদ্রাসা ও আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) মহিলা মাদ্রাসা। আর এরই মাঝে এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে আমাদের স্বপ্নের “ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি”। এ ক্যাম্পাসের প্রসস্থ মাঠে প্রতিবারের ন্যায় এবারও (আগামী ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারী‘২৪) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের দাওয়াহ ও তাবলীগী মহাসম্মেলন। সউদী আরব, মিসর, জর্ডান, ভারত ও নেপাল হতে আমন্ত্রিত সালাফী স্কলারগণ তাশরীফ আনবেন এই মহাসম্মেলনে। দীনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা পেশ করবেন।
আসুন, আমরা বিশ্ব নেতৃবৃন্দের আলোচনা থেকে জীবন গড়ার শপথ গ্রহণ করি এবং অন্যান্য কর্মসূচির ন্যায় এই মহাসম্মেলনকে সফল করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি। তাওফীক মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে।
আপনার মন্তব্য1