সাময়িক প্রসঙ্গ
রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে সৃষ্টি না করলে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হত না!
আরাফাত ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছিলেন সমগ্র জগতের জন্য রহমতস্বরূপ। তিনি ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী, সর্বোত্তম আদর্শের মডেল ইত্যাদি...। স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মর্যাদা ও বড়ত্বের প্রশংসা করেছেন। অর্থাৎ- আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় রাসূল মুহাম্মদ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মর্যাদা, মহত্ব, বড়ত্ব ইত্যাদি সম্পর্কে মানবজাতিকে জানিয়ে দিয়েছেন। এছাড়াও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মর্যাদা সম্পর্কিত অনেক সহীহ হাদীস আমাদের মাঝে বিদ্যমান। কিন্তু আমাদের সমাজের অতি উৎসাহি একশ্রেণির মানুষ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করে কিছু বানোয়াট, ভিত্তিহীন, জাল হাদীস বর্ণনা করেন। আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রশংসায় জাল বা ভিত্তিহীন কিছু বর্ণনা করার অর্থ হলো,  প্রথমতঃ আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় রাসূলের মর্যাদা সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত ছিলেন না (নাঊযুবিল্লাহ)। দ্বিতীয়তঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজেই নিজেকে চিনতে পারেননি। তৃতীয়তঃ কাউকে ছোট করার উদ্দেশ্যে তার মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা করা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে এমন কতিপয় ভিত্তিহীন বর্ণনা হলো-
০১. রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর জন্য মহাবিশ্ব সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন- বলা হয় :
لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْأَفْلَاكَ.
“আপনাকে সৃষ্টি না করলে আমি মহাবিশ্ব সৃষ্টি করতাম না।”
আল্লামা সাগানী, মোল্লা ‘আলী ক্বারী, আব্দুল হাই লক্ষৌভী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস একবাক্যে কথাটিকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ এ শব্দে এ বাক্যে কোনো হাদীসের গ্রন্থে কোনো প্রকার সনদ বর্ণিত হয়নি।[১]
০২. আদম (‘আলাইহিস্ সালাম) যখন পানি ও মাটির মধ্যে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তখনও নাবী ছিলেন। যেমন- বলা হয় :
كُنْتُ نَبِيًّا وآدمُ بَيْنَ الْمَاءِ والطِّيْنِ.
“আদম যখন পানি ও মাটির মধ্যে ছিলেন তখন আমি নাবী ছিলাম।”[২] আরো বলা হয় :
كُنْتُ نَبِيًّا وَآدمُ بَيْنَ الْمَاءِ والطِّيْن، وكنت نبيا وَلَا مَاءَ ولَا طِيْنٌ.
“আদম যখন পানি ও মাটির মধ্যে ছিলেন তখন আমি নাবী ছিলাম এবং যখন পানি ছিল না এবং মাটিও ছিল না তখন আমি নাবী ছিলাম।”
সাখাবী, সুয়ূতী, ইবনু আর্রাক, মোল্লা ‘আলী ক্বারী, আজলূনী ও অন্যান্য মুহাদ্দিস একবাক্যে বলেছেন যে, এ কথাগুলো ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।[৩]
তবে এ সম্পর্কিত সহীহ বর্ণনা হলো, “আমি তখন থেকেই নাবী যখন আদম (‘আলাইহিস্ সালাম) রূহ্ এবং শরীরের মাঝে ছিলেন।”[৪] এ বর্ণনার উদ্দেশ্য হলো তাক্বদীর, যা পৃথিবী সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে নির্ধারিত হয়েছে।[৫]
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে এমন অনেক মিথ্যা, বানোয়াট ও জাল-য‘ঈফ বর্ণনা বিদ্যামান। বাহ্যিকভাবে এটা মনে হতে পারে যে, এ সকল বর্ণনা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মর্যাদা বৃদ্ধি করবে; কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা হলো, মহানাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর শানে এ জাতীয় কল্পনাপ্রসূত বর্ণনায় তাঁর সম্মানকে ক্ষুণ্ন করা হয়। সুতরাং নাবী (সাল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে কোন কিছু বর্ণনার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। [গ্রন্থনা : এম. জি. রহমান]

[১]   আল্লামা সাগানী, আল-মাউদূ‘আত- পৃঃ ৫২; মোল্লা ক্বারী, আল-আসরার- পৃঃ ১৯৪; আল-মাসনূ- ১১৬; আল-আজলূনী, কাশফুল খাফা ২/২১৪; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদ ২/৪৪১; আব্দুল হাই লাক্ষেèৗভী, আল-আসারুল মারফূয়া, পৃঃ ৪৪।
[২] সূত্র : হাদীসের নামে জালিয়াতি।
[৩]   সাখাবী, আল-মাকাসিদ- পৃঃ ৩৩১; সুয়ূতী, যাইলুল লাআলী- পৃঃ ২০৩; ইবনু আর্রাক, তানযীহ- ২/৩৪১; মোল্লা ক্বারী, আল-আসরার- পৃঃ ১৭৮; আল-মাসনূ- পৃঃ ১১০; আজলূনী, কাশফুল খাফা- ২/১৬৯, ১৭৩ [হাদীসের নামে জালিয়াতি- ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহিমাহুল্লা-হ)]।
[৪] সুনান আত্ তিরমিযী- ৩৬০৯; সিলসিলা সহীহাহ্- ১৮৫৬।
[৫] সহীহ মুসলিম- হাঃ ৬৯১৯।


আপনার মন্তব্য1

ঢাকায় সূর্যোদয় : 6:17:45 সূর্যাস্ত : 5:11:51

সাপ্তাহিক আরাফাতকে অনুসরণ করুন

@সাপ্তাহিক আরাফাত