সাময়িক প্রসঙ্গ
কর্মের উপযুক্ত প্রতিদান
হারুনুর রশীদ ত্রিশালী
অতঃপর হে আল্লাহর বান্দাগণ! মহান আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করুন এবং গোপনে ও প্রকাশ্যে তার ভীতি অবলম্বন করুন।
হে মুসলিমগণ! আল্লাহ তা‘আলা এই সৃষ্টিকুলকে সুন্দরতম করে সৃষ্টি করেছেন। তার দ্বীন ও বিধি বিধানকে প্রজ্ঞাপূর্ণ ও সুদৃঢ় করেছেন। তিনিই প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ, অভিজ্ঞ ও দয়ালু। তার সৃষ্টি ও হুকুমে এমন রীতিসমূহ রয়েছে যা মোটেও বিরোধপূর্ণ ও পরিবর্তনশীল নয়। এই রীতিসমূহের অন্যতম হচ্ছে- যেমন কর্ম তেমন ফল। বান্দারা সৎকর্ম করলে উত্তম প্রতিদান পাবে, আর অসৎকাজ করলে শাস্তি পাবে। এটাই (উপযুক্ত প্রতিদান)। শরী‘আতের দাবি ও মুল্যায়ণ এ রকমই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “অতএব কেউ অণু পরিমাণ সৎকাজ করলে সে তা দেখবে। আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎকাজ করলে সে তাও দেখবে।”
ফলে ভাল ‘আমলের ভিত্তিতেই সওয়াব ও প্রতিদান নির্ণয় হয়। অধিকাংশ আমলে সেই প্রতিদান এমনভাবে প্রদান করা হয় যা পরিপূর্ণ ও যথার্থ। অতএব ভাল কর্মের ভিত্তিতে তার প্রতিদান নির্ণয় হয়।
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ্ (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন : “সর্বদা কর্মের ধরণ অনুপাতেই তার প্রতিদান নির্ধারিত হয়।”
যিনি উত্তম কাজ করেন তিনি উত্তম প্রতিদানই পাবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “উত্তম কাজের জন্য উত্তম পুরস্কার ছাড়া আর কী হতে পারে?”
অতএব কেউ মহান আল্লাহর সীমা ও হক্ব রক্ষা করলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে উভয়জগতে রক্ষা করবেন।
রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “তুমি মহান আল্লাহর (বিধি-নিষেধের) রক্ষণাবেক্ষণ করো, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে রক্ষা করবেন।”১
আর বান্দা যদি নিষ্ঠার সাথে সৎ পথ পেতে চায়, আল্লাহ তা‘আলা তাকে হিদায়াত করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “যারা সৎ পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তাদের হিদায়াত আরো বৃদ্ধি করে দেন।”
আর মহান আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ করা- তার প্রতি ও রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যা নিয়ে এসেছেন তার প্রতি ঈমান রাখার অন্তর্ভূক্ত। এর প্রতিদান হচ্ছে, আল্লাহ তা‘আলা যারা তার সাথে অঙ্গীকার রক্ষা করে তাদেরকে জান্নাত প্রদান করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “আমার সঙ্গে তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ করো, আমিও তোমাদের সঙ্গে আমার অঙ্গীকার পূর্ণ করব।”
আর যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস রাখবে, আল্লাহ তা‘আলা তার চাহিদার চেয়েও বেশি দিয়ে তাকে সম্মানিত করবেন।
রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “যদি তুমি আল্লাহ তা‘আলাকে বিশ্বাস করো, তবে তিনি তোমার আশা সত্য করে দেখাবেন।”২
ইবনুল কাইয়্যূম (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন : “রবের প্রতি বিশ্বাস রাখার চেয়ে বান্দার জন্য অধিক উপকারী আর কিছু হতে পারে না। যে তার সকল বিষয়ে মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য অন্যদের তুলনায় বেশি কিছু করেন।”
বান্দা সৎ কাজ ও ‘ইবাদতের মাধ্যমে মহান আল্লাহর যত নিকটবর্তী হবে, মহান আল্লাহও তত তার ঘনিষ্ট হবেন।
হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “আমার বান্দা যদি আমার দিকে এক বিঘত নিকটবর্তী হয়, আমি তার দিকে এক হাত নিকটবর্তী হই। আর সে যদি আমার দিকে এক হাত নিকটবর্তী হয়, আমি তার দিকে দু’হাত নিকটবর্তী হই।”৩
বান্দা তার রবের প্রতি যেমন ধারণা পোষণ করে সে তেমনই ফল পায়। ভাল হলে ভাল, মন্দ হলে মন্দ।
রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “আমি আমার বান্দার নিকট তার ধারণা অনুযায়ী আচরণ করে থাকি।”৪
আর তাওহীদ হচ্ছে যাবতীয় কল্যাণ ও সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। অতএব যে তাওহীদবাদী হয়ে মহান আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, সে জান্নাত লাভ করে বিজয়ী হবে।
রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “আল্লাহ তা‘আলা বলেন : ‘হে আদম সন্তান! তুমি যদি দুনিয়া পরিমান গুনাহ নিয়ে আমার সাথে সাক্ষাত করো, আর তাতে শির্কের গুনাহ না থাকে; তবে আমিও তোমার কাছে সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হব।”৫
যে ব্যক্তি দুনিয়ায় উত্তমভাবে ঈমান এনে তাওহীদের উপর চলবে, তার জন্য পুরস্কার হিসেবে আখিরাতে রয়েছে জান্নাত ও রবের দিদার। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “যারা সৎ কর্ম করেছে তাদের জন্য রয়েছে উত্তম কিছু (জান্নাত) এবং আরো বেশি।”
জান্নাতে সলাতের একটি দরজা আছে, সেই দরজা দিয়ে মুসল্লীদেরকেই আহ্বান করা হবে। ওযূর কারণে ওযূর অঙ্গ-প্রতঙ্গসমূহ উজ্জল হওয়ায় এই উম্মাতকে ক্বিয়ামতের দিন চেনা যাবে। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “ক্বিয়ামতের দিন আমার উম্মাতকে এমন অবস্থায় আহ্বান করা হবে যে, ওযূর প্রভাবে তাদের হাত পা ও মুখম-ল উজ্জল থাকবে।”৬  “যে স্থান পর্যন্ত ওযূর পানি পৌঁছবে সে পর্যন্ত মু’মিন ব্যক্তির উজ্জলতাও পৌঁছবে।”৭
একজন মুয়াজ্জিন আযানে তার স্বরকে দীর্ঘ করেন। ফলে সে অনুযায়ী তিনি প্রতিদান পাবেন। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “ক্বিয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনগণ লোকদের মধ্যে সুদীর্ঘ ঘাড়বিশিষ্ট হবে।”৮  “জ্বীন্, মানুষ, গাছপালা বা পাথর যারাই যতদূর পর্যন্ত মুয়াজ্জিনের আওয়াজ শুনবে, তারাই ক্বিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে।”৯
আল্লাহ তা‘আলাই মাসজিদে তার নাম সমুন্নত ও উচ্চারণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। হাদীসে এসেছে- “মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় যে মাসজিদ তৈরি করে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ একটি ঘর নির্মাণ করেন।”১০
দান-সাদাক্বাহ্ হচ্ছে ঈমানের দলীল এবং তা এমন ঋণ যার বিনিময় মহান আল্লাহর কাছে কয়েকগুণ বেশি। কেউ কিছু দান করলে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য এর চেয়েও উত্তম কিছু রেখে দেন। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “আল্লাহ তা‘আলা বলেন- হে আদম সন্তান! তুমি (অন্যকে) দান করো, তাহলে আমি তোমার উপর দান করব।”১১ অপর হাদীসে এসেছে- “প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশ্তা অবতরণ করেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন। আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন।”১২
রোযাদারদের বলা হবে- “তোমরা তৃপ্তির সাথে পানাহার করো, অতীত দিনে যা করেছিলে তার বিনিময়ে।” মুজাহিদ (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন : “আয়াতটি রোযাদারদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে।” তাদেরকে “রাইয়ান” নামক দরজা দিয়ে প্রবেশের জন্য আহ্বান করা হবে। আর রোযাদারের মুখের গন্ধ মহান আল্লাহর নিকট মিস্কের সুগন্ধির চেয়েও উত্তম।
যিনি মুহরিম (হাজ্জ বা ‘উমরার ইহরাম বাঁধা) অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাকে তালবিয়া পাঠরত অবস্থায় উঠাবেন।
মহান আল্লাহর যিক্র অন্তরকে জাগিয়ে তুলে ও দেহমনকে শক্তিশালী করে। মহান আল্লাহর যিক্রকারীদের উত্তম প্রতিদান হচ্ছে যে, স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা তাদেরক স্মরণ করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব।” যেকোন অবস্থায় মহান আল্লাহকে স্মরণ করলে আল্লাহ তা‘আলা আরও উত্তম অবস্থায় তাকে স্মরণ করেন। হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “সে যখন আমাকে স্মরণ করে তখন আমি তার সঙ্গেই থাকি। যদি সে একাকী আমাকে স্মরণ করে, আমিও তাকে একা স্মরণ করি। আর যদি সে জন সমাবেশে আমাকে স্মরণ করে, আমিও তাকে এর চেয়েও উত্তম সমাবেশে স্মরণ করি।”১৩
মহান আল্লাহর যিক্রের মজলিস জান্নাতের বাগানের ন্যায়। বান্দাদের জন্য তাদের রবের কাছে এ বাগান থেকে ততটুকুই রয়েছে যতটুকুতে তারা অংশগ্রহণ করেছে। হাদীসে এসেছে- তিন ব্যক্তি রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকটে আগমন করলেন। অতঃপর একজন মজলিসের মধ্যে কিছুটা খালি জায়গা দেখে সেখানে বসে পড়লেন এবং অপরজন তাদের পিছনে বসলেন। আর তৃতীয়জন ফিরে চলে গেল। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন : “আমি কি তোমাদেরকে এই তিন ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলব না? তাদের একজন মহান আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করল, আল্লাহ তা‘আলা তাকে আশ্রয় দিলেন। অপরজন লজ্জাবোধ করল তাই মহান আল্লাহও তার ব্যাপারে লজ্জাবোধ করলেন। আর অন্যজন মুখ ফিরিয়ে নিলেন, তাই মহান আল্লাহও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন।১৪
আর দ্বীন ইসলাম হচ্ছে তার অনুসারীদের সম্মান; যে মহান আল্লাহর দ্বীনকে সাহায্য করে, সে নিজেও সাহায্যপ্রাপ্ত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “আর অবশ্যই আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন যে তাঁকে সাহায্য করে।”
যে ভাল কাজের উপদেশ দেয়, সে তা পালনকারীর ন্যায় সওয়াব পাবে। আর যে কেউ কোন ভাল কিছুর প্রচলন করবে, তাহলে সে এর সওয়াব পাবে এবং ক্বিয়ামত অবধি যারা তা ‘আমল করবে, তাদের সমপরিমাণও সওয়াব সে পাবে।
মহান আল্লাহর রীতির অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে তার সৃষ্টির উপর বিভিন্ন বালা-মুসিবত নেমে আসা। আর বিপদ যত মারাত্মক হবে, তার প্রতিদানও তত মহান হবে। অতএব যে সন্তুষ্টচিত্তে ধৈর্য্য ধারণ করবে, তার জন্য মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি বিদ্যমান। আর যে অসন্তুষ্ট হবে, তার জন্য মহান আল্লাহর অসন্তুষ্টি বিদ্যমান। আদেশ, নিষেধ ও তাকদিরের বিষয়ে ধৈর্য্য ধারণ করা ওয়াজিব। যে ব্যক্তি ধৈর্য্য ধারণ করে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ধৈর্য্যশীল রাখেন। আর যে ব্যক্তি তার সুদিনে মহান আল্লাহকে স্মরণ রাখে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে তার দুর্দিনে স্মরণ রাখেন।
প্রচেষ্টার দ্বারাই জ্ঞানার্জন সম্ভব। হাদীসে এসেছে- “যে জ্ঞান অন্বেষণের পথে বের হবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন।”
সকল আদম সন্তানই গুনাহগার। তাদের মধ্যে উত্তম তারাই যারা মহান আল্লাহর কাছে তাওবাহ্ করে। আল্লাহ তা‘আলা যাকে তাওবাহ্ করার সুমতি দেন, ফলে সে মহান আল্লাহর পথে ফিরে এসে তাওবাহ্ করে; আল্লাহ তা‘আলা তার তাওবাহ্ কবুল করেন ও তাকে প্রতিদান দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “যুল্ম করার পরেও যে তাওবাহ্ করে ও নিজেকে সংশোধন করে; তবে নিশ্চয় আল্লাহ তা গ্রহণ করেন।”
মৃত্যুকালে মু’মিন বান্দাকে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও তার বদান্যতার সুসংবাদ দেয়া হয়। এমতাবস্থায় তার কাছে মহান আল্লাহর সাক্ষাত লাভই অধিক প্রিয় হয় এবং মহান আল্লাহও তার এই মু’মিন বান্দার সাক্ষাতকে পছন্দ করেন।
সৃষ্টিজীবের সাথে যে উত্তম আচরণ করে, মহান আল্লাহও তার সাথে দুনিয়া ও আখিরাতে অনুরূপ আচরণ করেন। সৃষ্টির সর্বোচ্চ সম্মানীত ব্যক্তি হচ্ছেন আমাদের নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। যে তার উপর একবার দরুদ পাঠ করে আল্লাহ তা‘আলা তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন। আনসারদেরকে মু’মিনগণ ভালবাসেন। আর যারা তাদের ভালবাসেন, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ভালবাসেন।
করুণা ও দয়াপ্রবণ ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ তা‘আলা অনুগ্রহ করেন। যে মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তা‘আলা তাকে দয়া করেন না। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “যে দয়া করে না, সে দয়া পায় না।”১৫  জনৈকা বেশ্যা নারী দয়াপরবশ হয়ে একটি কুকুরকে পানি পান করানোয় আল্লাহ তা‘আলা তাকে দয়া করলেন এবং ক্ষমা করে দিয়েছেন।
আত্মীয়-স্বজনরাই অধিক ভাল ব্যবহার পাওয়ার অধিকার রাখে। যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে, মহান আল্লাহও তার সাথে নিজ সম্পর্ক বজায় রাখেন।
মানুষকে সালাম প্রদান করলে নিরাপত্তা ও শান্তি পাওয়া যায়। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, নিরাপত্তা পাবে।”১৬
যে মহান আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহ তা‘আলা তার সম্মান বাড়িয়ে দেন। আর যে ব্যক্তি ক্ষমা করে, আল্লাহ তা‘আলা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “তারা যেন ক্ষমা করে ও দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করুন?” ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন : “কাজের ধরণ অনুপাতেই তার প্রতিফল নির্ণয় হয়। তুমি যেমন তোমার সাথে অসদাচরণকারীকে ক্ষমা ও উপেক্ষা করবে, আমিও তোমাকে ক্ষমা করে দিব।”
যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাউকে ভালবাসে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ভালবাসেন। কেউ যদি তার অপর ভাইয়ের জন্য তার অজান্তে দোয়া করে, তখন তার কাছে নিযুক্ত ফেরেশ্তা বলে- “আমীন, আপনাকেও আল্লাহ তা‘আলা তাই দান করুন যা আপনি অমুকের জন্য দু‘আয় চেয়েছেন।”
বৈঠকের স্থান প্রশস্ত করে দেওয়ারও প্রতিদান অনুরূপ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “হে ইমানদারগণ! যখন তোমাদেরকে বলা হয়, মজলিসে স্থান প্রশস্ত করে দাও, তখন তোমরা স্থান প্রশস্ত করে দিও, আল্লাহ তোমাদের জন্য স্থান প্রশস্ত করে দেবেন।”
যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের অনুরোধে তার সাথে সম্পাদিত ক্রয় বিক্রয়ের চুক্তি বাতিল করার সুযোগ দিলো, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তার ত্রুটি বিচ্যুতি মাফ করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বান্দাকে তেমনভাবেই সাহায্য করেন যেমনভাবে সে তার মুসলিম ভাইদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের কোন প্রয়োজন মেটাবে, আল্লাহ তা‘আলা তার প্রয়োজন মেটাবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের বিপদে দূর করবে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তার বিপদ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখবেন।”১৭  আরেক হাদীসে এসেছে- “কোন অভাবীর কষ্ট যে ব্যক্তি দূর করবে, ইহকাল ও পরকালে তার কষ্ট আল্লাহ তা‘আলা দূর করবেন। ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাকে সহায়তা করতে থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার কোন ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে।”১৮
সৃষ্টির কাউকে কোন বিষয়ে কেউ ছাড় দিলে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে বিভিন্ন বিষয়ে ছাড় দেন। যে ব্যক্তি কোন দাস মুক্ত করবে, বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন। যে ব্যক্তি পরিশোধ করার সদিচ্ছা নিয়ে মানুষের নিকট থেকে ঋণ গ্রহণ করল, আল্লাহ তা‘আলা তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা যা দিয়েছেন তা নিয়েই যে মহান আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে স্বাবলম্বী করেন। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “আর যে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ তা‘আলা তাকে স্বাবলম্বী করেন।”১৯
বান্দা যদি হারাম ও হাত পাতা থেকে বেঁচে থাকে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে বাঁচিয়ে রাখেন। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “আর যে নিজেকে চাওয়া হতে বাঁচিয়ে রাখতে চায়, আল্লাহ তা‘আলা তাকে বাঁচিয়ে রাখেন।”২০
কোন বান্দা যদি অপর বান্দার প্রতি নম্র আচরণ করে, মহান আল্লাহও তার প্রতি নম্র আচরণ করেন।  রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “হে আল্লাহ! যে আমার উম্মাতের উপর কোনরূপ শাসনভার পেয়ে তাদের প্রতি নম্র আচরণ করে, তুমি তার প্রতি নম্র ও সদয় হও।”২১
ভাল কাজই কল্যাণ বয়ে আনে, বিপরীতে মন্দ-কর্মে ক্ষতি সাধন হয়। অসৎ কাজের প্রতিফল ততটুকুই যতটুকু সে করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “তোমরা যা করতে তারই প্রতিফল পাবে।”
যে ব্যক্তির অন্তর সত্য গ্রহণে অন্ধ, হাশরের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার দৃষ্টিশক্তি অন্ধ করে দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “যে ইহকালে অন্ধ সে পরকালেও অন্ধ ও অধিকতর পথভ্রষ্ট।”
সত্য জানার পরও যে ব্যক্তি তা থেকে বিমুখ হবে, আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তরকে হিদায়াত থেকে বিচ্যুত করে দিবেন ও তাতে সংশয় ও অপমান ঢেলে দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “তারা যখন বক্র পথ অবলম্বন করল, তখন আল্লাহ তাদের হৃদয়কে বক্র করে দিলেন।”
কল্যাণ ও দ্বীন থেকে বিমুখ হওয়ার শাস্তি হচ্ছে ঈমান নিঃশেষ হয়ে যাওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “আর যখনই কোন সূরা নাযিল হয়, তখন তারা একে অপরের দিকে তাকায় এবং জিজ্ঞেস করে- তোমাদেরকে কেউ লক্ষ্য করেছে কি? তারপর তারা সরে পড়ে। আল্লাহ তাদের হৃদয়কে সত্যবিমুখ করে দেন; কারণ তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা ভালভাবে বুঝে না।”
যে ব্যক্তি আনুগত্যমূলক কাজ ত্যাগ করে ও তা ভুলতে বসে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে অপদস্ত করেন ও পরিত্যাগ করেন এবং তাকে শাস্তির সম্মুখিন করেন। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “তারা আল্লাহকে ভুলে গেছে, সুতরাং তিনিও তাদেরকে পরিত্যাগ করেন।”
অন্তর বিনষ্ট হওয়ার শাস্তি হচ্ছে তা আরও বিনষ্ট হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “তাদের অন্তরে রয়েছে ব্যাধি, ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদের ব্যাধিকে আরও বাড়িয়ে দেন।”
যে ব্যক্তি তার দৃষ্টিকে ধর্ম থেকে আড়াল করে রাখবে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তার দিদার লাভ করা থেকে উক্ত ব্যক্তিকে আড়াল করে রাখবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “কখনো নয়! সেদিন তারা তাদের রব হতে আড়ালে থাকবে।”
পৃথিবীতে সবচেয়ে মারাত্মক অপরাধ হচ্ছে মহান আল্লাহর সাথে র্শিক করা। যার অন্তর গাইরুল্লাহর প্রতি ঝুঁকবে, তাকে সে দিকেই ন্যস্ত করে দেয়া হবে। আর যে লোক দেখানো ‘আমল করবে, তাকে সে রকমই প্রতিফল দেয়া হবে। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “যে ব্যক্তি মানুষকে শুনানোর জন্য ‘আমল করে, আল্লাহ তা‘আলা তার এ কৃতকর্ম মানুষকে শুনিয়ে দিবেন। আর যে মানুষকে দেখানোর জন্য ‘আমল করে, আল্লাহ তা‘আলা তার প্রকৃত উদ্দেশ্যের কথা মানুষের কাছে ফাঁস করে দিবেন।”২২  আর গাইরুল্লাহর ‘ইবাদতকারী উভকালে অপদস্ত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “আর তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য বহু ইলাহ্ গ্রহণ করেছে, যাতে ওরা তাদের সহায় হয়। কখনই নয়, ওরা তো তাদের ‘ইবাদত অস্বীকার করবে এবং তাদের বিরোধী হয়ে যাবে।”
যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর সাথে র্শিক করে কোন ‘আমল করল, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ও র্শিকী বস্তুকে পরিহার করবেন। আর যে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কোন কিছুর ‘ইবাদত করবে, সে জাহান্নামে যাবে। যে ব্যক্তি ইসলাম ভিন্ন অন্য ধর্ম নিয়ে মিথ্যা কোন শপথ করে, তবে সে যা বলেছে তেমনই হবে। আর যে ব্যক্তি কোন ছবি অংকন করল, তা দিয়ে তাকে ক্বিয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে এবং তাকে ঐ ছবিতে রূহ্ দিতে চাপ প্রয়োগ করা হবে, অথচ সে তা করতে অক্ষম। আর যে আল্লাহ তা‘আলাকে অসন্তুষ্ট করে মানুষকে খুশি করতে চায়, আল্লাহ তা‘আলা তার উপর অসন্তুষ্ট হন এবং মানুষকে তার উপর নাখোশ করে দেন। যে মহান আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করা অপছন্দ করে মহান আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাত করা অপছন্দ করেন। আর যে ব্যক্তি ধর্মীয় বিষয়ে চক্রান্ত, ধোঁকা, কুটকৌশলের আশ্রয় নেয়, আল্লাহ তা‘আলা তাকে সুযোগ দেন, অতঃপর হঠাৎ তাকে পাকড়াও করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “আর তারা কুটকৌশল করেছিল, আল্লাহও কৌশল করেছিলেন; আর আল্লাহ শ্রেষ্ঠতম কৌশলী।” তিনি আরও বলেন : “তারা আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করে; বস্তুতঃ তিনি তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেন।”
যে ব্যক্তি নামাযে দেরি করে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে পিছনে রাখেন। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “একদল লোক সব সময় দেরি করে এসে পিছনে দাঁড়ায়; আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে (নিজ রহমত থেকে) পিছনে রাখবেন।”২৩
যে ব্যক্তি দুনিয়ায় মহান আল্লাহর জন্য সাজদাহ্ করা থেকে বিরত থাকবে, ক্বিয়ামতের দিন সে সাজদাহ্ দিতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “স্মরণ করুন সে দিনের কথা যে দিন পায়ের গোছা উন্মোচত করা হবে, সেদিন তাদেরকে ডাকা হবে সাজদাহ্ করার জন্য, কিন্তু তারা সক্ষম হবে না; তাদের দৃষ্টি অবনত হবে, হীনতা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে। অথচ যখন তারা সুস্থ নিরাপদ ছিল তখন তো তাদেরকে ডাকা হত সিজদা করতে।”
অহংকার হচ্ছে সত্য উপেক্ষা করা ও সৃষ্টির উপর বড়ত্ব দেখানো। অহংকারীদেরকে ক্বিয়ামতের দিন অণুর ন্যায় করে উপস্থিত করা হবে, মানুষ তাদেরকে পা দিয়ে পদদলিত করবে। আর যে ব্যক্তি মিথ্যা কিছু ভাইরাল করবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার চোয়াল চিরে গর্দানের পিছন পর্যন্ত নিয়ে আসবেন।
যিনাকারী নর-নারীদেরকে নিচ দিক থেকে জাহান্নামের আগুনের লেলিহান শিখা পাঁকড়াও করবে। আল্লাহ তা‘আল সুদকে সংকোচন করে দেন, আর সুদখোরকে ক্বিয়ামতের দিন পাথরের লোকমা মুখে ঢুকিয়ে দিবেন। যে ব্যক্তি সত্য জ্ঞান গোপন রাখে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাকে জাহান্নামের লাগাম পরিয়ে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন কিছু আত্মসাৎ করবে, সে ক্বিয়ামতের দিন আত্মসাৎকৃত বস্ত নিয়ে উপস্থিত হবে। যে ব্যক্তি অতিরিক্ত পানি অন্যকে দিতে বারণ করে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্বিয়ামতের দিন বলবেন : আজ আমিও তোমাকে আমার পক্ষ থেকে বোনাস দিব না যেমন তুমি দাওনি। যে ব্যক্তি দুনিয়ায় মদ পান করল, আর তাওবাহ্ করল না; ক্বিয়ামতের দিন সে তা থেকে বঞ্চিত হবে।
যে পুরুষ দুনিয়ায় রেশমী পোষাক পরিধান করে, সে পরকালে তা পাবে না। যে ব্যক্তি মিথ্যা দাবি করে স্বীয় সম্পদ বাড়াতে চায়, এর বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা তার সম্পদ ক্ষয় করবেন। নি‘আমত অস্বীকার করলে তা হাতছাড়া হয়। আর আল্লাহ তা‘আলা কোন সম্প্রদায়ের প্রতি তার নি‘আমত ও তাদের স্বচ্ছলতার পরিবর্তন ঘটাবেন না যতক্ষণ না তারা যুল্ম ও পাপাচারে লিপ্ত হয়ে তা পরিবর্তন করে। ধর্মীয় বিধান নিয়ে ঠাট্টা করা ও ঠাট্টাকারীর শাস্তিও অনুরূপ হবে। মহান আল্লাহর কোন বান্দাকে যে ব্যক্তি তিরস্কার করবে, মহান আল্লাহও তাকে তিরস্কারের পাত্র করবেন। মুনাফিক্বের আলামত হলো আনসারদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা, যারা তাদেরকে অপছন্দ করে মহান আল্লাহও তাদেরকে অপছন্দ করেন।
যে ব্যক্তি কোন কিছু দিয়ে আত্মহত্যা করবে, ক্বিয়ামতের দিন তাকে ঐ বস্তু দিয়ে শাস্তি প্রদান করা হবে।
যেহেতু চোর অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদের দিকে স্বীয় হাত প্রসারিত করে, ফলে তা কর্তনযোগ্য হয়ে পড়ে। যে ব্যক্তি তার অধিনস্ত কারো উপর অপবাদ দেয়, অথচ সে নিরপরাধ; তাকে ক্বিয়ামতের দিন বেত্রাঘাত করা হবে। ক্বিয়ামতের দিন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকদের জন্য পতাকা উত্তোলন করা হবে যা দ্বারা তাকে চেনা যাবে। নিরপরাধ কাউকে লা‘নাত করলে তা লা‘নাতকারীর উপরই ফিরে আসবে। যে ব্যক্তি স্বীয় পিতা-মাতাকে অভিশাপ দেয়, আল্লাহ তা‘আলা তাকে অভিশাপ করেন। আর প্রত্যেক যুল্ম ক্বিয়ামতের দিন অন্ধকারে পরিণত হবে। যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ যুল্ম করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার কাধে সাত স্তর জমি ঝুলিয়ে দিবেন।
স্বজনদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা অধিকতর জঘন্যতম কাজ। হাদীসে এসেছে- আল্লাহ তা‘আলা “রাহিম” (রক্তের সম্পর্ক)-কে বললেন : “তুমি কি এতে খুশি নও যে, যে তোমার সাথে সুসম্পর্ক রাখে আমিও তার সাথে সুসম্পর্ক রাখব, আর যে তোমার হতে সম্পর্ক ছিন্ন করবে আমিও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব?”২৪
দুনিয়ায় অন্যায়ভাবে যারা মানুষের উপর নির্যাতন করে, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে শাস্তির হুমকি দিয়েছেন। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “দুনিয়ায় অন্যায়ভাবে যারা মানুষের উপর নির্যাতন করে, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে শাস্তি দিবেন।”২৫ সৃষ্টির ক্ষতিসাধন করা ও তাদের কষ্ট দেওয়ার পরিণতি খুব খারাপ হবে। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “যে অপরের ক্ষতি সাধন করে, আল্লাহ তা দিয়েই তার ক্ষতি করবেন।”২৬
আর যে কোন দায়িত্ব পেয়ে মানুষের প্রতি কঠোর আচরণ করে, তার উপরও কঠোরতা করা হবে। যে অন্যের প্রয়োজন মেটাতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে, আল্লাহ তা‘আলা তার প্রয়োজন মিটানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন।
আর যে মু’মিনদের দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়ায়, আল্লাহ তা‘আলা তার দোষ-ত্রুটিসমূহ ফাঁস করে দিয়ে আপন গৃহে অপদস্ত করবেন।
পরনিন্দা চর্চাকারী তার মুখ দিয়ে মানুষের সম্মান চূর্ণ-বিচূর্ণ করে থাকে, পনিণামে ক্বিয়ামতের দিন তার নখগুলো হবে তামার, তা দিয়ে নিজের মুখম-লে আঁচড় কাটতে থাকবে।
যে ব্যক্তি অন্যদের কথা আড়ি পেতে গোপনে শুনে, অথচ তারা তাকে অপছন্দ করে; ক্বিয়ামতের দিন তার কানে গলিত শিশা ঢেলে দেয়া হবে।
রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর শহর মদিনা; যা নিরাপদ; যারা এর অধিবাসীদের ভীতি প্রদর্শন করবে, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত করবেন।
যার দু’জন স্ত্রী রয়েছে- সে একজনের প্রতি ঝুঁকে পড়ল; সে ব্যক্তি ক্বিয়ামতের দিন তার একপাশ বক্রভাবে ঝুঁকে থাকাবস্থায় উপস্থিত হবে। যে ব্যক্তি ভিক্ষার দুয়ার খুলবে, আল্লাহ তা‘আলা তার অভাবের দুয়ার খোলা রাখবেন। কৃপণতার কারণে বরকত নষ্ট হয়, জবাবদিহিতাও কঠিন হবে। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “গুনে গুনে খরচ করো না, এরুপ করলে মহান আল্লাহও (অগণিত না দিয়ে) গুনে গুনে দিবেন।”২৭
অতঃপর হে মুসলিমবৃন্দ?
আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদের ব্যাপারে অধিক অবগত, তাদের প্রতি তিনি সতর্ক দৃষ্টি রাখেন। অচিরেই তিনি তাদের কৃত কর্মের প্রতিফল দিবেন। কাজের প্রতিদান তার ধরণ অনুপাতেই দেয়া হবে, ভাল ও মন্দ সমানুপাতিকহারে; যেমন কর্ম তেমন ফল। যে ব্যক্তি রবের কাছে তার পরিণতি দেখতে চায়, তার উচিৎ এদিকে লক্ষ্য করা যে সে তার রবের জন্য কী করেছে? কেননা বান্দা মহান আল্লাহকে যেভাবে সম্মান করে, মহান আল্লাহও বান্দাকে সেভাবে মুল্যায়ন করেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “যে সৎকাজ করে সে তার নিজের কল্যাণের জন্যই তা করে এবং কেউ মন্দ কাজ করলে তার প্রতিফল সেই ভোগ করবে। আর আপনার রব তার বান্দাদের প্রতি মোটেই যুল্মকারী নন।”
হে মুসলিমবৃন্দ! দুনিয়া হচ্ছে ‘আমলের স্থান, আর আখিরাত হলো প্রতিদান পাওয়ার স্থান। কখনো কখনো আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাকে দুনিয়াতেই কিছু প্রতিদান দিয়ে থাকেন। আনুগত্যশীল বান্দারা নি‘আমত পেয়ে শুকরিয়া আদায় করে সুসংবাদ গ্রহণ করেন, আর বিপদে ধৈর্য্য ধারণ করে সম্মান ও ক্ষমা লাভ করেন। পক্ষান্তরে অবাধ্য ও বিমুখ ব্যক্তি ফিৎনায় পড়ে, দুনিয়াতেও শাস্তি পায় আর আখিরাতে রয়েছে আরও ভয়াবহতা। আর যদি অবাধ্য হওয়া সত্বেও দুনিয়ায় শাস্তি না পায়, তবে তা হবে ঢিল দেয়ার শামিল; তাকে আল্লাহ তা‘আলা ধীরে ধীরে পাকড়াও করবেন। [খতীব : শাইখ আব্দুল মুহ্সিন বিন মুহাম্মদ আল কাসিম। তারিখ : ১৫/০৫/১৪৪১ হিঃ, ১০ জানুুয়ারি- ২০২০, শুক্রবার।]



১. সুনান আত্ তিরমিযী।
২. সুনান আন্ নাসায়ী।
৩. সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
৪. সহীহুল বুখারী।
৫. সুনান আত্ তিরমিযী।
৬. সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
৭. সহীহ মুসলিম।
৮. সহীহ মুসলিম।
৯. সহীহুল বুখারী।
১০. সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
১১. সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
১২. সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
১৩. সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
১৪. সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
১৫. সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
১৬. সহীহ ইবনু হিব্বান।
১৭. সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
১৮. সহীহ মুসলিম।
১৯. সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
২০. সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
২১. সহীহ মুসলিম।
২২. সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
২৩. সহীহ মুসলিম।
২৪. সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
২৫. সহীহ মুসলিম।
২৬. সুনান আত্ তিরমিযী।
২৭. সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম।

আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 5:43:02 সূর্যাস্ত : 6:09:54

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত