নিখাঁদ তাওহীদ জান্নাতের নিশ্চয়তা
عَنْ عُبَادَةَ (ঃ)، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ : ্রمَنْ شَهِدَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، وَأَنَّ عِيسَى عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ، وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ، وَالجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، أَدْخَلَهُ اللَّهُ الجَنَّةَ عَلَى مَا كَانَ مِنَ العَمَلِ
হাদীসের অর্থ : “‘উবাদাহ্ ইবনুস্ সামেত (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ ফরমান : যে ব্যক্তি এ মর্মে স্বাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কোনো সত্যিকারের ইলাই নেই, তিনি একক, তার কোনো শরীক নেই। আর এ কথাও স্বাক্ষ্য দেবে যে, মুহাম্মদ (সাঃ) তার বান্দাহ ও রাসূল। (আরও ঈমান রাখবে যে,) নিশ্চয়ই ‘ঈসা ('আঃ) আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল এবং তার কালিমা, যা তিনি মারইয়ামের মাঝে অনুপ্রবিষ্ট করিয়েছিলেন। আর তিনি তার তরফ হতে রূহ্ বিশেষ। (আরো বিশ্বাস রাখবে যে,) জান্নাত সত্য এবং জাহান্নামও সত্য, তার ‘আমল যা হোক না কেনো, আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।”[১]
রাবী পরিচিতি : ‘ঊবাদাহ্ ইবুনস্ সামিত (রাযিঃ) প্রথম সারির প্রসিদ্ধ সাহাবীগণের অন্যতম। তিনি আনসারদের মধ্যে প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে অনেক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। ইসলামের খিদমতে তিনি অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাঁর পুরো নাম ‘উবাবাহ ইবনুস্ সামেত ইবনু ক্বায়েস ইবনুল আসরুম ইবনু বানী সালেম ইবনে ‘আউফ আল-খাজরাজী আল-আনসারী। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মাদীনায় হিজরত করার ৩৮ বছর আগে মাদীনায় জন্ম গ্রহণ করেন। বর্ণিত আছে যে, তিনি নবুওয়াতের ১০ম বছরে ইসলাম ক্ববুল করেন এবং প্রথম ও দ্বিতীয় ‘বাই‘আতুল ‘আক্বাবা’য় অংশ নেন। তিনি তাঁর গোত্রের প্রতিনিধি ছিলেন। হিজরতের পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর সাথে মুহাজির সাহাবী আবূ মারসাদ আল-গুনভীর (রাযিঃ) সাথে বন্ধুত্ব করে দেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি সর্বদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে থাকতেন। তিনি ইসলামের প্রতিটি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাথে সব সময় থাকার কারণে তিনি সুন্নাতের অনুসরণে বেশি অগ্রণী ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে যাকাত আদায়ের দায়িত্ব দিতেন। তিনি ফক্বীহ ও ক্বারী ছিলেন এবং ইসলামের বিধি-বিধান বুঝতেন। কুরআন সংকলন ও সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য তিনি সাহাবী (রাযিঃ)-গণের মধ্যে সমধিক প্রসিদ্ধ ছিলেন। এই প্রসিদ্ধ সাহাবী ৭২ হিজরীতে ফিলিস্তিনে মৃত্যু বরণ করেন।
হাদীসের ব্যাখ্যা : অত্র হাদীসে কয়েকটি বিষয়ের স্বীকৃতি প্রদানের কথা এসেছে। আর তা হলো- তাওহীদ, রিসালাত, ‘ঈসা ('আঃ)-এর প্রতি কি ধরণের ‘আক্বীদাহ্ হবে, জান্নাত ও জাহান্নাম সত্য বলে স্বীকৃতি দেওয়া।
প্রথমতঃ "لا إله إلا الله"-এ কালিমার প্রতি বিশ্বাস। অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। এটাই তাওহীদের মূল কালিমা। আর আল্লাহ তা‘আলা এই কালিমার জন্যই আসমান ও যমীন এবং এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু আছে সব সৃষ্টি করেছেন। আসমান ও যমীন এবং তাতে যা কিছু আছে, তা সবই যদি এক পাল্লায় তোলা হয়, আর "لا إله إلا الله" “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ” এই কালিমাকে অপর পাল্লায় তোলা হয়, তাহলে এই “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ”-এর পাল্লাই ভারী হবে।
"لَا إِله إلَّا الله" “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ”। এটা মহান আল্লাহর উলুহিয়্যাতের চূড়ান্ত ঘোষণা। উলুহিয়্যাতকে ‘ইবাদতও বলা হয়। যখন বান্দাহর কর্মসমূহ (‘ইবাদত) ‘ইলাহ’-এর প্রতি সম্বন্ধযুক্ত হবে, তখন একে ‘উলুহিয়্যাত বলা হবে। পক্ষান্তরে যখন এটা বান্দার দিকে সম্বন্ধযুক্ত করা হবে, তখন একে ইবাদাত বলা হবে।[২]
এই কালিমার ঘোষণা ও তা ক্বায়েম-এর উপরই মানুষ ও জিন্ জাতির জান্নাত কিংবা জাহান্নাম নির্ভরশীল। এই কালিমার দা‘ওয়াত সর্ব শ্রেষ্ঠ দা‘ওয়াত। সমস্ত নাবী ও রাসূলগণ এই কালিমার দা‘ওয়াত নিয়ে যমীনে আবির্ভূত হয়েছিলেন। এই কালিমার দা‘ওয়াতের পদ্ধতি ও তা ‘আমলী যিন্দেগীতে ক্বায়েম করবার উপায় বর্ণনার জন্য আল্লাহ তা‘আলা অগণিত আসমানী কিতাব নাযিল করেছেন। এই কালিমার প্রতি আহ্বানই ছিল সকল নাবী ও রাসূলের মূল ও একমাত্র দায়িত্ব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن قَبۡلِكَ مِن رَّسُوْلٍ إِلَّا نُوحِيٓ إِلَيۡهِ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنَا۠ فَٱعۡبُدُوْنِ﴾
“আর আপনার পূর্বে এমন কোনো রাসূল প্রেরণ করিনি যার প্রতি এই ওয়াহী করিনি যে, আমি ব্যতীত কোনো হক্ব ইলাহ মা’বূদ নেই। অতএব, তোমরা আমারই ‘ইবাদত করো।”([৩])
“লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ” এই কালিমার যিক্র করতে সমস্ত মাখলুক আদিষ্ট। এটাই যিক্র-এর সর্বোত্তম কালিমা। প্রিয় নাবী (সাঃ) বলেন :
أَفْضَلُ الذِّكْرِ لَا إِلهَ إِلَّا اللهُ.
অর্থাৎ- “সর্বোত্তম যিক্র হচ্ছে- “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ।”([৪])
এই কালিমার স্বাক্ষী চূড়ান্ত স্বীকৃতি। এটা তো সেই কালিমা, যার স্বাক্ষ্য স্বয়ং আল্লহ তা‘আলা প্রদান করেছেন, এর সাক্ষ্য দিয়েছেন ফেরেশ্তাম-লী এবং জ্ঞানীগুনী সকলে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿شَهِدَ ٱللهُ أَنَّهُۥ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَأُوْلُوْا ٱلۡعِلۡمِ قَآئِمَۢا بِٱلۡقِسۡطِۚ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡعَزِيْزُ ٱلۡحَكِيْمُ﴾
“আল্লাহ স্বয়ং স্বাক্ষ্য দেন যে, তিনি ব্যতিত কোনো হক্ব ইলাহ নেই। ফেরেশ্তাগণ এবং ন্যায়ের উপর ক্বায়েম ব্যক্তিবর্গও এই মর্মে স্বাক্ষ্য দেন যে, মহা পরক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই।”([৫])
"لَا إِله إلَّا الله" “লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ” ঈমান ও কুফ্রীর মাঝে পার্থক্য নির্ধারণকারী কালিমা। এই কালিমার স্বীকৃতি ব্যতিত ইসলামে প্রবেশ করা অসম্ভব। মুশরিকদের যাবতীয় র্শিকী বিশ্বাস ও কর্মের বিরুদ্ধে এটা একটি বিপ্লবী ঘোষণা। এই কালিমার স্বীকৃতির ফলে মানুষ দুনিয়াতে উন্নত ও উঁচু মস্তকের অধিকারী হয়। সে শুধু মহান আল্লাহর ‘ইবাদত করে, তাঁরই কাছে হাত পাতে এবং তাঁরই দরবারে সাহায্য চায়; দুনিয়ার কারো কাছে সে তার উন্নত মস্তক নত করে না। শুধু তাই নয়, রোজ হাশ্রে মহান আল্লাহর সাথে সাক্ষাত লাভের একমাত্র সনদ হচ্ছে এই কালিমা "لَا إِله إلَّا الله" ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’।
দ্বিতীয়তঃ "محمد رسول الله"-এ কালিমাংশের প্রতি বিশ্বাস। অর্থাৎ- এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, তিনি মহান আল্লাহর পক্ষ হতে মানব জাতির হিদায়াতের জন্য প্রেরিত । আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
“তিনিই (আল্লাহ) তাঁর রাসূলকে পথ নির্দেশ ও সত্য দ্বীনসহ প্রেরণ করেছেন...।”[৬]
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿يسٓ ١ وَٱلۡقُرۡءَانِ ٱلۡحَكِيْمِ ٢ إِنَّكَ لَمِنَ ٱلۡمُرۡسَلِيْنَ ٣ عَلٰى صِرٰطٖ مُّسۡتَقِيْمٖ﴾
“ইয়া-সীন। প্রজ্ঞাময় কুরআনের কসম নিশ্চয়ই আপনি প্রেরিত রাসূলগণের একজন। সরল পথে প্রতিষ্ঠিত।”[৭]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন :
﴿مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُوْلَ اللهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّيْنَ﴾
“মুহাম্মদ তোমাদের কোনো ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নাবী।”[৮]
আর মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা -এ কথাও ভালভাবে বিশ্বাস করা। তাঁকে মহান আল্লাহর বান্দা হিসাবে বিশ্বাস করার মাঝে তাঁর প্রতি সঠিক ও যথার্থ ইনসাফ নিহিত রয়েছে। ঊলুহিয়্যাতে কিংবা রুবুবিয়্যাতে তাঁর কোনো দখল নেই। তিনি গায়েব জানেন না। মানুষের উপকার কিংবা অপকার করার তাঁর কোনো ক্ষমতা নেই। অনরূপভাবে বিপদ-মুসীবত দূর করার ব্যাপারেও তাঁর করার কিছু নেই। কাজেই তিনি যে মহান আল্লাহর বান্দাহ, তাতে সন্দেহ মুক্ত বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। তিনি (সাঃ) মহান আল্লাহর বান্দা-এর প্রমাণে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿تَبَارَكَ الَّذِيْ نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلٰى عَبْدِهِ لِيَكُوْنَ لِلْعَالَمِيْنَ نَذِيْرًا﴾
“পরম বরকতময় (আল্লাহ) তিনি, যিনি তাঁর বান্দার প্রতি ফয়সালার গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছেন। যাতে সে বিশ্ব জগতের জন্য সতর্ককারী হয়।”[৯]
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿سُبْحَانَ الَّذِيْ أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِيْ بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ﴾
“পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্ত্বা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন।”
তৃতীয়তঃ ‘ঈসা ('আঃ) সম্পর্কে সঠিক বিশ্বাস করা। খ্রিস্টানরা মারইয়াম পুত্র ‘ঈসা ('আঃ)-কে নিয়ে প্রশংসার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করতে করতে অবশেষে তাকে উলুহিয়াতের আসনে বসালো এবং তাকে মহান আল্লাহর পুত্র বলতেও দ্বিধা করল না। আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ বিশ্বাসকে কুফ্রী আখ্যা দিয়ে বলেন :
﴿لَّقَدۡ كَفَرَ ٱلَّذِيْنَ قَالُوْٓا إِنَّ ٱللهَ هُوَ ٱلۡمَسِيْحُ ٱبۡنُ مَرۡيَمَۚ﴾
“নিশ্চয়ই তারা কাফির যারা বলেন- আল্লাহ তিনের এক, অথচ এক উপাস্য আল্লাহ ছাড়া হক্ব কোনো উপাস্য নেই।”[১০]
এ ত্রিত্ববাদী সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা আরো স্পষ্ট করে বলেন :
﴿لَّقَدۡ كَفَرَ ٱلَّذِيْنَ قَالُوٓاْ إِنَّ ٱللهَ ثَالِثُ ثَلَٰثَةٖۘ وَمَا مِنۡ إِلَٰهٍ إِلَّآ إِلَٰهٌ وَٰحِدٌۚ وَإِن لَّمۡ يَنتَهُوْا عَمَّا يَقُوْلُوْنَ لَيَمَسَّنَّ ٱلَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنۡهُمۡ عَذَابٌ أَلِيْمٌ﴾
“তারা অবশ্যই কুফ্রী করেছে যারা বলে আল্লাহ তিনজনের একজন, কারণ এক ইলাহ ছাড়া আর কোনো সত্যিকার ইলাহ নেই। তারা যা বলছে তা থেকে তারা যদি নিবৃত না হয়, তাহলে তাদের মধ্যে যারা কুফ্রী করেছে, তাদেরকে অবশ্যই যন্ত্রণাদায়ক ‘আযাব গ্রাস করবে।”[১১]
আর এটা সুবিদিত যে, বাড়াবাড়ির দরজা দিয়ে সর্ব প্রথম নূহ্ ('আঃ) জাতির মাঝে র্শিক প্রবেশ করে। সে কারণে প্রিয় নাবী (সাঃ) তাঁর শানে বাড়াবড়ি করতে নিষেধ করে বলেন :
্রلَا تُطْرُوْنِيْ، كَمَا أَطْرَتِ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ، فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهُ، فَقُوْلُوْا عَبْدُ اللهِ، وَرَسُوْلُهُগ্ধ.
“মারইয়াম তনয় ‘ঈসাকে নিয়ে খ্রিস্টানরা যেভাবে বাড়াবাড়ি করেছে, তোমরা আমাকে নিয়ে সেভাবে বাড়াবাড়ি করো না। আমিতো কেবল একজন বান্দা। অতএব বলো, আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।”[১২]
চতুর্থতঃ জান্নাত ও জাহান্নামকে সত্য বলে বিশ্বাস করা। এই বিশ্বাস আখিরাতের প্রতি ঈমানের অন্তর্ভুক্ত। জান্নাত ও জাহান্নাম মহান আল্লাহর মাখলুক্ব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
﴿وَٱتَّقُوْا ٱلنَّارَ ٱلَّتِيٓ أُعِدَّتۡ لِلۡكَٰفِرِيْنَ ١٣١ وَأَطِيْعُوْا ٱللهَ وَٱلرَّسُوْلَ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُوْنَ ١٣٢ وَسَارِعُوْٓا إِلَىٰ مَغۡفِرَةٖ مِّنْ رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ أُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِيْنَ﴾
“ভয় করো সেই আগুণ (জাহান্নাম) কে, যা কাফিরদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো, যাতে তোমরা দয়াপ্রাপ্ত হতে পারো। তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে-যার বিস্তৃতি হচ্ছে আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাক্বীদের জন্য তৈরী করা হয়েছে।”[১৩]
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন :
اَخْتَصَمَتِ الجَنَّةُ وَالنَّارُ إِلَى رَبّهِمَا، فَقَالَتِ الجَنَّةُ : يَا رَبِّ، مَا لَهَا لَا يَدْخُلُهَا إِلَّا ضُعَفَاءُ النَّاسِ وَسَقَطُهُمْ، وَقَالَتِ النَّارُ : يَعْنِيْ - أُوْثِرْتُ بِالْمُتَكَبِّرِيْنَ، فَقَالَ اللهُ تَعَالَى لِلْجَنَّةِ : أَنْتِ رَحْمَتِيْ، وَقَالَ لِلنَّارِ : أَنْتِ عَذَابِيْ، أُصِيْبُ بِكِ مَنْ أَشَاءُ، وَلِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْكُمَا مِلْؤُهَا.
“জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়ে তাদের রবের কাছে আরজী পেশ করলো। জান্নাত বলল : হে রব! তার কি হলো, তাতে মানুষের মাঝে কেবল দূর্বল ও ঝরে যাওয়া ব্যক্তিরা প্রবেশ করবে। আর জাহান্নাম বলল : আমিতো কেবল অহংকারী লোকদের পেয়েছি। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতকে বলবেন : তুমি হলে আমার রহমত। আর জাহান্নামকে বলবেন : তুমি হলে আমার ‘আযাব। আমি যাকে দিয়ে ইচ্ছা তোমাকে পাইয়ে দেব। আর তোমাদের প্রত্যেককে পরিপূর্ণ করে দেওয়া হবে।”[১৪]
উপর্যুক্ত কুরআন ও সহীহ হাদীসের দ্বারা এ কথা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে, জান্নাত ও জাহান্নাম আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টি করে রেখেছেন। এটি আখিরাতের প্রতি ঈমানের বিষয়। এ বিষয়ে সন্দেহ থাকলে ঈমান থাকবে না।
হাদীসের শিক্ষাসমূহ-
১. জান্নাত লাভের প্রধান শর্ত হলো নিখোঁদ তাওহীদে বিশ্বাস এবং এ দাবী অনুযায়ী নিষ্ঠার সাথে ‘ইবাদত করা।
২. মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর রিসালাতে বিশ্বাস স্থাপনের সাথে সাথে পরিষ্কারভাবে এও বিশ্বাস করতে হবে যে, তিনি মহান আল্লাহর বান্দাহ। রুবুবিয়াতে তার কোনো দখল নেই।
৩. কারো প্রসংশার ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় বাড়াবাড়িকে গুল বলা হয়। এটা শিরকের প্রথম প্রবেশ দার। কাজেই সহীহ হাদীস বর্ণিত গুন ও প্রসংশা ছাড়া নাবীর শানে বাড়িয়ে কোনো প্রসংশা করা যাবে না।
৪. ‘ঈসা ('আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র হিসাবে খ্রিস্টানদের দাবী এ হাদীসে বাতিল বলে ঘোষনা করা হয়েছে। এ ধরনের বিশ্বাস হতে সতর্ক থাকতে হবে।
৫. জান্নাত-জাহান্নামও এতদ্বোভয় সম্পর্কে ঈমান আনা আখিরাতের প্রতি ঈমানের অন্তর্ভূক্ত বিষয়।
উপসংহার : খাঁটি ঈমান ছাড়া মহান আল্লাহর রহমত পাওয়া যাবে না। আমাদের সমাজের কিছু তথাকথিত ইসলামী চিন্তাবিদ আছে, যাঁরা মনে করেন- পৃথিবীর কোনো মানুষকে কাফির বলা যাবে না। আবার কেউ কেউ বলেন, তাওহীদ হতে বিচ্ছুত কোনো বিভ্রান্ত মুশরিককে কাফির বলা যাবে না। তাঁদের যুক্তি হলো ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানরাতো মহান আল্লাহকে মানে এবং শী‘আহ্ ও রাফেজীরাতো ‘লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ এ কালিমা পাঠ করে। কাজেই তাদেরকে কাফির বলা যাবে না। অথচ আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং কাফিরগণকে কাফির হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। যা ইতোপূর্বে প্রমাণসহ উল্লেখ করা হয়েছে। অতএব, ঈমান-‘আক্বীদাহ্ সঠিক করতে হবে এবং কাফির-মুশরিক সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখতে হবে- হাদীসের মর্ম তা-ই বলে। ‘আমল যা-ই থাকুক না কেন, আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন হাদীসাংশ দ্বারা বুঝা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলা শিরকের গুনাহ মাফ করবেন না। বান্দা তাওহীদের উপর ক্বায়েম থাকলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে মাফ করে দেবেন ও জান্নাত দান করবেন। অতএব, সর্বাবস্থায় শিরক হতে সাবধান!।
টীকাসমূহ-
[১]. সহীহুল বুখারী- হাঃ ৩৪৩৫ ও সহীহ মুসলিম- হাঃ ২৮।
[২]. ইবনু উসাইমিন কিতাবুত তাওহীদ-এর শরাহ ‘আল কাওলুল মুফীদ’ ইবনু জাওযী- ১/১৬।
[৩]. সূরাহ্ আল আম্বিয়া- ২১ : ২৫।
[৪]. সহীহ সুনান আত্ তিরমিযী লিল আলবানী- ৩/২৬৯৪।
[৫]. সূরা আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৮।
[৬]. সূরা আস্ সাফ্ ৬১ : ৯।
[৭]. সূরা ইয়া-সীন ৩৬ : ১-৪।
[৮]. সূরা আল আহযা-ব ৩৩ : ৪০।
[৯]. সূরাহ্ আল ফুরক্বা-ন ২৫ : ১।
[১০]. সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫ : ১৭।
[১১]. সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫ : ৭৩।
[১২]. সহীহুল বুখারী- হাঃ ৩৪৪৫।
[১৩]. সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৩১-১৩৩।
[১৪]. সহীহুল বুখারী- হাঃ ৭৪৪৯ ও সহীহ মুসলিম- হাঃ ২৮৪৬।
আপনার মন্তব্য1