সাময়িক প্রসঙ্গ
নতুন শিক্ষাবর্ষে নৈতিক শিক্ষার চ্যালেঞ্জ
শাইখ মুহাম্মাদ হারুন হুসাইন

মানুষের বিকাশের অন্যতম মাধ্যম হলো শিক্ষা। মানুষ শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে চারিদিকের পরিবেশ এবং সমাজের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে পারে। দুনিয়ার ও আখিরাতের জীবনে সম্মানিত হতে হলে নৈতিকমূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষা অর্জন করতে হবে। এছাড়াও শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়াতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে এবং কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল সেটা বুঝার সক্ষমতা লাভ করে। মানুষ শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে তার চরিত্র সুন্দর করতে পারে ও বিবেককে জাগ্রত রাখতে পারে। সঠিক জ্ঞানচর্চা ও অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষ বিবেকের জ্যোতিতে নিজেকে এবং সমাজকে আলোকিত করতে পারে। এ শিক্ষা ওহীর আলোয় উদ্ভাসিত স্বচ্ছ ও খাঁটি। এ জন্য চাই মহান আল্লাহর তাওফীক্ব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

“তিনি যাকে ইচ্ছা বিশেষ জ্ঞান দান করেন। আর যাকে বিশেষ জ্ঞান দান করা হয়, সে প্রভূত কল্যাণপ্রাপ্ত হয়। উপদেশ তারাই গ্রহণ করে যারা জ্ঞানবান।”

সুস্থ বিবেক মানুষের সৌন্দর্যে্যর প্রতীক। সুস্থ বিবেক বিকাশে নৈতিক শিক্ষার বিকল্প নেই। যুগে যুগে গুণীজনের অর্জিত সম্মানের পিছনে রয়েছে তাঁদের শিক্ষা, যা তাঁরা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জন করেছেন। আর তাঁরা তাদের অর্জিত শিক্ষা মানুষের কাছে বিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তাঁদেরকেই বলা হয় প্রকৃত মানুষ গড়ার কারিগর। এক্ষণে যাঁরা কারিগর তাঁরা যদি নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষাব্যবস্থায় সনদধারী হন এবং আল্লাহভীরুতার বদলে লৌকিতা ও জাগতিক স্বার্থই মুখ্য হয়, তাহলে এরূপ ব্যক্তির কাছে জ্ঞান চাওয়া আর অরণ্যেরোদন করা একই কথা। তাঁদের মতো শিক্ষিত ব্যক্তি দ্বারা জাতির প্রত্যাশা পূরণ হবে না। আমরা গভীরভাবে লক্ষ্য করছি যে, দিন যত যাচ্ছে ততো শিক্ষার অবনতি ঘটছে। মানুষ ভুলে যাচ্ছে শিক্ষার গুরুত্ব। দুনিয়া থেকে ধীরে ধীরে নৈতিক শিক্ষার বিলপ্তি ঘটছে। আর সে জন্য একে অপরের সাথে সদাচরণ বা সৎব্যবহার করা ভুলে যাচ্ছে। শিক্ষার অবনতির কারণে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্বের অভাব দেখা দিচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনবে। তাই মানুষের উচিৎ দীনী শিক্ষার গুরুত্ব দেওয়া। শিক্ষা অর্জনের জন্য পরিশ্রম করা এবং নিবেদিতপ্রাণ হওয়া, যাতে করে শিক্ষার মাধ্যমে তারা সমাজকে, দেশকে ও বিশ্বকে পরিশুদ্ধ করতে পারে এবং মানব জাতিকে সুশৃঙ্খল করতে পারে। মানুষের উচিৎ সালাফগণের মতো শিক্ষা অর্জন করা, যাতে করে তারা শিক্ষার আলোয় দুনিয়াকে আলোকিত করতে পারে, দুনিয়ার মানুষকে সভ্যতা শিখাতে পারে। আর এই শিক্ষার দ্বারা যেন গড়ে উঠে সভ্যতার নতুন প্রজন্ম।

কিন্তু বর্তমান শিক্ষা কারিকুলাম কি আমাদের সে লক্ষ্য পূরণে সক্ষম? আমরা মুসলিম বাংলাদেশি। আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে ইসলাম ও দেশীয় কাল্চারের সমন্বিত রূপের অনুশীলন আবশ্যক। তা না হলে মানুষ ইসলামী মূল্যবোধ ও অপসংস্কৃতির মধ্যকার পার্থক্য জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে। ফলে আদর্শ ও নৈতিকগুণ সম্পন্ন দেশপ্রেমিক সু—নাগরিক গড়ে ওঠবে না। আর এর অবশ্যম্ভাবী ফলস্বরূপ অন্যায়—অত্যাচার, জুলুম—নির্যাতন, চুরি, ডাকাতি, লুন্টন, ব্যভিচার ও অরাজকতা সমাজের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। অতএব, ২০২৪ শিক্ষা বর্ষের সূচনায় আমাদেরকে উপর্যুক্ত বিষয় নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। যথাসম্ভব এ বছর প্রকৃত শিক্ষিত জাতি গড়ার প্রত্যয়ে কাজ করতে হবে এবং আগামী বছরের জন্য সুন্দর পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। আমরা এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। 


সাপ্তাহিক আরাফাত


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত