বর্তমানে সারা দেশ শীতে কাপছে। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা হিমালয়ের হিমেল কনকনে হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় সর্বত্র মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। জানুয়ারী মাস আসার সাথে সাথে শীতের দাপটে দেশ জুড়ে জন-জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, লেনদেন, কর্মজীবি মানুষের আয়-রোজগার ও কর্মচাঞ্চল্য, মালামাল ডেলিভারি পরিবহন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা, গ্রামীন অর্থনীতি, কৃষি-খামারসহ সর্বক্ষেত্রে স্থবিরতা বিরাজ করছে। প্রায় মাস জুড়ে শীত কষ্টে দিশেহারা হয়ে পড়েছে দিনে এনে দিনে খাওয়া হতদরিদ্র শ্রমজীবী মানুষজন। সকাল বেলায় শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় আসা-যাওয়া ব্যাহত হচ্ছে। আবার অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রাতে-দিনে তীব্র শীতের কাঁপন এখন দেশজুড়ে। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে থমকে গেছে স্বাভাবিক কর্মজীবনের গতি। কুয়াশার সাথে সাথে ধূলো-বালু, ধোঁয়ায় দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্দি-কাশি, ভাইরাস জ্বর, শাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ ব্যাধিতে মানুষ ঘরে ঘরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাসপাতাল-ক্লিনিক, ডাক্তারের চেম্বারে প্রতিদিনই বেড়েছে রোগীর ভিড়। সড়ক-মহাসড়ক, নৌ ও রেলপথে যানবাহনের গতি থমকে গেছে। বেড়েছে ঝুঁকি। আকাশ পথেও বিলম্বে ছাড়ছে ফ্লাইট। সর্বত্র মানুষের কর্মঘন্টা নষ্ট ও অপচয় ঘটছে বৈরী আবহাওয়ায়।
আবহাওয়া বিভাগ বলছে, শীত ও কুয়াশায় একটি বলয় অর্থাৎ- উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ এখন বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল ও এর সংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে। এর ফলে রাতের তাপমাত্রার তুলনায় অনেক জায়গায় দিনের তাপমাত্রা কমে গেছে এবং শীতের দাপট হঠাৎ করে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমানে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রংপুর বিভাগের রাজার হাটে ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাতের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গেলে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় একে বলা হয় মৃদু শৈত্য প্রবাহ। কিন্তু গত দুই দিন ঢাকাসহ দেশের অনেক জায়গায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার স্বাভাবিক পতন, ঘন কুয়াশা, মেঘলা আকাশ, উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে হিমেল কনকনে হাওয়া প্রবাহিত হওয়া। এসব কারণে প্রায় সারাদেশে তীব্র শীতে মানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগ অসহনীয় হয়ে পড়েছে। দিনের বেলায়ও কাঁপছে মানুষ ঘন কুয়াশা ও শীতের তীব্রতায়। যা কয়েকদিন অব্যাহত থাকার আভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। দেশের কোনো কোনো স্থানে ভোররাত থেকে টিপটিপ বৃষ্টির মতো প্রচণ্ড ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় কাতর হয়ে পড়েছে দেশের খেটে খাওয়া মানুষগুলো। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষসহ শিশু ও বৃদ্ধরা চরম বিপাকে পড়েছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না পশু-পাখিরাও। এছাড়া হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে ডায়রিয়াসহ শীত জনিত বিভিন্ন রোগীর সংখ্যা।
এমতাবস্থায় আমাদের করণীয় হলো শীতার্থ মানুষের সেবায় এগিয়ে আসা। প্রয়োজনীয় শীত বস্ত্রের ব্যবস্থা করে শীতার্থ মানুষের নিকট পৌঁছিয়ে দেয়া। যাতে শীতে কাতর মানুষগুলো কিছুটা শান্তি পায়। মানুষের প্রয়োজন পুরণ করার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। এ মর্মে মহানাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন :
“যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূর্ণ করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার প্রয়োজন পূর্ণ করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের কোনো এক বিপদ দূর করে দিবে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তার বহু বিপদের একটি বিপদ দূর করে দিবেন।”১
অপর হাদীসে মহানাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেন :
“যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের কোনো পার্থিব দুর্ভোগ দূরীভূত করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার ক্বিয়ামতের দিনের দুর্ভোগসমূহের মধ্যে কোনো একটি দুর্ভোগ দূর করবেন। আর যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা তার মুসলিম ভাইয়ের সহযোগিতা করতে থাকে, মহান আল্লাহও সে বান্দার সাহায্য করতে থাকেন।”২
পরিশেষে পাঠকবৃন্দের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি- আসুন! আমরা আমাদের যথাসাধ্য সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে শীতার্থ অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়াই, তাদের প্রয়োজন পূরণ করি, তাদের মুখে হাসি ফুটাই, তাদের সেবায় নিজেদের নিয়োগ করি।
বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীস প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আম জনতার নিকট থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করে অভাবীদের মধ্যে বিতরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। কাজেই জমঈয়ত ফান্ডে ত্রাণ প্রেরণের জন্য জনদরদী, দানবীর জনতার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। যারা এভাবে শীতার্থ মানুষের সেবা করবে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে পূর্ণ প্রতিদান প্রদান করবেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সহায় হোন -আমীন।
১. সহীহুল বুখারী- হাঃ ২৪৪২, সহীহ মুসলিম- হাঃ ২৫৮০।
২. সহীহ মুসলিম- হাঃ ২৬৯৯, আত্ তিরমিযী- হাঃ ১৪২৫।
আপনার মন্তব্য1