সময় অবিরত প্রবহমান। থেমে নেই সেকেন্ড, মিনিটি ও ঘন্টার কাঁটা। প্রতিনিয়ত আমরা সময়কে পেছনে ফেলে ছুটে চলেছি অজানা আগামীর দিকে। এভাবে দিন সপ্তাহ, মাস, বছর আমাদের জীবন থেকে ঝরে পড়ছে। স্মৃতিময় হচ্ছে আমাদের অতীত ইতিহাস। আগামীকে সুন্দর করতে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে পথ চলতে হবে। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি না। যদি শিক্ষা গ্রহণ করতাম, তাহলে আমাদের জীবনের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো সুধরে নিয়ে অপেক্ষাকৃত ত্রুটিমুক্ত সুন্দর ভবিষ্যত রচনা করতে পারতাম।
সমাগত ২০২৪ সাল। বিভিন্ন কারণে ২০২৩ সাল ছিল ঘটনাবহুল ও আলোচিত। এরমধ্যে তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে প্রায় ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু, গাজায় ইস্রাঈলী আগ্রাসনে ২১ সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যু, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশে ২০২৩ সাল শুরু হয়েছিল শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে। কিন্তু ভুলে ভরা পাঠ্যবই, নতুন কারিকুলাম নিয়ে বিতর্ক, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আন্দোলন, এসএসসি ও এইচএসসিতে খারাপ ফলাফল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতাসহ শিক্ষা খাতে নানা ঘটনা ঘটেছে এই বিদায়ী বছরে। এভাবে বছর শুরু হয় ত্রুটিযুক্ত পাঠ্যক্রম দিয়ে এবং বছর শেষে কিছুটা রাজনৈতিক উত্তাপ পড়ে শিক্ষাঙ্গনে।
উল্লেখ্য যে, ২০২৩ সালে প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়। শুরু হয় নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে নানা আলোচনা—সমালোচনা। চলে বছরজুড়ে। বছর শেষে এসেও সেই বিতর্কের উল্লেখযোগ্য কোনো সুরাহা হয়নি। শেষ সময়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের জোরালো দাবি ওঠে নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের। এরই মধ্যে নতুন কারিকুলামে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণিতে বই ছাপানোর কাজ চালাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে আরও চার শ্রেণিতে চালু হচ্ছে নতুন এ কারিকুলাম। এরই আওতায় প্রাথমিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণি এবং মাধ্যমিকে অষ্টম ও নবম শ্রেণি শিক্ষাক্রম পরিমার্জিত হচ্ছে বলে আমরা অবহিত হয়েছি।
যদিও বছরজুড়ে শিক্ষামন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, “শিক্ষায় রূপান্তর একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ, এর বিকল্প নেই। সরকার শিক্ষকদের জন্য ব্যাপক প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে, যা চলমান।
এটা অনিবার্য সত্য যে, শিক্ষা একটি দেশ ও জাতির মেরুদণ্ড। বর্তমান শিক্ষা কারিকুলামের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে নতুন প্রজন্ম। তারাই হবে আগামী বাংলাদেশের কাণ্ডারি। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কাছে আমাদের প্রস্তাবনা হলো, মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশে প্রতিটি ক্লাসে ন্যূনতম ২০০ মার্কের বিশুদ্ধ ইসলাম শিক্ষাকে আবশ্যক করা হোক এবং অন্যান্য বিষয়গুলোতেও যাতে দেশীয় সংস্কৃতি ও ইসলাম বিরোধী কোনো বিষয়ের অনুপ্রবেশ না ঘটে, সে জন্য বিশেষজ্ঞ ও ইসলামী স্কলারগণ সমন্বয়ে আগামীর শিক্ষাক্রম সুবিন্যস্ত করা হোক।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বিদায়ী বছরটি ছিল যোগাযোগখাতের জন্য মাইলফলক। পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, শাহজালাল বিমান বন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, বঙ্গবন্ধু টানেল প্রভৃতি এ দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এছাড়াও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্র বন্দর, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর ইত্যাদির সুফল দেশবাসী নতুন বছরে ভোগ করবে বলে আমরা আশাবাদি।
বিদায়ী বছরের অন্যতম নেতিবাচক দিক ছিল দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। হয়তো ভোক্তা সাধারণকে এর জের টানতে হবে নতুন বছরেও। তাই সর্বসাধারণের কথা বিবেচনায় নিয়ে আমদানীকৃত দ্রব্যের উপর সর্বোচ্চ ভর্তুকি, কৃষির উপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ এবং বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগকে।
অতএব আসুন, অতীতের ভুলত্রুটিগুলো চিহ্নিত করি, সংশোধন করি, আত্মসমালোচনা করি এবং ইখলাস অবলম্বন করে আমাগীর পথ চলি। আল্লাহ সহায়।
আপনার মন্তব্য1