সাময়িক প্রসঙ্গ
ঐতিহাসিক আদিনা মসজিদ
আব্দুল মোহাইমেন সা'আদ

ভারতবর্ষের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আমের শহর খ্যাত মালদহ জেলার ফিরুজাবাদে অবস্থিত ইসলামী স্থাপত্যকলার এক অনন্য নিদর্শন এই আদিনা মসজিদ। এটি ছিল তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বড়ো মসজিদ। এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয় ফুস্তাত মসজিদ, দামেশক মসজিদ, সামাররা মসজিদ, আবু দুলাফ মসজিদ ও ইবনু তুলুন মসজিদের নকশার অনুকরণে। মসজিদের পেছনের দেয়ালে প্রাপ্ত একটি শিলা-লিপি অনুসারে মসজিদটি ১৩৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ইলিয়াস শাহের পুত্র আবুল মুজাহিদ সিকান্দার শাহ কর্তৃক নির্মিত। আবুল মুজাহিদ সিকান্দার শাহ ছিলেন ইলিয়াস শাহি বংশের দ্বিতীয় সুলতান। তিনি তিন দশক খুব দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করেছিলেন। সুলতান তার সাফল্যকে চিরস্মরণীয় করে রাখতেই এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। মসজিদটিতে একসঙ্গে ১০০,০০০ মুসল্লি সালাত আদায় করতে পারত। একসময় এটি কেবল বাংলায়ই নয়; বরং গোটা ভারত উপমহাদেশের বৃহত্তম মসজিদ ছিল। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো এই যে, শুধু আকার-আয়তনেই আদিনা মসজিদ বিশ্বের সেরা মসজিদগুলোর সঙ্গে তুলনীয় নয়, নকশা ও গুণগত দিক দিয়েও এটি বিশ্বের সেরা মসজিদগুলোর সমকক্ষ। মসজিদের দেয়ালগুলোর নিচের অংশ পাথর বাঁধানো ইট এবং অন্য অংশগুলো সাধারণ ইটের দ্বারা নির্মিত। মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে ৫২৪ ফুট লম্বা ও ৩২২ ফুট চওড়া। এতে ২৬০টি থাম ও ৩৮৭টি গম্বুজ আছে। এর উন্মুক্ত প্রাঙ্গণের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্বদিকে ১২ মিটার প্রশস্ত খিলানপথে তিনটি ‘আইল’ এবং ২৪ মিটার প্রশস্ত প্রার্থনাকক্ষে পাঁচটি ‘আইল’ আছে, প্রার্থনা কক্ষকে বিভক্ত করেছে একটি প্রশস্ত খিলানছাদ দ্বারা আচ্ছাদিত কেন্দ্রীয় ‘নেভ’। এর আয়তন ২১১০ মিটার এবং যার উচ্চতা ছিল এক সময় প্রায় ১৮ মিটার, বর্তমানে এটি পতিত। স্তম্ভগুলো ভিত্তিমূলে বর্গাকার, মধ্যস্থলে গোলাকার এবং উপরে শীর্ষস্থানের দিকে বাঁকা। কেন্দ্রীয় ‘নেভ’ খিলান দ্বারা আচ্ছাদিত পথ অপেক্ষা অনেক উঁচু এবং পিপাকৃতি ভল্ট দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল, যা এর উচ্চতার জন্য গোটা কাঠামোর উপর প্রাধান্য বিস্তার করেছিল এবং অনেক দূর থেকে দেখা যেত। প্রার্থনা কক্ষের উত্তরে খিলান দ্বারা আচ্ছাদিত পথের উপরের গম্বুজগুলো ত্রিকোণবিশিষ্ট পেন্ডেন্টিভের উপর সংস্থাপিত। বর্তমানে পতিত গম্বুজগুলো, উল্টানো পানপাত্র আকারের ছিল যা সুলতানি আমলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। কিবলা দেয়ালের সন্নিকটে উত্তর পাশে তিন ‘আইল’ জুড়ে একটি এলাকায় এক সারিতে সাতটি মজবুত স্তম্ভের উপর পাথরের মাকসুরা নির্মাণ করা হয়েছে সুলতান ও তার সঙ্গীদের প্রার্থনার স্থান হিসেবে। প্রধান মিহরাবের ডানদিকে রয়েছে এক অনিন্দ্য নিদর্শন চাঁদোয়া শোভিত মিম্বর। মসজিদটি বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত। কালের বিবর্তনে খিলান ছাদযুক্ত প্রবেশদ্বারসহ পশ্চিম দেয়ালের অংশবিশেষ মাত্র টিকে আছে। তারপরও যেন মসজিদটি আগের সেই জৌলুস ধরে রেখেছে দর্শনার্থীদের মনে। 


www.weeklyarafat.com


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত