সম্পাদনায় : আব্দুল মতিন
শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক- জমঈয়ত শুব্বানে আহলে আহলে হাদীস বাংলাদেশ ও যুগ্ম-পরিচালক, শুব্বান রিসার্চ সেন্টার।
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রথম খুতবাহ্
অতঃপর, অবশ্য পালনীয় সৎকর্ম আদায়ের দ্বারা এবং হারাম-পাপাচার পরিহার করার মাধ্যমে আপনারা মহান আল্লাহকে ভয় করুন। তবেই আপনারা সুন্দর জীবন ও উত্তম পরিণাম লাভ করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “এটা আখিরাতের সে আবাস যা আমরা নির্ধারিত করি তাদের জন্য যারা জমিনে ঔদ্ধত্য ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। আর শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য।”
হে মুসলমানগণ! আল্লাহ তা‘আলা এই জগতকে সৃষ্টি করেছেন সৃষ্টির ওপর স্বীয় নির্দেশ পূর্ণ করতে, নিজ ইচ্ছাকে প্রতিষ্ঠিত করতে, তাদের মাঝে তাঁর বিধানকে পূর্ণ প্রজ্ঞার সাথে বাস্তবায়ন করতে এবং নিজ তাদবীরে তাদেরকে পরিচালনা করতে; তিনিই তাঁর জ্ঞান, প্রজ্ঞা, দয়া ও ক্ষমতা দিয়ে পরিচালনা করেন। আর মানুষ এক অবস্থা হতে অন্য অবস্থায় পরিবর্তিত হয়; ফলে তারা মহান আল্লাহর দয়া ও কৃপার মাঝে এবং তাঁর ইনসাফ ও হিকমতপূর্ণ আচরণের মাঝেই অবস্থান করে।
মানুষ যেসব সুখ, শান্তি ও আনন্দ লাভ করে তা কেবল তাঁরই বিশেষ দয়া ও অনুগ্রহের কারণে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “যা কিছু কল্যাণ আপনার হয় তা আল্লাহরই কাছ থেকে।” তিনি আরো বলেন : “আল্লাহ মানুষের প্রতি কোনো অনুগ্রহ অবারিত করলে কেউ তা নিবারণকারী নেই এবং তিনি কিছু নিরুদ্ধ করতে চাইলে পরে কেউ তার উন্মুক্তকারী নেই। আর তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।”[১] তিনি আরো বলেন : “তোমরা কি দেখো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছুই তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করেছেন।”[২] তিনি আরো বলেন : “যা কিছু নি‘আমত তোমরা পেয়েছ তা কেবল আল্লাহর পক্ষ থেকেই।”[৩] তিনি আরো বলেন : “আর তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ গুণলে তার সংখ্যা নির্ণয় করতে পারবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[৪]
অতএব যাবতীয় সুখ-শান্তি ও নি‘আমতের উৎস মহান আল্লাহর কাছে এবং এর সমাপ্তিও তাঁরই নিকটে। বান্দাদের উপর মহান আল্লাহর অন্যতম নি‘আমত হচ্ছে যে, তিনি বান্দার নি‘আমতকে স্থায়ী ও বৃদ্ধি করার জন্য তাঁর শুকরিয়া আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সাথে সতর্ক করেছেন যেনো অকৃতজ্ঞ না হয়, নচেৎ নি‘আমত থেকে বঞ্চিত হবে। এই মর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “আর স্মরণ করুন, যখন তোমাদের রব ঘোষণা করেন, তোমরা কৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে আরো বেশী দিব আর অকৃতজ্ঞ হলে নিশ্চয় আমার শাস্তি তো কঠোর।”[৫]
আর নি‘আমতের শুকরিয়া আদায় করতে হবে র্ফয/ওয়াজিব পালনের মাধ্যমে, যাবতীয় পাপকার্য ও অশ্লীলতা পরিহার করার মাধ্যমে, যে কাজে আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্ট হন সে কাজে নি‘আমতগুলোকে ব্যবহার করার মাধ্যমে এবং নি‘আমতদাতা মহান আল্লাহকে সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে। তিনি বলেন : “আর তোমরা আল্লাহর নি‘আমতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা শুধু তাঁরই ‘ইবাদত করে থাকো।”[৬] তিনি আরো বলেন : “হে দাঊদ পরিবার! তোমরা কৃতজ্ঞতার সাথে কাজ করতে থাকো। আর আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ।”[৭]
অতএব, হে মুসলিম ভাই! আপনার উপর মহান আল্লাহর নি‘আমত ও অনুগ্রহকে স্মরণ করুন, আর চিন্তা করুন আপনি হক্বদার না হয়েও আপনার রব শুরু থেকেই কীভাবে আপনার উপর অনুগ্রহ করে আসছেন! এজন্য আপনি আপনার রবের গুণকীর্তন করুন সেভাবে যেভাবে নাবী কারীম (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার রবের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলতেন : “হে মহা ক্ষমাশীল! রহমত নিয়ে দু’হাত প্রশস্থকারী, হে সকল গোপন তথ্যের অধিকারী! সকল আবদারের শেষ ঠিকানা, ওহে মহান উদারতা ও কৃপার অধিকারী! দাবীদার হওয়ার পূর্বেই শুরু থেকেই অনুগ্রহকারী, হে আমাদের রব! ওহে আমাদের মালিক! আমাদের অভিভাবক, আমাদের আশা আকাঙ্খার মধ্যমণি, হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি আপনি আমার চেহারা-দেহকে জাহান্নামের আগুনে পোড়াবেন না।” ইমাম হাকিম তার ‘মুস্তাদরাক’ গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং হাদীসটিকে সনদগতভাবে সহীহ বলেছেন।
নি‘আমতের কথা স্মরণ করলে ও নি‘আমতের কদর করলে মহান আল্লাহর প্রতি মুহব্বত তৈরি হয় এবং তাঁর বিধান লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে লজ্জা-শরম তৈরি হয় (ফলে সে অন্যায় থেকে বিরত থাকে)। একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি কীভাবে তার প্রতি সদয়াচরণকারীর সাথে দুর্ব্যাবহার করতে পারে? ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) হতে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে মুহব্বত করো। কেননা তিনি তোমাদেরকে তাঁর নি‘আমতরাজী হতে খাদ্য খাওয়াচ্ছেন। আর মহান আল্লাহর মুহব্বতে তোমরা আমাকেও মুহব্বত করো এবং আমার মুহব্বতে আমার আহলে বাইতকেও মুহব্বত করো।”[৮]
অতএব বান্দাদের উপর এ সকল কল্যাণ, বরকত ও নি‘আমত সবই মহান আল্লাহর পরিচালনায় ও কৃপায় সংঘটিত। কেউ তাঁর ‘ইবাদত ও আনুগত্য করে এসব নি‘আমতের বদলা বা প্রতিদান দিতে সক্ষম নয়। সবই তাঁর দয়া ও কৃপা। তবে আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদেরকে ক্ষমা করেন, অনুগ্রহ করেন এবং ইখলা-স ও সুন্নাত অনুযায়ী তাদের অল্প ‘আমলেই তিনি তাদের উপর সন্তুষ্ট হন। আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) হতে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “তোমাদের কেউই নিজ ‘আমলের দ্বারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তারা বললেন : আপনিও কি হে আল্লাহর রাসূল?! তিনি বললেন : আমিও না, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা আমাকে তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ দিয়ে আবৃত না করেন।”[৯]
‘সালফে সালেহীন’দের ব্যাপারে ইবনু রজব (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন : “তারা যেসব ‘আমল করতেন ও তাওবাহ্ ইস্তিগফার করতেন সে ব্যাপারে তারা সন্দিহান ও ভয়ে থাকতেন যে, হয়ত তাদের সে‘আমল কবুল হয়নি! এ কারণে তারা আরো বেশি তাক্বওয়া অবলম্বন করতেন এবং বেশি বেশি সৎ ‘আমলের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতেন।” হাসান বসরী (রাহিমাহুল্লা-হ) বলেন : “আমি এমন অনেক লোককে পেয়েছি যে, তারা যদি দুনিয়া সমপরিমাণ দান-সাদাক্বাহ্ করত, তবুও তারা নিজের বিশাল পাপের কারণে নিরাপদ নয়।”
মানুষের সুখ শান্তি, স্বচ্ছলতা, নি‘আমত ইত্যাদি যেমন আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নির্ধারিত ফয়সালা এবং তাঁর দয়ার অন্তর্ভুক্ত, ঠিক তেমনি তাদের দুঃখ-কষ্ট, বিপদাপদ, শাস্তি ইত্যাদি এগুলোও আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নির্ধারিত ফয়সালা এবং তাঁর ইনসাফ ও হিকমতের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “আল্লাহই সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা। আর তিনিই সমস্ত কিছুর তত্ত্বাবধায়ক।” হাদীসে এসেছে- ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আম্র (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) হতে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “আল্লাহ তা‘আলা সকল মাখলুকের তাকদীর আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বেই লিখে রেখেছেন। তখন তাঁর আরশ পানির উপরে ছিল।”[১০]
আল্লাহ তা‘আলা বিভিন্ন উপকরণ/সবাব (কারণ) সৃষ্টি করেছেন, এগুলোর পরে কী হবে তাও সৃষ্টি করেছেন। মহান রব অনেক কিছুই উপকরণ/উপসর্গ দিয়ে সৃষ্টি করেন, আবার অনেক কিছু উপসর্গ বিহীন সৃষ্টি করেন। তিনি যা চান তা-ই হয়, যা চান না তা সংঘটিত হয় না। তিনি ভাল কিছু দিয়ে পরীক্ষা করেন, মন্দ কিছু দিয়েও পরীক্ষা করেন। তাই তো তিনি বলেন : “আমরা তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমাদের কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।”[১১] অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আনুগত্যশীল কৃতজ্ঞ বান্দাদেরকে পুরস্কৃত করবেন, আর অবাধ্য অস্বীকারকারীদেরকে শাস্তি দিবেন। অতএব এই দুনিয়া মহান আল্লাহর নিয়ম অনুপাতেই চলবে যা তিনি কুরআনে বর্ণনা করে দিয়েছেন। এই জগতকে তিনিই পরিচালনা করেন; তিনিই মহান ইলাহ, ক্ষমতাবান, দয়ালু, পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “তিনি সব বিষয় পরিচালনা করেন, আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা তোমাদের রবের সঙ্গে সাক্ষাত সম্পর্কে নিশ্চিত বিশ্বাস করতে পার।”[১২] তিনি আরো বলেন : “তিনি সব বিষয় পরিচালনা করেন। তাঁর অনুমতি লাভ না করে সুপারিশ করার কেউ নেই। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব; কাজেই তোমরা তাঁরই ‘ইবাদত করো। তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?”[১৩] তিনি আরো বলেন : “আসমানসমূহ ও জমিনে যারা আছে সবাই তাঁর কাছে প্রার্থী, তিনি প্রত্যহ গুরুত্বপূর্ণ কাজে রত।”[১৪] হাদীসে এসেছে- আবূ দারদাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) হতে বর্ণিত। নাবী কারীম (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “তিনি প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ কাজে রত রয়েছেন। তাঁর অন্যতম কাজ হচ্ছে- গুনাহ ক্ষমা করা, বিপদাপদ দূর করা, আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেয়া, কাউকে সম্মানিত করা আর কাউকে অপদস্থ করা।”[১৫]
যদি মানুষের ইচ্ছামত জগত চলত তাহলে নাবী রাসূলগণ বিভিন্ন পরীক্ষায় পড়তেন না এবং তারা ও তাদের অনুসারীদের শেষ পরিণতি ভাল হত না! তাদের বিরুদ্ধাচারণকারীরা শাস্তির সম্মুখীন হত না! কিন্তু সকল আদেশ তো একমাত্র মহান আল্লাহরই। তিনি বলেন : “বলুন, সব বিষয় মহান আল্লাহরই ইখতিয়ারে।” তিনি আরো বলেন : “তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব। আধিপত্য তাঁরই। আর তোমরা তাঁর পরিবর্তে যাদেরকে ডাক তারা তো খেজুরের আঁটির আবরণেরও মালিক নয়।”[১৬]
বালা-মুসিবতের দ্বারা মুসলিম বান্দার গুনাহ মোচন করা হয় এবং তার সম্মান বৃদ্ধি করা হয়। আবূ হুরাইরাহ্ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) হতে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “মু‘মিন নারী-পুরুষের ওপর, তার সন্তানের ওপর ও তার ধন-সম্পদের ওপর অনবরত বিপদাপদ লেগেই থাকে। অবশেষে সে মহান আল্লাহর সাথে গুনাহমুক্ত অবস্থায় মিলিত হয়।”[১৭]
মুহাম্মাদ ইবনু খালেদ সুলামী (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু)-এর দাদা হতে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “মহান আল্লাহর তরফ হতে কোনো মানুষের জন্য যখন কোনো মর্যাদা নির্ধারিত হয়, যা সে ‘আমল দিয়ে লাভ করতে পারে না, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে তার শরীরে বা তার ধন-সম্পদে অথবা তার সন্তানাদির উপর বালা-মুসিবত দিয়ে পরীক্ষা করেন। এতে তাকে ধৈর্যধারণ করার শক্তিও দেন। অবশেষে সে ঐ মর্যাদা লাভ করে যা মহান আল্লাহর তরফ হতে তার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।”[১৮]
বান্দার দ্বীনদারীতার ধরন অনুপাতে তার উপর বালা-মুসিবত আসে। মুস’আব ইবনু সা‘দ (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু)-এর বাবা হতে বর্ণিত। তিনি (সা‘দ) বলেন : আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! মানুষের মধ্যে কারা বেশি কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন? তিনি বললেন : “নাবীগণ, তারপর পর্যায়ক্রমে যারা উত্তম তারা। মানুষকে তাদের ধর্মানুরাগের অনুপাতে পরীক্ষা করা হয়। তুলনামূলভাবে যে ব্যক্তি বেশি ধার্মিক তার পরীক্ষাও সে অনুপাতে কঠিন হয়ে থাকে। আর যদি কেউ তার দ্বীনদারীতার বিষয়ে দুর্বল ও শিথিল থাকে তাহলে তাকে সে অনুপাতেই আল্লাহ তা‘আলা পরীক্ষা করেন। এভাবেই বান্দার উপর বিপদাপদ লেগেই থাকে, অবশেষে তা তাকে এমন অবস্থায় ছেড়ে দেয় যে, সে জমিনে চলাফেরা করে অথচ তার কোনো গুনাহই থাকে না।”[১৯]
বিপদাপদ, বালা-মুসিবত ও দুর্যোগে ধৈর্যধারণ ও সওয়াবের প্রত্যাশা করার মাধ্যমে মুসলমানদেরকে প্রতিদান দেওয়া হয়। এগুলোতে মানুষের জন্য উপদেশ রয়েছে; যেনো তারা চিন্তা করে যে, এটা কী ধরনের পাপের ফসল? অতঃপর যেনো সে অপরাধ দ্বিতীয়বার না করে এবং এর চেয়েও জঘন্য অপরাধে জড়িত না হয়। যেনো এর চেয়েও বড় শাস্তির সম্মুখীন হতে না হয়। সেই সাথে যেনো স্মরণ করে যে ইতিপূর্বে তারা কত নি‘আমতের মধ্যে ছিল! তারা যেনো সৎ ‘আমলের মাধ্যমে স্থায়ী নিরাপত্তা, সুস্থতা ও সুখ লাভ করতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নীতি সম্পর্কে বলেন : “আশা করা যায় যে, তোমাদের রব তোমাদের উপর দয়া করবেন, কিন্তু তোমরা যদি তোমাদের আগের আচরণের পুনরাবৃত্তি করো তবে আমরাও পুনরাবৃত্তি করব।”[২০]
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের উপর দুর্যোগ ও বালা-মুসিবতকে স্থায়ী করেন না; বরং তিনি যখন চান তা উঠিয়ে নেন। অতএব আপনারা আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক বিপদমুক্তির আশায় থাকুন, মুসিবতে বেশি বেশি দু‘আ ও তাওবাহ্ করুন। মহান আল্লাহর মানুষকে শাস্তি দেয়ার কোনই প্রয়োজন নেই। কিন্তু তিনি চান যেনো তারা ভাল ‘আমল করে এবং অন্যায় পরিহার করে। তিনিই তো বলেছেন : “আর আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয়ই আমি অতি নিকটে। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই। কাজেই তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।”[২১] তিনি আরো বলেন : “নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত মুহসীনদের অতি নিকটে।”[২২]
بارك الله لي ولكم في القرآن العظيم.
অতঃপর, আপনারা যথাযথভাবে মহান আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন করুন এবং ইসলামের রুজ্জুকে সুদৃঢ়ভাবে ধারণ করুন।
আল্লাহর বান্দাগণ! জেনে রাখুন যে, বান্দার স্বচ্ছলতা ও সৌভাগ্য রয়েছে পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে তার রবের দ্বারস্ত হওয়ার মাঝে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “হে মানবসকল! তোমরা আল্লাহর কাছে মুখাপেক্ষী। আর আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসনীয়।” আর বান্দার লাঞ্চনা, বঞ্চনা ও ধ্বংস রয়েছে তার এই ধারণার মধ্যে যে, সে তার রবের মুখাপেক্ষী নয়, নিজেকে নিয়ে ও আল্লাহ তা‘আলা তাকে যা দিয়েছেন তা নিয়ে সে প্রতারণায় পড়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “আর কেউ কার্পণ্য করলে ও নিজেকে অমুখাপেক্ষী মনে করলে,* আর যা উত্তম তাতে মিথ্যারোপ করলে,* তার জন্য আমরা কঠোর পথ সুগম করে দিব।* আর তার সম্পদ তার কোনো কাজে আসবে না, যখন সে ধ্বংস হবে।”[২৩] ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লা-হু ‘আন্হু) হতে বর্ণিত। রাসূল (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন : “এমন দু’টি নি‘আমত আছে যে ব্যাপারে অধিকাংশ মানুষ ধোঁকায় নিপতিত : সুস্থতা ও অবসর সময়।”[২৪]
আল্লাহর বান্দাগণ! আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “নিশ্চয়ই আল্লাহ নাবীর প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফেরেশ্তাগণ নাবীর জন্য দু‘আ-ইস্তিগফার করেন। হে ঈমানদারগণ! তোমরাও নাবীর উপর সালাত পাঠ করো এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।”
[১] সূরা আল ফা-ত্বির : ২।
[২] সূরা লোকমান : ২০।
[৩] সূরা আল নাহ্ল : ৫৩।
[৪] সূরা আন্ নাহ্ল : ১৮।
[৫] সূরা ইব্রা-হীম : ৭।
[৬] সূরা আন্ নাহ্ল : ১১৪।
[৭] সূরা আস্ সাবা : ১৩।
[৮] সুনান আত্ তিরমিযী ও মুস্তাদরাক হাকিম। ইমাম আত্ তিরমিযী ও হাকিম হাদীসটিকে সহীহ আখ্যায়িত করেছেন।
[৯] মুসনাদে আহমাদ।
[১০] সহীহ মুসলিম ও সুনান আত্ তিরমিযী।
[১১] সূরা আল আম্বিয়া- : ৩৫।
[১২] সূরা আর রা‘দ : ২।
[১৩] সূরা ইউনুস : ৩।
[১৪] সূরা আর্ রহমান : ২৯।
[১৫] মুসনাদে বায্যার।
[১৬] সূরা ফা-ত্বির : ১৩।
[১৭] সুনান আত্ তিরমিযী ও মুস্তাদরাক হাকিম। ইমাম আত্ তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন এবং ইমাম হাকিম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
[১৮] আবূ দাঊদ, মুসনাদে আহমাদ ও মুসনাদে আবূ ইয়া’লা।
[১৯] আত্ তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্। তিরমিযী হাসান সহীহ।
[২০] সূরা বানী ইসরা-ঈল: ৮।
[২১] সূরা আল বাক্বারাহ্ : ১৮৬।
[২২] সূরা আল আ‘রাফ : ৫৬।
[২৩] সূরা আল লাইল : ৮-১১।
[২৪] সহীহুল বুখারী।
আপনার মন্তব্য