আলোকিত জীবন
ইমাম শাফে‘য়ী (রাহিমাহুল্লা-হ)
প্রফেসর এ. কে. এম শামসুল আলম
নাম মুহাম্মদ বিন ইদরীস আশ্ শাফে‘য়ী। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর বংশধর, দাদা ‘আব্দুল মান্নাফ পর্যন্ত গিয়ে মিলিত হয়, সুতরাং তিনি বানী ‘আব্দুল মুত্তালিব আল হাশেমী। কুনিয়াৎ আবূ ‘আব্দুল্লাহ, গাযযায় তিনি ১৫০ হিঃ সনে জন্মগ্রহণ করেন, তাঁর মা সালেহা তাকে নিয়ে মক্কায় যান, তখন তাঁর বয়স দু’বছর, সেখানেই তিনি বড় হন। অত্যন্ত মেধাবী ও প্রতিভাবান ছিলেন, কিন্তু শৈশব থেকেই পিতৃহীন ইয়াতীম ছিলেন, এছাড়া পরিবারটি ছিল নিঃস্ব। অভাব অনাঁনের সংসারে মা শিশু মুহাম্মদ এর পড়ালেখার খরচ বহনে সক্ষম ছিলেন না, ধনীদের ছেলের সাথে প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ করতে গিয়ে শিশু মুহাম্মদ দেখে যে শিক্ষক মহোদয় ধনীদের ছেলেদের প্রতি বেশি মনোযোগী, মায়ের কাছে সেই অভিযোগ করলে মা বলেছিলেন, আমরা গরীব, ধনীদের ছেলেদের সাথে এমনভাবে বসবে যেনো তাদের কোনো অসুবিধা না হয়, তারা যেনো তোমার শিশুসুলভ আচরণে বিরক্তবোধ না করে বিষয়টি মাথায় রেখে একটু দূরত্ব বজায় রেখে মনোযোগী হয়ে সবক গ্রহণ করবে। সুবহানাল্লাহ! অভাবী মায়ের কী চমৎকার উপদেশ ছিল। ইমাম শাফে‘য়ী বলেন, আমি মায়ের উপদেশ মত পড়ায় এত মনোযোগী ছিলাম, যেদিন ক্লাসে শিক্ষক অনুপস্থিত থাকতেন, আমিই শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতাম। শিক্ষক এতে বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং এরপর আমার প্রতি আর কোনো দিন অবহেলা বা উপেক্ষার ভাব দেখাননি; বরং আমার প্রতি বেশি মনোযোগী হয়েছিলেন। আমিও ‘ইল্মের প্রতি বিনয় এবং শিক্ষকের সাথে আদব দেখাতে অভ্যস্ত হয়েছিলাম। শিশু মুহাম্মদ শাফে‘য়ী অভাবের তাড়নায় লেখার জন্য ক্লাসে কাগজ খাতা নিয়ে যেতে পারত না। এ বিষয়ে মায়ের কাছে অভিযোগ করলে, মা পুরাতন কাগজ খাতার দোকান থেকে অব্যহৃত কাগজের খাতা বানিয়ে দিয়েছিলেন, এছাড়া উট ও ছাগলের হাড় সংগ্রহ করে দিয়েছিলেন, তা লেখার উপকরণ হিসেবে তিনি ব্যবহার করতেন। কুরআন-হাদীস লেখা হাড়গুলো মাটির কলসিতে হিফাজত করা হত।
গুণবতী মা তাঁর সন্তানকে কুরআনের হাফেয হওয়ার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছিলেন, মেধাবী সন্তান অতি অল্প সময়ে মাত্র সাত বছর বয়সে কুরআনের হাফেযও হয়েছিলেন। ছেলের সুশিক্ষার জন্য মা নিজের বাসাটি পর্যন্ত বন্ধক রেখে ছেলেকে একজন যুগশ্রেষ্ঠ ‘আলেম তৈরির লক্ষ্যে তৎকালীন বিভিন্ন দেশের বড় বড় মাদরাসায় পড়িয়েছিলেন, মাত্র ১৫ বছর বয়সেই তিনি হাদীসের হাফেয হওয়ার গৌরব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং নামকরা একজন মুফতি হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।
কুরাইশ বংশের আরব ইমাম শাফে‘য়ী প্রথম জীবনে কবিতা লিখতে আগ্রহী ছিলেন, তাঁর কবিতা কুরআন হাদীসের আলোকে উদ্ভাসিত ছিল, তাই সেই কবিতা পাঠকের অনুভূতিতে শিহরণ জাগাতে সক্ষম হয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি ‘ইল্মে ফিকহ এবং শরঈ বিষয়ে মনোযোগী হয়েছিলেন, তাই তিনি যুগশ্রেষ্ঠ ফকীহ ও ইমাম হিসেবে ও নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তিনি তৎকালীন মাশহুর ‘আলেমদের মাজলিসে নিয়মিত যেতেন, মক্কা মুকার্রামার তৎকালীন প্রধান মুফতির নিকট থেকে তিনি ইফতা এর সবক নেন, অতঃপর মদীনায় গিয়ে ইমাম মালেক (রহিমাহুল্লা-হ)-এর নিকট থেকে মু‘আত্তা পড়েন। ইমাম মালেক ইমাম শাফে‘য়ীর শিষ্টাচার ও বংশ মর্যাদায় এমনিতেই মুগ্ধ ছিলেন, তদুপরি যখন জানলেন যে, তিনি শুধু শুধু মু‘আত্তা পড়ছেন না; বরং পুরো কিতাবের সবগুলো হাদীস তিনি মুখস্থ করে ফেলেছেন। সুবহানাল্লাহ! ইমাম মালেক বিস্ময় প্রকাশ করেন যে, তিনিও মু‘আত্তায় বর্ণিত সব হাদীস মুখস্থ রাখতে পারেননি।
উল্লেখ্য যে, ইমাম শাফে‘য়ী একজন দক্ষ তীরন্দাজ ছিলেন, বহুভাবে তাঁকে পরীক্ষা করা হয়েছে তিনি তীর নিক্ষেপের প্রতি দশটির নয়টিতেই সফল হয়েছেন।
কর্ম জীবনে ইমাম শাফে‘য়ী প্রথমে ইয়ামান যান, সেখানে তিনি বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, অতঃপর ইরাক গিয়ে হাদীস এবং সুন্নাহ প্রচারে মনোনিবেশ করেন, বাগদাদ নগরীর ‘আলেম সমাজ তাঁর পাণ্ডিত্বর স্বীকৃতি দেন এবং অগণিত তালেবে ‘ইল্ম তাঁর দরস থেকে মণিমুক্তা সংগ্রহ করেন।
ইমাম শাফে‘য়ী জীবনের ৫০ পরবর্তী সময়ে মিসর যান, বাগদাদের ভক্তদের কাঁদিয়ে মিসরেই তিনি জীবনের শেষ অধ্যায় অতিবাহিত করেন।
ইমাম শাফে‘য়ী অত্যন্ত যাহিদ বা দুনিয়া বিমুখ ব্যক্তি ছিলেন, তাঁর তিলাওয়াত শুনে মানুষ চোখের পানি আঁকিয়ে রাখতে পারত না, তিনি অত্যান্ত দাতা ছিলেন।
সুন্নাহ প্রচারে তিনি অকুতোভয় ছিলেন, বিদ‘আত নির্মূলেও তিনি সক্রিয় এবং আপোষহীন ছিলেন। তিনি তাঁর উসূলে ফিকহ গ্রন্থে ‘আররিসালাহ’ অধ্যায় রচনা করে সর্বপ্রথম ইত্তেবায়ে সুন্নাহ এবং কাম‘উল বিদ‘আ বিষয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করেন। কিতাবুল উম্মসহ তাঁর অনেক রচনাবলী রয়েছে।
ইমাম সাহেবের অসংখ্য নসীহা বাণী রয়েছে। কয়েকটি তুলে ধরা হলো-
জ্ঞান অন্বেষণ নফল ‘ইবাদতের চেয়েও উত্তম। সহীহ হাদীসই আমার মত ও পথ (মাযহাব)।
ইমাম শাফে‘য়ী (রহিমাহুল্লা-হ) রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হাদীস বিশারদ ছিলেন, তথাপি তাঁর রচিত কবিতার দিওয়ান সর্বযুগের সেরা সাহিত্য।
ইমাম শাফে‘য়ী পৃথিবীর জন্য ছিলেন একটি সূর্যসদৃশ আর জগতবাসীর জন্য ছিলেন রোগ নিরাময়ক ঔষুধস্বরূপ। মাত্র ৫৪ বছর বয়সে ২০৪ হিজরীতে তিনি মিসরে ইন্তিকাল করেন। রজব মাসের জুমু‘আর রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং শুক্রবার ‘আসর সালাত শেষে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।
সন্তানদের জন্য মায়ের কী ভূমিকা হওয়া উচিৎ ইমাম শাফে‘য়ীর জীবনে মায়ের ভূমিকা একটি আদর্শ নমূনা। আদর্শ মা উত্তম জাতি গঠনে সহায়ক। মহিয়সি মায়েদের সন্তানেরা ও মহান ব্যাক্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকেন। একজন ফেসবুক পাঠকের অনুরোধে লায়লাতুল ক্বদরে আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস আল্লাহ তা‘আলা কবুল করুন -আমীন। ###
গুণবতী মা তাঁর সন্তানকে কুরআনের হাফেয হওয়ার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছিলেন, মেধাবী সন্তান অতি অল্প সময়ে মাত্র সাত বছর বয়সে কুরআনের হাফেযও হয়েছিলেন। ছেলের সুশিক্ষার জন্য মা নিজের বাসাটি পর্যন্ত বন্ধক রেখে ছেলেকে একজন যুগশ্রেষ্ঠ ‘আলেম তৈরির লক্ষ্যে তৎকালীন বিভিন্ন দেশের বড় বড় মাদরাসায় পড়িয়েছিলেন, মাত্র ১৫ বছর বয়সেই তিনি হাদীসের হাফেয হওয়ার গৌরব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং নামকরা একজন মুফতি হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।
কুরাইশ বংশের আরব ইমাম শাফে‘য়ী প্রথম জীবনে কবিতা লিখতে আগ্রহী ছিলেন, তাঁর কবিতা কুরআন হাদীসের আলোকে উদ্ভাসিত ছিল, তাই সেই কবিতা পাঠকের অনুভূতিতে শিহরণ জাগাতে সক্ষম হয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি ‘ইল্মে ফিকহ এবং শরঈ বিষয়ে মনোযোগী হয়েছিলেন, তাই তিনি যুগশ্রেষ্ঠ ফকীহ ও ইমাম হিসেবে ও নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তিনি তৎকালীন মাশহুর ‘আলেমদের মাজলিসে নিয়মিত যেতেন, মক্কা মুকার্রামার তৎকালীন প্রধান মুফতির নিকট থেকে তিনি ইফতা এর সবক নেন, অতঃপর মদীনায় গিয়ে ইমাম মালেক (রহিমাহুল্লা-হ)-এর নিকট থেকে মু‘আত্তা পড়েন। ইমাম মালেক ইমাম শাফে‘য়ীর শিষ্টাচার ও বংশ মর্যাদায় এমনিতেই মুগ্ধ ছিলেন, তদুপরি যখন জানলেন যে, তিনি শুধু শুধু মু‘আত্তা পড়ছেন না; বরং পুরো কিতাবের সবগুলো হাদীস তিনি মুখস্থ করে ফেলেছেন। সুবহানাল্লাহ! ইমাম মালেক বিস্ময় প্রকাশ করেন যে, তিনিও মু‘আত্তায় বর্ণিত সব হাদীস মুখস্থ রাখতে পারেননি।
উল্লেখ্য যে, ইমাম শাফে‘য়ী একজন দক্ষ তীরন্দাজ ছিলেন, বহুভাবে তাঁকে পরীক্ষা করা হয়েছে তিনি তীর নিক্ষেপের প্রতি দশটির নয়টিতেই সফল হয়েছেন।
কর্ম জীবনে ইমাম শাফে‘য়ী প্রথমে ইয়ামান যান, সেখানে তিনি বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, অতঃপর ইরাক গিয়ে হাদীস এবং সুন্নাহ প্রচারে মনোনিবেশ করেন, বাগদাদ নগরীর ‘আলেম সমাজ তাঁর পাণ্ডিত্বর স্বীকৃতি দেন এবং অগণিত তালেবে ‘ইল্ম তাঁর দরস থেকে মণিমুক্তা সংগ্রহ করেন।
ইমাম শাফে‘য়ী জীবনের ৫০ পরবর্তী সময়ে মিসর যান, বাগদাদের ভক্তদের কাঁদিয়ে মিসরেই তিনি জীবনের শেষ অধ্যায় অতিবাহিত করেন।
ইমাম শাফে‘য়ী অত্যন্ত যাহিদ বা দুনিয়া বিমুখ ব্যক্তি ছিলেন, তাঁর তিলাওয়াত শুনে মানুষ চোখের পানি আঁকিয়ে রাখতে পারত না, তিনি অত্যান্ত দাতা ছিলেন।
সুন্নাহ প্রচারে তিনি অকুতোভয় ছিলেন, বিদ‘আত নির্মূলেও তিনি সক্রিয় এবং আপোষহীন ছিলেন। তিনি তাঁর উসূলে ফিকহ গ্রন্থে ‘আররিসালাহ’ অধ্যায় রচনা করে সর্বপ্রথম ইত্তেবায়ে সুন্নাহ এবং কাম‘উল বিদ‘আ বিষয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করেন। কিতাবুল উম্মসহ তাঁর অনেক রচনাবলী রয়েছে।
ইমাম সাহেবের অসংখ্য নসীহা বাণী রয়েছে। কয়েকটি তুলে ধরা হলো-
জ্ঞান অন্বেষণ নফল ‘ইবাদতের চেয়েও উত্তম। সহীহ হাদীসই আমার মত ও পথ (মাযহাব)।
ইমাম শাফে‘য়ী (রহিমাহুল্লা-হ) রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর হাদীস বিশারদ ছিলেন, তথাপি তাঁর রচিত কবিতার দিওয়ান সর্বযুগের সেরা সাহিত্য।
ইমাম শাফে‘য়ী পৃথিবীর জন্য ছিলেন একটি সূর্যসদৃশ আর জগতবাসীর জন্য ছিলেন রোগ নিরাময়ক ঔষুধস্বরূপ। মাত্র ৫৪ বছর বয়সে ২০৪ হিজরীতে তিনি মিসরে ইন্তিকাল করেন। রজব মাসের জুমু‘আর রাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এবং শুক্রবার ‘আসর সালাত শেষে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।
সন্তানদের জন্য মায়ের কী ভূমিকা হওয়া উচিৎ ইমাম শাফে‘য়ীর জীবনে মায়ের ভূমিকা একটি আদর্শ নমূনা। আদর্শ মা উত্তম জাতি গঠনে সহায়ক। মহিয়সি মায়েদের সন্তানেরা ও মহান ব্যাক্তিত্বের অধিকারী হয়ে থাকেন। একজন ফেসবুক পাঠকের অনুরোধে লায়লাতুল ক্বদরে আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস আল্লাহ তা‘আলা কবুল করুন -আমীন। ###
++
ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45
সূর্যাস্ত : 5:11:51
আপনার মন্তব্য