কোনো কাজ করতে যাওয়ার পূর্বে নিয়ত করা অপরিহার্য। শরী‘আতের পরিভাষায় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তাঁর নির্দেশ পালনের উদ্দেশ্যে কাজ করার সংকল্পকে নিয়ত বলা হয়। সৎকাজ করে পুণ্য লাভ করতে হলে তার উদ্দেশ্যও সৎ হতে হবে। কাজের শুভ পরিণতি লাভের জন্য ভালো নিয়ত বা সৎ উদ্দেশ্য একান্ত অপরিহার্য। যথাযথ নিয়ত বা সংকল্প ব্যতিত ‘আমল সঠিক, পরিপূর্ণ ও পুণ্যবহ হতে পারে না। বিশুদ্ধ নিয়ত ছাড়া কোন আমলই আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবুল হবে না।
“আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন : ক্বিয়ামতের (ক্বিয়ামতের) দিন প্রথমে এক শহীদ ব্যক্তির ব্যাপারে বিচার হবে। আল্লাহ তা‘আলার সামনে তাকে হাশ্রের ময়দানে পেশ করবেন এবং তাকে তিনি তাঁর সকল নি‘আমতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। অতঃপর তার এসব নি‘আমতের কথা স্মরণ হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, তুমি এসব নি‘আমত পাবার পর দুনিয়াতে তাঁর কৃতজ্ঞতা স্বীকারে কী কাজ করেছ? সে উত্তরে বলবে, আমি তোমার (সন্তুষ্টির) জন্য তোমার পথে (কাফিরদের বিরুদ্ধে) লড়াই করেছি, এমনকি শেষ পর্যন্ত আমাকে শহীদ করে দেয়া হয়েছে। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। তোমাকে বীরপুরুষ বলবে এজন্য তুমি লড়েছ। আর তা বলাও হয়েছে (তাই তোমার উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে)। তখন তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি- যে নিজে জ্ঞানার্জন করেছে, অন্যকেও তা শিক্ষা দিয়েছে ও কুরআন পড়েছে, তাকে উপস্থিত করা হবে। তাকে দেয়া সব নি‘আমত আল্লাহ তা‘আলা তাকে স্মরণ করিয়ে দিবেন। এসব নি‘আমত তার স্মরণ হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, এসব নি‘আমতের তুমি কি শোকর আদায় করেছ? সে উত্তরে বলবে, আমি ‘ইল্ম অর্জন করেছি, মানুষকে ‘ইল্ম শিক্ষা দিয়েছি, তোমার জন্য কুরআন পড়েছি। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, তোমাকে ‘আলেম বলা হবে, ক্বারী বলা হবে, তাই তুমি এসব কাজ করেছ। তোমাকে দুনিয়ায় এসব বলাও হয়েছে। তারপর তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং মুখের উপর উপুড় করে টেনে-হিঁচড়ে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
এরপর তৃতীয় ব্যক্তি- যাকে আল্লাহ তা‘আলা বিভিন্ন ধরনের মাল দিয়ে সম্পদশালী করেছেন, তাকেও মহান আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাকে দেয়া সব নি‘আমতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। এসব তারও মনে পড়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা তাকে এবার জিজ্ঞেস করবেন, এসব নি‘আমত পেয়ে তুমি কি ‘আমল করেছ? সে ব্যক্তি উত্তরে বলবে, আমি এমন কোন খাতে খরচ করা বাকী রাখিনি, যে খাতে খরচ করাকে তুমি পছন্দ করো। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ, তুমি খরচ করেছ, যাতে মানুষ তোমাকে দানবীর বলে। সে খিতাব তুমি দুনিয়ায় অর্জন করেছ। তারপর তার ব্যাপারে হুকুম দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে টেনে-হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
উপরোক্ত হাদীস থেকে এ কথাটি সুস্পষ্ট যে, ‘আমল যতই করি না কেনো নিয়ত যদি পরিশুদ্ধ না হয় তাহলে সে ‘আমল আমাকে জান্নাতে না নিয়ে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। তাইতো রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অন্য এক হাদীসে বলেছেন :
عَنْ عَلْقَمَةَ بْنَ وَقَّاصٍ اللَّيْثِيَّ، يَقُوْلُ سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ (رَضِىَ اللهُ عَنْهُ) عَلٰى الْمِنْبَرِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللّٰهِ ﷺ يَقُوْلُ "اِنَّمَا الْاَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَاِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ اِلَيْ دُنْيَا يُصِيْبُهَا اَوْ اِلَي امْرَاَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ اِلَيْ مَا هَاجَرَ اِلَيْهِ".
‘আলক্বামাহ্ ইবনু ওয়াক্কাস আল-লাইসী (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন, আমি ‘উমার ইবনু খাত্তাব (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু)-কে, একদা মাসজিদে নববীর মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি, তিনি বললেন : আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি “যাবতীয় কাজ নিশ্চিতভাবে নিয়ত অনুসারেই হয়ে থাকে। আর মানুষ যা নিয়ত করে তার তাই হাসিল হয়। তাই যার হিজরাত দুনিয়ার কোন উদ্দেশ্যের জন্য হবে অথবা কোন নারীকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে, তাহলে তার হিজরাত সে অনুসারেই হয়েছে বলে গণ্য হবে যে উদ্দেশ্যে সে হিজরাত করেছে। ###
সহীহ মুসলিম- হাঃ ১৯০৫।
সহীহুল বুখারী- হাঃ ০১।
আপনার মন্তব্য1