১৯২২ সালের কথা। মহাদেশীয় কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার নিয়মিত বিশেষ সংবাদ দাতা হিসেবে নিজ দেশ অষ্ট্রিয়া ত্যাগ করি এবং আফ্রিকা ও এশিয়া সফর করি। সেই থেকে প্রায় পুরো সময়টাই প্রাচ্যের ইসলামী দেশগুলোতে কাটাই। যে দেশগুলোর সংস্পর্শে আসি তাদের সম্পর্কে আমার প্রথম দিকের কৌতুহল একজন বহিরাগতের যেমনটি থাকে তদ্রুপ। যে সামাজিক ব্যবস্থা ও জীবনাচরণ অবলোকন করলাম, তা ইউরোপীয়দের থেকে মৌলিকভাবে ভিন্ন। প্রথম হতেই আমার মাঝে ইউরোপের ব্যস্তত্রস্ত জীবন-যাপনের বিপরীতে অধিকতর শান্ত (আমার বরং বলা উচিৎ অধিকতর মানবিক) জীবন চেতনার প্রতি সহানুভূতি জাগে। এ সহানুভূতি ক্রমান্বয়ে আমাকে দু’টি জীবনবোধের পার্থক্যের কারণ খুঁজে বের করতে ও মুসলিমদের ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি আগ্রহী করে তোলে। সে সময় অবশ্য ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় নেওয়ার মতো আমার আগ্রহ তত প্রবল ছিল না। তবে তা আমার সামনে একটি প্রগতিশীল সমাজের মানবিক চিত্র তুলে ধরে। ন্যূনতম অন্তর্বিরোধ এবং সর্বোচ্চ যথার্থ ভ্রাতৃত্ববোধের ভিত্তির উপর সে সমাজ গড়ে উঠেছে। অবশ্য আজকে মুসলিম জীবন ইসলামী শিক্ষা থেকে যোজন যোজন দূরেÑ এটা অনুভব করলাম। ইসলামের এককালের প্রগতি ও প্রাণ-চাঞ্চল্য এখন তাদের মাঝে আলস্য ও স্থবিরতা রূপ লাভ করেছে। মহত্ত্ব ও আত্মত্যাগের সদাব্যগ্রতা যা বিগত মুসলিম জীবনে ছিল তা আজ সংকীর্ণচিত্ততা ও আয়েশী জীবনের বিকৃতি রূপ লাভ করেছে।
সত্য উদঘাটনে অনুপ্রাণিত এবং একই সাথে অতীত ও বর্তমানের মধ্যে সুস্পষ্ট অসংগতি দেখে হতবাক হই। অধিকতর আন্তরিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমার সম্মুখে আগত সমস্যাগুলো বুঝতে চেষ্টা করি। অর্থাৎ- ইসলামের চৌহদ্দির মধ্যে নিজেকে কল্পনা করি। এটা পুরোপুরি বুদ্ধিবৃত্তিক গবেষণা। অতি অল্প সময়েই সঠিক সমাধান খুঁজে পাই। বুঝতে পারি মুসলমানদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের একক ও একমাত্র মূল কারণ। আর তা হলো মনোবৃত্তিগতভাবে ইসলামী শিক্ষার যথার্থ অনুসরণ হতে তারা ক্রমান্বয়ে দূরে সরে এসেছে। ইসলাম আজও আছে, তবে তা আত্মা ছাড়া দেহ। যে বিশেষ উপাদান একদা বিশ্ব মুসলিমের নিয়ামক শক্তি ছিল তাই এখন তার অধঃপতনের কারণ। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা গোড়া হতেই কেবলমাত্র ধর্মীয় ভিত্তির উপর গড়ে উঠেছে। এ ভিত দুর্বলকরণের অনিবার্য ফল হিসেবে সাংস্কৃতিক কাঠামো দুর্বল হয়েছে এবং সম্ভবত তার (সাংস্কৃতিক কাঠামোর) চূড়ান্ত বিলুপ্তি ঘটাবে।
ইসলামী শিক্ষা কতই না সুস্পষ্ট ও দারুণ বাস্তব- এ কথা যতই উপলব্ধি করি, ততই তীব্র কৌতুহল জাগে তাহলে মুসলমানরা কেন এ শিক্ষাকে পুরোপুরি বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারছে না। লিবিয়া মরুভূমি ও পামির মালভূমির মধ্যবর্তী, বসফরাস জলরাশি ও আরব সাগরের অন্তর্গত প্রায় সকল দেশের চিন্তাশীল মুসলিমদের সাথে এ সমস্যা নিয়ে কথা বলি। ব্যাপারটি আমার সমস্ত মনকে এতটাই আচ্ছন্ন করে ফেলল যে, ইসলামী জগৎ সম্পর্কে অপর সকল বুদ্ধিবৃত্তির কৌতুহল ম্লান হয়ে গেল। জিজ্ঞাসুভাব ক্রমান্বয়ে জোরদার হলো। তা এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছল যে, একজন অমুসলিম হয়েও এমনভাবে তাদের সাথে কথা বলতে লাগলাম যেনো তাদের অবহেলা আর নিশ্চেষ্টতা হতে ইসলামকে প্রতিরক্ষা দিতে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছি। এ অগ্রগতিটা আমার বোধে আসেনি যতক্ষণ পর্যন্ত ১৯২৫ সালে আফগানিস্তানের পার্বত্য এলাকায় এক যুবক গভর্ণর আমাকে বললেন, “আরে! আপনি তো একজন খাঁটি মুসলমান। তফাৎ হলো কেবল আপনি নিজেই তা জানেন না”। এ কথা আমাকে হতচকিত করল, আমি নীরব থাকলাম। কিন্তু ১৯২৬ সালে আবার যখন ইউরোপ ফিরে এলাম, তখন বুঝলাম আমার যৌক্তিক দৃষ্টিভঙ্গি আমাকে ইসলাম গ্রহণ করতে বলছে।
এটা আমার মুসলমান হওয়ার প্রেক্ষাপট। তখন থেকে প্রায়ই আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, “আপনি কেন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন? কোন দিকটি আপনাকে বিশেষভাবে মুগ্ধ করল?” আমার সন্তোষজনক জবাব নেই, এটা স্বীকার করতেই হয়। ইসলামের কোন বিশেষ শিক্ষা নয়; বরং এর সামগ্রিক নৈতিক শিক্ষা ও বাস্তব জীবন কর্মসূচির অপূর্ব সুষম কাঠামোই আমাকে আকর্ষণ করেছে। এটা ব্যাখ্যা করে বুঝানো যায় না। ইসলামের কোন বিষয়টি/দিকটি অপর কোন দিকের চেয়ে আমার কাছে বেশি আকর্ষণীয় তা আজ অবধি বলতে পারব না। আমার কাছে ইসলাম একটি নিখুঁত ভবন নির্মাণ নকশা। এর সকল অঙ্গ সংগতিপূর্ণভাবে একটি অপরটির পরিপূরক ও সহায়ক। কোন কিছুই প্রয়োজনাতিরিক্ত নয়, আবার কোনটায় ঘাটতিও নেই। ফলে তা সম্পূর্ণ ভারসাম্যতা ও নির্ভেজাল শান্তির (ংড়ষরফ পড়সঢ়ড়ংঁৎব) রূপ পরিগ্রহ করেছে। ইসলামী শিক্ষায় “সবকিছু যথাস্থানে আছে” এ ধারণাই সম্ভবতঃ আমাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে। অপরাপর অনুভূতিও কাজ করে থাকতে পারে তা আজ ব্যাখ্যা করতে পারব না। মোটের উপর বিষয়টি ভালবাসার, যা বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে- আমাদের আকাংখা ও নিঃসঙ্গতা, উচ্চাভিলাষ ও ত্রুটি-বিচ্যুতি, আমাদের শক্তি ও দুর্বলতা। আমার বেলাও তাই ঘটেছে। একজন ডাকাত যেমন দূরবর্তী স্থান হতে এসে বাড়িতে ঢোকে, আমার কাছে ইসলাম সেভাবেই এসেছে। পার্থক্য হলো ডাকাত থেকে যায় না, ইসলাম আমার মাঝে চিরদিনের জন্য এসেছে। ###
g~j
: gynv¤§` Avmv`
Abyev`
: †gv. †gvL‡jmyi ingvb
আপনার মন্তব্য