যাবতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। অতঃপর দরুদ ও সালাম প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি। প্রায় দেড় বছর যাবত সারা পৃথিবীতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। বাংলাদেশেও মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাতাশ হাজারের মতো। করোনার প্রভাবে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যার ফলে জাতির মেরুদ- ‘শিক্ষা ব্যবস্থা’ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে। অনেক মানুষ চাকুরী হারা হয়েছে। মানুষের আর্থিক সংকট চরমভাবে দেখা দিয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে, করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছে। রাস্তা-ঘাটে, পথে-প্রান্তরে ভিক্ষুকের সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অপর দিকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেক মানুষ মারা গিয়েছে। বহু মানুষ আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশের প্রায় বিশটি জেলায় অর্থাৎ- দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্য কবলিত উল্লেখযোগ্য জেলাগুলো হলো- কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল, শরীয়তপুর ও ফরিদপুর। এর মধ্যে পাঁচটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে বন্যা দুর্গতদের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী এবং অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে নিপতিত হয়েছে। দুর্গত এলাকার বেশির ভাগ মানুষ খাদ্য ও খাবার পানির সংকটে রয়েছেন, যা কিনা ভাষায় প্রকাশের নয়।
বেশ কিছুদিন যাবত পদ্মা ও যমুনাসহ দেশের প্রায় ৫৪ নদীতে অব্যাহতভাবে বন্যার পানি বেড়েই চলেছে। এতে করে প্রতিদিনই দেশের নদী তীরবর্তী জনপদের নতুন নতুন এলাকার বাড়ি-ঘরে পানি উঠেছে। অনেক স্থানে রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। মানুষের বাড়িঘরে পানি উঠায় তারা দিশেহারা। কোথায় গিয়ে ঠাঁই নিবে, এ চিন্তায় তারা চিন্তামগ্ন। অনেকে আবার বাড়ির মূল্যবান সম্পদ রেখে অন্যত্র যেতে চাইছেন না। পানি থঁই থঁই ঘরে মাচা করে অথবা টিনের চালে আশ্রয় নিচ্ছেন। বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন স্থানে তলিয়ে গেছে শত শত একর জমির রোপা আমন ও শাক-সবজির ক্ষেত, রাস্তাঘাটসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি ক্লিনিক এবং উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। অকাল বন্যায় কৃষকরা হয়ে পড়েছেন দিশেহারা।একটি বিষয় লক্ষণীয়, করোনা কালে বন্যার মতো বাড়তি দুর্যোগে কেউ দুর্গতদের পাশে নেই। এ যেন ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’। একে তো করোনা আবার বন্যা ও ডেঙ্গু জ্বরের প্রাদুর্ভাব। মানুষের স্বাভাবিক জীবন-ব্যবস্থা চরমভাবে ভেঙ্গে পড়েছে।
দেশের এ পরিস্থিতিতে মানবিক বিবেচনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সেবায় এগিয়ে আসা উচিত। কেননা মানুষ মানুষের জন্য। মানুষ মানুষের সাহায্য ও সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে- এটাই মানুষের কর্ম হওয়া উচিত। কেননা আমাদের দেশে এমন পরিস্থিতি আগে কখনো দেখা যায়নি। বাস্তবে এসব অসহায় মানুষকে সহায়তায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায় থেকে কেউ এগিয়ে আসছে না বললেই চলে। অথচ বিবেকের তাড়নায় ও মানবিকতার প্রয়োজনে এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন ছিলো।
এ মর্মে মহান আল্লাহর অমোঘ বিধান প্রণিধানযোগ্য। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, “সৎকাজ ও তাক্বওয়ার ব্যাপারে তোমরা পরস্পরকে সহযোগিতা করো, পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না। আল্লাহকে ভয় করো, আল্লাহ শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর” (সূরা আল মায়িদাহ্ ৫ : ২)।
মানুষের আপদ-বিপদে সাহায্য ও সহায়তা প্রদান করা একটি অন্যতম পুণ্যের কাজ। মু’মিনদের এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা একান্ত অপরিহার্য। কেননা মু’মিনগণ হলেন একে অপরের ভাই। যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “সকল ঈমানদারেরা তো পরস্পর ভাই-ভাই” (সূরা আল হুজুরা-ত ৪৯ : ১০)।
এ প্রসঙ্গে আমাদের প্রিয় রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, “মুসলিম মুসলিমের ভাই, সে তার উপর অত্যাচার করবে না এবং তাকে অত্যাচারীর হাতে ছেড়ে দিবে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার প্রয়োজন পূরণ করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের একটি বিপদ দূর করে দিবে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তার বহু বিপদের একটি বিপদ দূর করে দিবেন” (সহীহুল বুখারী- হা. ২৪৪২)।
কী চমৎকার বাণী মহান আল্লাহর ও মহানাবী (সা.)-এর। নেকের কাজে সহযোগিতা করা বিশাল পুণ্যের কাজ। আর মানুষের দুনিয়ার বিপদ দূরীভূত করলে আল্লাহ তা‘আলা আখিরাতে তার বিপদ দূরীভূত করে দিবেন। যেদিন কেউ কারো সাহায্যে এগিয়ে আসবে না; বরং সবাই সেদিন আপন লোকদের নিকট থেকে পলায়ন করবে। মহান আল্লাহই হবেন সেদিন মু’মিনদের সাহায্যকারী।
সুতরাং কালক্ষেপণ নয়, আখিরাতের কল্যাণের আশায় অসুস্থ ও রোগাক্রান্ত মানুষের সেবায় এগিয়ে আসা এবং বন্যা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো একান্ত প্রয়োজন। কাজেই বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীসের প্রত্যেক জেলার বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দসহ তাওহীদবাদী জনতার প্রতি আহ্বান- আসুন! আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে করোনায় আক্রান্ত রোগীসহ সকল রোগীদের সেবায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করি এবং বন্যা কবলিত মানুষের সাহায্য-সহযোগিতায় তাদের পাশে দাঁড়াই। তাদের প্রয়োজন পূরণে ভূমিকা পালন করি। কেননা মানুষ মানুষের জন্য। অর্থাৎ- মানুষ মানুষের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে সকল বিপদ ও বালা-মুসীবত থেকে হিফাযত করুন -আমীন।
সা. আ. ৬২ বর্ষ-৪৭-৪৮ সংখ্যা
আপনার মন্তব্য1